নিজস্ব প্রতিবেদক ,ঢাকা:
পোশাকশ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি সাড়ে ১২ হাজার টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী মন্নুজান সুফিয়ান। মঙ্গলবার (৭ নভেম্বর) বিকেলে সচিবালয়ে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে তিনি এ কথা জানান।এর আগে পোশাকশ্রমিকদের মজুরি নিয়ে গঠিত বোর্ডের ষষ্ঠ সভায় এই মজুরি নির্ধারণ করা হয়। এসময় উপস্থিত ছিলেন সাবেক নৌপরিবহন মন্ত্রী, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন ও শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি শাজাহান খান। এর আগে বেলা সাড়ে ১২টায় রাজধানীর সেগুনবাগিচায় মজুরি বোর্ডের সভাকক্ষে এ সংক্রান্ত আলোচনা শুরু হয়। এতে উপস্থিত ছিলেন বিকেএমইএর সভাপতি সেলিম ওসমান ও বিজিএমইএর সভাপতি ফারুক হাসান। শ্রমিকদের পক্ষ থেকে প্রতিনিধি ছিলেন সিরাজুল ইসলাম রনি। অন্যদিকে মালিকদের পক্ষ থেকে প্রতিনিধি ছিলেন সিদ্দিকুর রহমান।
সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন নিম্নতম মজুরি বোর্ডের সচিব রাইসা আফরোজ, নিরপেক্ষ সদস্য অধ্যাপক ড. মো. কামাল উদ্দীন এবং শ্রমিকদের প্রতিনিধিত্বকারী সদস্য ও জাতীয় শ্রমিক লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সুলতান আহম্মদ৷ সভায় শ্রমিক প্রতিনিধি সিরাজুল ইসলাম রনি শ্রমিকদের নিম্নতম মজুরি ২০ হাজার ৩৯৩ টাকার প্রস্তাব করেন। অপরদিকে মজুরি বোর্ডে পোশাক কারখানার মালিকদের প্রতিনিধি সিদ্দিকুর রহমান ন্যূনতম মজুরি ১০ হাজার ৪০০ টাকা নির্ধারণের প্রস্তাব করেন। উভয়পক্ষ প্রস্তাবনায় তাদের যৌক্তিকতা তুলে ধরে।
শ্রম প্রতিমন্ত্রী বলেন, মজুরি বোর্ডের সুপারিশ অনুয়ায়ী মালিক ও শ্রমিকপক্ষ মিলে আলাপ-আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আজকের যে ঘোষণা সেটা প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশেই করা হচ্ছে। ৫৬ দশমিক ২৫ শতাংশ বৃদ্ধি করা হয়েছে। ন্যূনতম মজুরি আট হাজার থেকে সাড়ে ১২ হাজার টাকা করা হয়েছে।১৯৮৪ সালে পোশাকশ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি ৫৭০ টাকা নির্ধারণ করা হয়। এরপর ১৯৯৪ সালে মজুরি ৫৭০ থেকে বাড়িয়ে ৯৩০ টাকা করা হয়। ২০০৬ সালে ন্যূনতম মজুরি এক হাজার ৬৬২ টাকা করা হয়। তারপর ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার ক্ষমতায় এসে ২০১০ সালে নূন্যতম মজুরি তিন হাজার টাকা করে দেয়। ২০১৩ সালে করে পাঁচ হাজার ৩০০ টাকা। সবশেষ ২০১৮ সালে তা আট হাজার টাকা করে দেওয়া হয়।
এদিকে সম্প্রতি ন্যূনতম মজুরি ১০ হাজার ৪০০ টাকা নির্ধারণ করার খবর ছড়িয়ে পড়লে গত ২৩ অক্টোবর থেকে গাজীপুরে আন্দোলন শুরু করেন পোশাকশ্রমিকরা। পরে তা আশুলিয়া, সাভার ও ঢাকার মিরপুরে ছড়িয়ে পড়ে। অনেক জায়গায় শ্রমিকরা ভাঙচুর শুরু করলে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ বাঁধে। পরিস্থিতি সামাল দিতে পর্যায়ক্রমে পাঁচ শতাধিক কারখানা বন্ধ করে দেওয়া হয়।শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি ২৫ হাজার টাকা করার দাবিতে আন্দোলন করছে গার্মেন্টস শ্রমিক আন্দোলন, বাংলাদেশ গার্মেন্টস ও সোয়েটার্স শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্র, গার্মেন্টস শ্রমিক ও শিল্পরক্ষা জাতীয় মঞ্চ, গার্মেন্টস ওয়াকার্স অ্যালায়েন্স, বাংলাদেশ গার্মেন্টস অ্যান্ড শিল্প শ্রমিক ফেডারেশন, গার্মেন্টস শ্রমিক ঐক্য মঞ্চ, জাতীয় গার্মেন্টস শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশন, গার্মেন্টস শ্রমিক ফ্রন্টসহ বেশ কয়েকটি সংগঠন৷তৈরি পোশাক খাতের শ্রমিকদের জন্য বাস্তবসম্মত নিম্নতম মজুরি কাঠামো প্রস্তাবনার জন্য শ্রমিকরা কিছু দাবি জানিয়ে আসছেন।
দাবিগুলো হলো-
১. গার্মেন্টস শ্রমিকদের মাসিক মূল মজুরি সর্বমোট মাসিক মজুরির ন্যূনতম ৬১ শতাংশ করা।
২. গার্মেন্টস শ্রমিকদের পদ ও শ্রেণিবিন্যাসে গ্রেডিং সংক্রান্ত জটিলতা দূর করতে পূর্বের ৭টি গ্রেডের পরিবর্তে ৫টি গ্রেডে ভাগ করা।
৩. মূল মজুরির ওপর ১০ শতাংশ হারে বাৎসরিক ইনক্রিমেন্ট দিতে হবে।
৪. পরপর দুটি গ্রেডের মধ্যে ন্যূনতম মজুরির পার্থক্য ১০ শতাংশ করতে হবে।
৫. নতুন শ্রমিকদের জন্য তিন মাস শিক্ষানবিশকাল হিসেবে বিবেচিত হবে।
৬. সোয়েটার কারখানা বা পিস রেটে কর্মরত শ্রমিকদের প্রোডাকশন না থাকলে বিগত তিন মাসের মজুরির গড়/৩নং গ্রেডের বেসিক মজুরি পরিশোধ, কাজের আগে রেটের ফয়সালা করা।
৭. যে কোনো সম্প্রদায়ের শ্রমিক ও কর্মচারীরা স্ব স্ব সম্প্রদায়ের প্রধান দুটি উৎসবে প্রতিটিতে ৬ মাসের অধিক চাকরির ক্ষেত্রে এক মাসের মূল মজুরি হারে দুটি উৎসব ভাতা ও ছয় মাসের অনধিক চাকরির ক্ষেত্রে প্রতিটিতে ১৫ দিনের মজুরি হারে দুটি উৎসব ভাতা প্রাপ্ত হবেন। শ্রমিকের উৎসব ভাতা এক মাসের মূল মজুরির কম হবে না।
৮. স্বীয় পদে/গ্রেডে চাকরির সর্বোচ্চ দুই বছরের মধ্যে উচ্চতর গ্রেডে পদোন্নতি নিশ্চিত করতে হবে।
৯. পোশাক কারখানায় গ্র্যাচুইটি সিস্টেম প্রচলন করতে হবে। তবে অন্তর্বর্তীকাল হিসেবে ১০ বছরের অধিক সময় কর্মরত শ্রমিকদের জন্য সমান হারে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। চাকরি অবসরের পর নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে গার্মেন্টস শ্রমিকদের জন্য প্রাপ্ত গ্র্যাচুইটি দিতে হবে।
১০. মাতৃত্বকালীন ছুটি সবেতনে ছয় মাস দিতে হবে।
১১. শ্রমিকদের পরিবারের সন্তানদের জন্য শিক্ষা ভাতা দিতে হবে।
১২. নতুন মজুরি নির্ধারণের পর যাতে স্থানীয় পর্যায়ে বাড়িভাড়া না বাড়ে, তা তদারকি করতে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, জনপ্রশাসন এবং মালিকপক্ষের প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে কমিটি করে পর্যবেক্ষণের উদ্যোগ নিতে হবে।
১৩. গার্মেন্টস শ্রমিকদের রেশনিং ব্যবস্থা চালু করতে হবে (সরকারের ভর্তুকিমূলক পণ্য বিক্রি কার্যক্রমে তৈরি পোশাক শ্রমিকদের অন্তর্ভুক্ত করা)।
সিএনএন বাংলা২৪