ই-পেপার | বৃহস্পতিবার , ২৮শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

কমলগঞ্জ ও রাজনগর কৃষকের গলার কাটা হয়ে দাঁড়িয়েছে লাঘাটা নদী

সালেহ আহমদ স’লিপক, সিলেট :

 

কৃষকের গলার কাটা হয়ে দাঁড়িয়েছে লাঘাটা নদী। প্রবাহমান ছড়ার জমাটবদ্ধ জলধারা হাওরে রূপ নেওয়া মৌলভীবাজারের ব্যতিক্রমধর্মী লাঘাটা নদীটি স্থানীয় কৃষকদের সেচের অন্যতম উৎস। তবে নদীর গভীরতা ও প্রস্থ কম হওয়ায় পানির মজুতও কম। ফলে সেচকাজ ব্যাহত হচ্ছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় কৃষকরা। কৃষকদের দাবী, নদীর পানি সংরক্ষণে স্লোইসগেট করা আছে। সে ক্ষেত্রে প্রকল্পের মাধ্যমে নদীটি খনন ও গভীরতা বাড়িয়ে পানির মজুত বৃদ্ধি করা গেলে স্থানীয় কৃষিতে ব্যাপক উন্নতি হতো। পাহাড়ি ঝর্ণা বা গিরিখাত থেকে নেমে আসা নদীর মতো গতানুগতিক নয় মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ ও রাজনগর দুই উপজেলা দিয়ে প্রবাহিত লাঘাটা নদী। কমলগঞ্জ উপজেলার আলীনগর ইউনিয়নের রামেশ্বরপুর হালদার হাওরে আসা পাহাড়ি ছড়া, যোগছড়া ও চ্যালেম্বা নামক ছড়ার মিলিত প্রবাহরূপ নিয়েছে লাঘাটা নদীতে।

 

 

প্রায় সাড়ে ২৪ কিলোমিটার পাড়ি দিয়ে এই নদী রাজনগরের কামারচাক ইউনিয়নের খাসপ্রেমনগর গ্রামের কাছে মনু নদে মিলিত হয়েছে। হাওর থেকে উৎপত্তি হওয়া এই নদী অগভীর হওয়ায় শুষ্ক মৌসুমে সেচের জন্য পর্যাপ্ত পানি পাচ্ছেন না স্থানীয় কৃষকরা। এতে বিঘ্নিত হচ্ছে কৃষি উৎপাদন। পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্য মতে, নদীটির গড় প্রস্থ ৩০ মিটার হলেও উৎপত্তিস্থল থেকে কিছু স্থানে ১০-১২ ফুটের মতো প্রস্থ। তবে মূল জলাধার মাত্র ৩-৪ ফুট। নদীটি কমলগঞ্জের রামেশ্বরপুর, চিতলী, তিলকপুর, জালালপুর সহ অন্যান্য গ্রামের মানুষের কৃষিজমি হালদার হাওরাঞ্চলে।চিতলী গ্রামের আব্দুর রহমান ও ফয়জুল খাঁ জানান, যোগীছড়ার মুখ থেকে লাঘাটা পশ্চিম দিকে প্রবাহিত হয়েছে। রাজকান্দি রেঞ্জের কামারছড়া বিটের বট, চন্দন, চৌরাশি টিলা থেকে আসা ডালুয়া, লাউয়াই ছড়া ও আরেক দিক থেকে বয়ে আসা যোগী ও কলকলি নদীর প্রবাহ হালদার হাওরের লাঘাটা নদীতে পড়েছে। পানির প্রবাহ থাকলেও গভীরতা কম হওয়ায় পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি ধারণ করে রাখতে পারে না লাঘাটা।

 

 

রামেশ্বরপুরের ছিদ্দেক মিয়া জানান, নদীটি সরু খালের মতো ছিল। ৩০-৩৫ বছর আগে এক দফা খনন কাজের মাধ্যমে প্রস্থ বাড়ানো হয় নদীটির। শীতের সময় ব্যবহারের জন্য পানি আটকে রেখে ফসল চাষের জন্য স্থাপন করা হয় স্লোইসগেট। তবে সেই পানি বর্তমানের চাহিদার তুলনায় পর্যাপ্ত নয়। কৃষিজীবী আব্দুর রহিম জানান, বর্ষার সময় চিতলী ও রামেশ্বরপুর এলাকার লাঘাটা নদীর অংশে সামান্য পানি থাকলেও শুষ্ক মৌসুমে তা তলানিতে গিয়ে ঠেকে। এতে শীতের জন্য পানি মজুত করার সুযোগ থাকে না। সেটা করতে গেলে একেবারে শুকিয়ে যায় নদীর পানি।

 

 

গবেষক ও লেখক ‌আহমদ সিরাজ বলেন, উজান অংশে সংস্কারের অভাবে ছোট খালে পরিণত হয়েছে লাঘাটা নদী। পানি উন্নয়ন বোর্ডের তত্ত্বাবধানে শমশেরনগর মফিজ শাহের মাজার থেকে গোপীনগর পর্যন্ত প্রায় আট কিলোমিটার খনন করা হয়েছে। একইভাবে উজানের অংশ খনন প্রকল্পের আওতায় নেওয়া হলে নদীতে পানির মজুত বাড়ার পাশাপাশি পরিবেশ দূষণও হ্রাস পাবে। পানি ধারণের ক্ষমতা বৃদ্ধি পেলে শুষ্ক মৌসুমে স্লোইসগেটের মাধ্যমে পানি আটকে বোরো ফসল এবং সবজি আবাদে অনেক সুবিধা পাবেন স্থানীয় কৃষকরা।

 

 

পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী জাবেদ ইকবাল বলেন, লাঘাটা নদীর রাজনগরের চার কিলোমিটার ও কমলগঞ্জের ভাটি অংশের প্রায় আট কিলোমিটার খনন করা হয়েছে। নদীর অপর অংশে সাড়ে ১২ কিলোমিটার খননের জন্য অভ্যন্তরীণ ছোট নদী, খাল ও জলাশয় পুনর্খনন প্রকল্পের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। তা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।

সিএনএনবাংলা২৪