বিশেষ প্রতিনিধি, ঢাকা
ঢাকার সাভারে গোলাম কিবরিয়া সোহেল (৪৩) নামের এক শিক্ষককে হত্যা করা হয়েছে। পরে মরদেহের পাশে থাকা একটি চিরকুট উদ্ধার করা হয়েছে। চিরকুটে লেখা রয়েছে- ‘পুলিশ ভাই, এই ব্যক্তি সমকামিতা করে। আমরা তাই মেরে ফেলেছি। ভাই, ও অবৈধ কাজ করে…। আমরা ইসলামের সৈনিক।’
সাভার পৌর এলাকার ভাটপাড়া কবরস্থান রোড এলাকায় নিজ বাড়ি থেকে হাত-পা বাঁধা ও গলায় গামছা পেঁচানো অবস্থায় গোলাম কিবরিয়ার মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। নৃশংস এই হত্যার ঘটনায় সাভার মডেল থানায় নিহতের ভাই বাদী হয়ে মামলা করেছেন।
অভিযান চালিয়ে ঘটনার সাথে জড়িত সন্দেহে ৩ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তবে গ্রেফতারদের পরিচয় এখনও প্রকাশ করা হয়নি।
নিহত গোলাম কিবরিয়া সোহেল পৌরসভার ১নং ওয়ার্ডের ভাটপাড়া এলাকার মরহুম শুকুর মুন্সির ছেলে। তিনি রেডিও কলোনি মডেল স্কুলের ব্যবসায় শিক্ষা শাখার শিক্ষক ছিলেন। পরবর্তী সময়ে চাকরি ছেড়ে টিউশনি ও জমির ব্যবসা করতেন তিনি।
স্থানীয়রা জানান, স্ত্রী লক্ষ্মীর সাথে ডিভোর্সের পর ভাইদের সাথে এক বাড়িতেই থাকতেন গোলাম কিবরিয়া সোহেল। প্রতিদিনই একটু দেরি করে ঘুম থেকে উঠতেন তিনি। গত রবিবার দুপুরে তার ঘরের দরজা বন্ধ পাওয়া যায়। এসময় তার ঘরের পেছনের দরজা খোলা ছিলো। ভেতরে ঢুকে খাটের উপর লুঙ্গি দিয়ে হাত-পা বাঁধা ও গলায় গামছা পেঁচানো অবস্থায় তার লাশ দেখতে পান প্রতিবেশীরা।
নিহতের ছোট ভাই আপেল মাহমুদ জানান, তার ভাই আগে শিক্ষকতা করলেও পরে টিউশনি ও জমি কেনাবেচা করতেন। পায়ে সমস্যা থাকায় বেশিক্ষণ হাঁটতে পারতেন না। তিনি সবসময় একটি নির্দিষ্ট রিকশায় যাতায়াত করতেন। প্রতিদিন তিনি দুপুর ১২টার মধ্যে ঘুম থেকে উঠতেন। কিন্তু রবিবার দুপুর হলেও ঘুম থেকে না ওঠায় প্রতিবেশীরা তার ঘরে ঢুকে তাকে মৃত অবস্থায় দেখতে পান।
নিহতের ছোট ভাই আপেল মাহমুদ আরও জানান, তার ভাইয়ের ঘরে থাকা স্টিলের আলমারির তালা ভাঙা এবং ভেতরের মালামাল তছনছ অবস্থায় দেখা যায়। জমানো অনেক টাকা ছিল তার কাছে। হত্যার পর তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোনও নিয়ে গেছে দুর্বৃত্তরা। কী কারণে কে বা কারা তার ভাইকে হত্যা করলো তা বুঝতে পারছেন না।
এ প্রসঙ্গে সাভার মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) দীপক চন্দ্র সাহা জানান, স্থানীয়দের কাছ থেকে খবর পেয়ে ঘটনাস্থল থেকে মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, তাকে শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়েছে। একটি চিরকুট পাওয়া গেছে মরদেহের পাশে। ঘটনার তদন্ত চলছে। সিআইডি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। হত্যাকান্ডে জড়িত সন্দেহে অভিযান চালিয়ে ৩ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তদন্তের স্বার্থে তাদের নাম গোপন রাখা হয়েছে। তদন্ত শেষে পরবর্তী সময়ে বিস্তারিত জানানো হবে।