ই-পেপার | রবিবার , ২৪শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

একমাসের মধ্যে কালুরঘাট নতুন সেতুর কাজ শুরুর দাবি

নিজস্ব প্রতিনিধি:

স্পষ্টভাবে বলা দরকার, কালুরঘাটে নতুন সেতু চট্টগ্রামবাসী কোন দয়া বা ভিক্ষা হিসেবে চান না। আমাদের চট্টগ্রাম থেকে দেশের রাজস্বের সিংহভাগ আসে, সুতরাং এটা আমাদের ন্যায্য পাওনা। চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীর কালুরঘাটে নতুন সেতু নির্মাণ দ্রুত শুরু করার দাবিতে সাংবাদিক সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠকালে চট্টগ্রাম নাগরিক ফোরামের চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার মনোয়ার এমনটিই বলেন।

 

এ সময় উপস্থিত ছিলেন- সংগঠনের ভাইস চেয়ারম্যান, শিল্পী শাহরিয়ার খালেদ, মহাসচিব মো. কামাল উদ্দিন, কালুরঘাট সেতু বাস্তবায়ন পরিষদের আহবায়ক আব্দুল মোমেন, চট্টগ্রাম সুহৃদের সভাপতি মির্জা ইমতিয়াজ শাওন, ফোরামের সাংগঠনিক সম্পাদক মনছুর আলম, প্রাবন্ধিক গবেষক কামরুল ইসলাম, সাবেক ছাত্রনেতা মহিবুল্লাহ খান, গোলাম রসুল মান্নান, বোয়ালখালির বিশিষ্ট সমাজ সংগঠক আকতার হোসেন ও তসলিম খাঁ।

 

কর্ণফুলীর কালুরঘাটে নতুন সেতু নির্মাণ নিয়ে আপামর চট্টগ্রামবাসী তথা দেশবাসী খুব হতাশ। বিশেষ করে বোয়ালখালি, চান্দগাঁও, মোহরা, পাঁচলাইশ, আনোয়ারা, কর্ণফুলী থানা এলাকা, পটিয়া, রাঙ্গুনিয়াসহ চট্টগ্রামের সর্বস্তরের জনগণ এই ইস্যুটি নিয়ে সংশ্লিষ্ট মহলের রহস্যজনক গড়িমসি ও দীর্ঘসূত্রিতার কারণে একধরণের মানসিক আঘাত পেয়েছেন। এখানকার প্রতিটি নাগরিক আশা করেছিলেন- নতুন সেতুটির কাজ এর মধ্যে একদিন না একদিন শুরু হবে। অনেক আশা আর স্বপ্ন ছিল এটি নিয়ে, কিন্তু এখন প্রশ্ন এই নতুন সেতু কি আদৌ তারা জীবদ্দশায় দেখে যেতে পারবেন কিনা!

 

তিনি বলেন, পুরাতন সেতু মেরামত করাটা কোন অবস্থাতেই নতুন সেতুর বিকল্প হতে পারে না। মনে হচ্ছে, সুস্পষ্ট ঘোষণা ছাড়া নতুন সেতু নির্মাণটা আরও বিলম্বিত হতে পারে, অতীতের নাটকের পুনরাবৃত্তি হবে।

 

কর্তৃপক্ষ এখন বলছেন, আপাতত: প্রায় ৮০ কোটি টাকা খরচ করে পুরাতন সেতুটিকে নাকি সংস্কার করা হবে, যাতে করে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেল সার্ভিস ব্যাহত না হয়। এই বিষয়টি নিয়ে আগে কেনো ভাবা হলোনা ? এসব না করলে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেল সার্ভিস চলবে না। সেই মেগাপ্রকল্পের মধ্যেই কালুরঘাট নতুন সেতু করার উদ্যোগ নেয়া হলে অনেক অর্থ ও সময় বেঁচে যেতো। এটা প্রমাণ করে চরম গাফিলতি ও অবহেলা। এখন বলা হয়েছে ২০২৮ সালে সমাপ্ত করতে নতুন সেতুটির জন্য খরচ হবে প্রায় ১৪ হাজার কোটি টাকা। বলা হয়েছে ২০২৪ সালে শুরু হলে নাকি ২০২৮ সালে সমাপ্ত হবে নতুন সেতু। পদ্মা সেতু প্রকল্পের সাথে তুলনা করলে এর খরচও সময়সীমা নিয়ে আমাদের কিছু প্রশ্ন আছে। বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক কামরুল আহসান দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘খরচ এত বেশি হওয়ার কথা না। আমি তথ্য জেনে তারপর মন্তব্য করতে পারব।’
এখানে সমন্বয়হীনতার ইঙ্গিত পাওয়া যায়।

কালুরঘাট নতুন সেতু নিয়ে রেল সচিবের দেয়া সাম্প্রতিক বক্তব্য বিভ্রান্তিকর, দেশবাসীকে দেয়া আগের ঘোষণাগুলির সাথে অসামঞ্জস্যপূর্ণ এবং প্রতিশ্রুতির বরখেলাপ। আমরা কি যে যা বলেন, তাই কি মেনে নেবো ? ২০২০ সালে রেল মন্ত্রী এসে জরাজীর্ণ বর্তমান সেতুর উপর দাঁড়িয়ে বলেছিলেন ২০২১ সালে নতুন সেতুর কাজ শুরু হবে, ২৩-২৪ সালে শেষ হবে। এখন উনারই সচিব বলেছেন ২০২৮ সালে সেতু হবে! এই কথা কিসের ভিত্তিতে আসলো? সাতগুণ বড় পদ্মা সেতু কতদিন লেগেছিলো? দোহাজারী-কক্সবাজার নতুন রেল যোগাযাগ শহরের সাথে সংযোগ করতে এতদিন পরে হঠাৎ কেন মনে পড়লো পুরাতনটাকে সংস্কার করার ?

 

তিন বছর আগে শুরু করলে এতদিনে নতুন সেতু হয়েই যেতো, সম্ভবত দুই তিন হাজার কোটি টাকার মধ্যে। আর ২০২৮ সালে করবে ১৪-১৬ হাজার কোটি টাকা খরচ করে। এইটা চূড়ান্ত হচ্ছে, ওইটা হয়নি, সামনের বছর শুরু হবে, এসব বাণী অনেক শুনলাম। ২০১৪ সালে গৃহীত এই নতুন সেতুর নির্মাণ উদ্যোগের পর থেকে একাধিকবার সম্ভাব্যতা যাচাই করা হয়েছে। সেতুর নকশা বদল করা হয়েছে কয়েক দফা। এসব করতে করতে এভাবে কেটে গেছে ৯ বছর। সর্বোপরি ২০২৪ সালে এই কাজ শুরু হওয়ার কোনো গ্যারান্টি নেই। কাজেই এখন পুরো বিষয়টাই অনিশ্চিত।

এবিষয়গুলো পর্যবেক্ষণ করে আমরা বলতে চাই- আগামী একমাসের মধ্যে কালুরঘাট নতুন সেতু নিয়ে সকল ধোয়াশা কাটিয়ে সেতু নির্মাণ বিষয়ে দৃশ্যমান কর্মকান্ড শুরু হোক, অন্যথায় চট্টগ্রামবাসী কঠোর কর্মসূচির মাধ্যমে দাবি আদায় করবে।

 

এইচ এম কাদের,সিএনএন বাংলা২৪: