মোঃ আলমগীর আকাশ,টেকনাফ:
কক্সবাজারের উখিয়ায় ২০ নাম্বার রোহিঙ্গা ক্যাম্প সংলগ্ন গহীন পাহাড়ে অভিযান চালিয়ে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র, গ্রেনেড ও রকেট সেলসহ দুইজনকে আটকের কথা জানিয়েছে র্যাব।
বুধবার ভোরে উপজেলার কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্প সংলগ্ন লাল পাহাড় এলাকায় এ অভিযান চালানো হয় বলে জানান র্যাব-১৫ কক্সবাজার ব্যাটালিয়নের সহকারী পরিচালক ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. আবু সালাম চৌধুরী।
র্যাব জানায়, আটক দুজন মিয়ানমারের সশস্ত্র সন্ত্রাসী সংগঠন আরসার সদস্য। তারা হলেন আরসার অন্যতম প্রধান সমন্বয়ক ও কমান্ডার ১৫ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পের সৈয়দুল আবেরার ছেলে মো. শাহনুর ওরফে মাস্টার সলিম (৩৮) ও তার অন্যতম সহযোগী ৮ নম্বর ক্যাম্পের প্রয়াত মোহাম্মদ নুরের ছেলে মো. রিয়াজ (২৭)।
আবু সালাম চৌধুরী বলেন, উখিয়ার কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্প সংলগ্ন গহীন লাল পাহাড় নামক এলাকায় মিয়ানমারের সশস্ত্র সন্ত্রাসী সংগঠন আরসার সদস্যর নতুন আস্তানা গড়ে তুলেছে এমন তথ্যের ভিত্তিতে সেখানে অভিযান শুরু করে র্যাব।
তিনি জানান, বুধবার ভোরে এক পর্যায়ে সন্দেহজনক আস্তানাটি ঘিরে ফেললে র্যাব সদস্যদের লক্ষ্য করে আরসা সদস্যরা অতর্কিত গুলি ছুড়তে থাকে। এ সময় আত্মরক্ষার্থে র্যাব সদস্যরাও পাল্টা গুলি ছোড়ে। এক পর্যায়ে পালিয়ে যাওয়ার সময় দুই সন্ত্রাসীকে আটক করতে সক্ষম হয় র্যাব। পরে আস্তানায় তল্লাশি চালিয়ে পাওয়া যায় বিপুল পরিমাণ অস্ত্র, গ্রেনেড ও রকেট সেল।
র্যাবের এ কর্মকর্তা জানান, বুধবার সকাল পৌনে ৯টা পর্যন্ত র্যাব সদস্যরা ঘটনাস্থলসহ আশপাশের এলাকায় অভিযান চালায়।
পরে বেলা ১২টার দিকে সংবাদ সম্মেলন করে এ অভিযান সম্পর্কে বিস্তারিত জানান র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার মোহাম্মদ আরাফাত ইসলাম।
তিনি জানান, অভিযানে ৫টি রকেল সেল, ৩টি রাইফেল গ্রেনেড, ১০টি দেশীয় তৈরি হ্যান্ড গ্রেনেড, ১৩টি ককটেল, ১টি বিদেশি রিভলবার, ৯ রাউন্ড পিস্তলের গুলি, ১টি এলজি ও ৩টি ১২ বোর কার্তুজ উদ্ধার করা হয়েছে।
র্যাবের মুখপাত্র জানান, রোহিঙ্গা ক্যাম্পে সম্প্রতি ঘটে যাওয়া হত্যাকাণ্ড এবং বিভিন্ন সন্ত্রাসী ঘটনার প্রেক্ষিতে র্যাব-১৫ গোয়েন্দা তৎপরতা ও নজরদারি শুরু করে। এর সূত্র ধরেই জানা যায়, মাস্টার সেলিম বর্তমানে বাংলাদেশে আরসার প্রধান হিসেবে নেতৃত্ব দিচ্ছে। তার নেতৃত্বে আরসার সদস্যরা পুনরায় হত্যাসহ বিভিন্ন অপরাধ কর্মকাণ্ড পরিচালনা এবং পার্শ্ববর্তী দেশ থেকে অস্ত্র-গোলাবারুদ সংগ্রহ করে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে নাশকতার সৃষ্টির চেষ্টা করছে।
তিনি জানান, গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে ভোরে উখিয়ার রোহিঙ্গা ক্যাম্প সংলগ্ন লাল পাহাড়ে আরসার আস্তানায় অভিযান চালায় র্যাব। সেখান থেকে আরসার দুই সন্ত্রাসীকে আটক এবং তাদের কাছ থেকে অস্ত্র, গ্রেনেড ও রকেট সেল উদ্ধার করা হয়েছে।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্যের বরাত দিয়ে কমান্ডার আরাফাত জানান, মাস্টার সলিম ২০১৭ সালে বাংলাদেশে প্রবেশের পর ১৫ নম্বর ক্যাম্পে বসবাস শুরু করে। সে মিয়ানমারে থাকাকালে সেখানকার আরসা জোন কমান্ডারের দায়িত্বে ছিল। এছাড়াও আরসা প্রধান আতাউল্লাহ আবু আম্মার জুনুনির দেহরক্ষী হিসেবে দুই মাস দায়িত্ব পালন করে।
শরণার্থী হিসেবে ২০১৭ সালে বাংলাদেশে আসার পর মৌলভী আকিজের মাধ্যমে সলিম পুনরায় আরসায় যোগদান করে জানিয়ে র্যাবের মুখপাত্র বলেন, আরসার হয়ে আধিপত্য বিস্তার কোন্দলসহ খুন, অপহরণ, চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন অপরাধে সম্পৃক্ত হয়ে পড়ে সলিম। তার বিরুদ্ধে তিনটি হত্যা মামলাসহ অন্যান্য বিভিন্ন অপরাধে একাধিক মামলা রয়েছে। আর রিয়াজ হলো তার সহযোগী।