নিজস্ব প্রতিবেদক :
দলীয় সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনে যাবেন না বলে জানিয়েছেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির ও চরমোনাই পীর মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম।
শনিবার ২৪ জুন রাজধানীর গুলিস্তানের একটি হোটেলে আয়োজিত ‘রাজনৈতিক সংকট উত্তরণ এবং একটি সুষ্ঠ ও নিরপেক্ষ জাতীয় নির্বাচনের লক্ষ্যে করণীয়’ শীর্ষক মতবিনিময় সভায় তিনি এ কথা জানান।
চরমোনাই পীর রেজাউল করীম বলেন, ‘আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন দলীয় সরকারের অধীনে আয়োজনের পাঁয়তারা চলছে। মানুষকে ধোকা দিয়ে বোকা বানানোর চেষ্টা করে যাচ্ছে। আমরা আগেও বলেছি, এখনও বলছি– দলীয় সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনেই ইসলামী আন্দোলন অংশগ্রহণ করবে না।’
রেজাউল করীম বলেন, ‘স্বাধীনতার পর দলীয় সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনই সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য ও নিরপেক্ষ হয় নাই। রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে বিরোধীদলের ওপর দমন-পীড়ন চালিয়ে একতরফা নির্বাচন করে ক্ষমতা দখল করাই দলীয় সরকারের মূল উদ্দেশ্য থাকে। ভবিষ্যতেও দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন সুষ্ঠু হওয়ার আশা করা যায় না। ১৯৭৩, ২০১৪ এবং ২০১৮ সালের নির্বাচন তার প্রমাণ।’
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনেরও আপত্তি জানিয়ে চরমোনাই পীর বলেন, ‘রাজনৈতিক একটি বিশেষ প্রেক্ষাপটে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে প্রথম নির্বাচন হয় ১৯৯১ সালে। ওই নির্বাচনে বিএনপি ক্ষমতায় গেলে তৎকালীন বিরোধীদল বলেছিল নির্বাচনে সূক্ষ্ম কারচুপি হয়েছে। এ অজুহাতে বিরোধী দল অনেকদিন পার্লামেন্ট বর্জন করেছিল।’
তিনি বলেন, ‘আবার দ্বিতীয়বার ১৯৯৬ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় গেলে ওই সময়ের বিরোধী দল বলেছিল ভোটে স্থূল কারচুপি হয়েছে এবং তারাও লাগাতার সংসদ বর্জন করেছিল। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হয় না, নিরপেক্ষও হয় না।’
জাতীয় সরকারের রূপরেখা তুলে ধরে চরমোনাই পীর বলেন, ‘আপিল বিভাগের একজন বিজ্ঞ, সৎ যোগ্য গ্রহণযোগ্য বিচারপতিকে প্রধান করে নিবন্ধিত দলগুলোর প্রতিনিধি নিয়ে জাতীয় সরকার গঠন হবে। যারা জাতীয় সরকারে থাকবেন তারা জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারবেন না। জাতীয় সংসদের মেয়াদ পূর্ণ হওয়ার আগেই জাতীয় সরকার গঠন করতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘জাতীয় সরকার গঠিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই বর্তমান জাতীয় সংসদ ভেঙে দিতে হবে। সংসদ ভেঙে দেওয়ার পাশাপাশি বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনকালীন জাতীয় সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করবেন। জাতীয় সরকার গঠিত হওয়ার পরবর্তী তিন মাসের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন আয়োজন করবেন। কোনো কারণে তা সম্ভব না হলে পরবর্তী তিন মাসের মধ্যে অবশ্যই নির্বাচন দিয়ে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে।’
মতবিনিময় সভায় আরও ছিলেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকতুল্লাহ বুলু, যুগ্ম মহাসচিব মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, জাতীয় ইনসাফ কায়েম কমিটির সদস্য সচিব শওকত মাহমুদ, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম, জাতীয় পার্টির (জাপা) প্রেসিডিয়াম সদস্য গোলাম মসীহ, জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলনের (এনডিএম) চেয়ারম্যান ববি হাজ্জাজ, আমার বাংলাদেশ পার্টির (এবি পার্টি) সদস্যসচিব মজিবুর রহমান মঞ্জু, বাংলাদেশ ন্যাপের মহাসচিব গোলাম মোস্তফা ভূঁইয়া, জামায়াতে ইসলামীর নেতা ও বাংলাদেশ মসজিদ মিশনের সেক্রেটারি মাওলানা খলিলুর রহমান মাদানী, পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি ড. আবদুল লতিফ মাসুম প্রমুখ।
নুর মোহাম্মদ, সিএনএনবাংলা২৪