ই-পেপার | শনিবার , ২৩শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

চবি ছাত্রলীগের অন্তর্কোন্দলে বেরিয়ে এলো মাদকের নানান তথ্য-প্রমাণ

নিজস্ব প্রতিবেদক ,চট্টগ্রাম:

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়: চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) শাখা ছাত্রলীগের উপগ্রুপ বিজয়’র অনুসারী আশিকুজ্জামান জয়। গত সোমবার (২২ এপ্রিল) রাত ১১টার দিকে নিজ দলের কর্মীদের হাতে মারধরের শিকার হন তিনি।

 

বিজয় গ্রুপের একাংশের নেতা মোহাম্মদ ইলিয়াসের সঙ্গে সম্পর্ক খারাপ কেন- এমন প্রশ্ন করেই তাকে মারধর করা হয় বলে জানিয়েছিলেন আশিক। তবে এর পরপরই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে আশিকের মদপানের বেশকিছু ছবি।

 

মারধরকারী ছাত্রলীগের ৬ কর্মী ছিলেন ২০১৮-২৯ সেশনের লোকপ্রশাসন বিভাগের শিক্ষার্থী মো. আব্দুল্লাহ আল জোবায়ের, যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী মামুন মিয়া, রাজনীতি বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী মো. ফয়সাল মিয়া (আতিশ ফয়সাল), ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের শিক্ষার্থী তনয় কান্তি সরকার, ডেভলপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের শাকিল আহমেদ এবং উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের রাসেল রাজ।

 

তাদের দাবি- নেশা করে হলজুড়ে মাতলামি করার কারণেই তার উপর চড়াও হন তারা। এর আগে বারবার বুঝানোর চেষ্টা করলেও আশিক উল্টো তর্কবিতর্কে জড়ান বন্ধুদের সঙ্গে।

 

এদিকে মারধরের শিকার চবির পরিসংখ্যান বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী আশিকুজ্জামান থাকেন এএফ রহমান হলের ৪৪০ নম্বর কক্ষে। মারধরের পরদিন (২৩ এপ্রিল) সরেজমিনে ছাত্রলীগের এ কর্মীর কক্ষে বেশকিছু বিদেশি ব্র্যান্ডের মদের বোতলসহ মাদক গ্রহণের নানান সরঞ্জাম দেখা যায়।

 

অভিযোগ রয়েছে- আশিক নিয়মিত মাদক সেবন ও কারবারির সঙ্গে জড়িত। মারধরের পর ঘটনা ধামাচাপা দিতে আশিকের মাদক সংশ্লিষ্টতার বিষয়টি সামনে আনেন তার সহপাঠীরাই। তবে শুধু তাই নয়, ওই হলে থাকা শিক্ষার্থী এবং ছাত্রলীগের অনুসারীদের মাধ্যমে নিশ্চিত হওয় গেছে আরও বেশ কয়েকজনের নাম ও পরিচয়। যারা মাদক গ্রহণ এবং হলজুড়ে মাতলামির জন্য পরিচিত।

 

এদের মধ্যে রয়েছে- সংস্কৃত বিভাগের ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী মুজাহিদ চৌধুরী, ইতিহাস বিভাগের ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী মো. পলাশ চৌধুরী, মার্কেটিং বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী মাহিম হোসাইন, লোকপ্রশাসন বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী আরশিল আজিম নিলয়, নাট্যকলা বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী মো. আওয়াল হোসাইন সোহাগ, নৃবিজ্ঞান বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী শোয়েব আতিক, ইতিহাস বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী জুবায়ের রাব্বি, সমাজতত্ত্ব বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী মোহাম্মদ নাজমুল, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষ্বর্ষের শিক্ষার্থী আব্দুল্লাহ ফারুকী, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী নাহিদুল ইসলাম ও সংস্কৃত বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী শুভ দাস রোহিত।

 

দীর্ঘদিন হলের আসন বরাদ্দ না থাকায় বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলগুলোতে মাদকাসক্তদের দৌরাত্ম্য বেড়েছে। আর তাই হরহামেশাই হচ্ছে মাদকের বেচাকেনা। ক্যাম্পাসে হাত বাড়ালেই মেলে গাঁজা, ফেনসিডিল, হেরোইন, ইয়াবাসহ নানান দেশি-বিদেশি মাদক। চবির এএফ রহমান হলের যে ৪টি কক্ষে সবচেয়ে বেশি মাদকের আসর বসতো- এর মধ্যে একটি ছিল ৪৪০ নম্বর কক্ষ। এছাড়া ৪৩৪, ৩৩৪, ৩৩৫ এবং ৩৩৭ নম্বর কক্ষেও নিয়মিত বসে মাদকের আসর।

 

ছাত্রলীগ কর্মী আশিকুজ্জামানের মদপানের ছবিটি সামনে আসার পর তার সহপাঠীরা দাবি করেন, প্রায়ই আশিকের রুমে মাদকের আসর বসতো। নিজ কক্ষে ব্যাচমেট এবং জুনিয়রদের নিয়ে মাদক আসর বসাতেন তিনি।

 

তার বেশ কয়েকজন সহপাঠী বলেন, আশিক এএফ রহমান হলে মাদক কারবারির সঙ্গে জড়িত ছিল। বিভিন্ন জায়গা থেকে মাদক নিয়ে এসে ক্যাম্পাসে সাপ্লাই দিতো। সে নিজে যেমন মদ্যপ ছিল, তেমনি হলের জুনিয়রদের মাঝেও এই ব্যাধি ছড়িয়ে দিচ্ছিল।

 

তারা আরও বলেন, ’সে মদ, গাঁজা থেকে শুরু করে সব ধরনের মাদকই সেবন করতো। কয়েকদিন আগেও বেতবুনিয়া থেকে অনেকগুলো মদের বোতল নিয়ে আসে সে। সে হলে মাদকের সাম্রাজ্য গড়ে তুলেছিল। নিজেও মাদক নিতো, অন্যদেরকেও সরবরাহ করতো। তাই আমরা তাকে সতর্ক করার চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু সে উল্টো আমাদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করে।

 

মাদক সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে জানতে অভিযুক্ত আশিকুজ্জামান জয়ের মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি সাড়া দেননি।

 

এএফ রহমান হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. আলী আরশাদ চৌধুরী সিএনএনবাংলা২৪কে বলেন, গত পরশু রাতে আশিক নামে এক শিক্ষার্থীকে মারধরের পর জানতে পারি সে মাদকের সঙ্গে জড়িত থাকায় সহপাঠীরা মারধর করেছে। কিন্তু কেউ মাদকের সঙ্গে জড়িত থাকলে এ বিষয়ে কর্তৃপক্ষকে জানানো উচিত ছিল তাদের। পরদিন (২৪ এপ্রিল) আমি হলের ২ জন আবাসিক শিক্ষককে ৪৪০ নং কক্ষে গিয়ে সেখানে কিছু মদের বোতল দেখতে পাই। প্রাথমিকভাবে কক্ষটি সিলগালা করা হয়েছে।

 

আশিক হলে নেই। সে যদি এই রুমে উঠতে চায়, তখন আমরা তার সঙ্গে কথা বলবো। মাদকের বিষয়ে কোনো ছাড় দেওয়ার সুযোগ নেই। মাদকের সঙ্গে জড়িত থাকার তথ্য প্রমাণ পাওয়া গেলে নিয়মানুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

 

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ অহিদুল আলম সিএনএনবাংলা২৪কে বলেন, আশিকুজ্জামান জয় মাদকের সঙ্গে জড়িত কিনা বিষয়টি খতিয়ে দেখতে হল প্রভোস্টকে বলা হয়েছে। মাদকের সঙ্গে কারও কোনো প্রকার সম্পৃক্ততা পাওয়া গেলে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পাশাপাশি যারা মাদকের কথা বলে ওই শিক্ষার্থীকে মারধর করেছে, আমরা তাদের বিষয়েও ব্যবস্থা নিবো।