ই-পেপার | শনিবার , ১লা জুন, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

গণতন্ত্র ও নির্বাচন গুরুত্ব পাবে মানবাধিকারঃ মোমেন-ব্লিংকেন বৈঠক আজ

ডেস্ক নিউজঃ

এক বছর পর তাৎপর্যপূর্ণ বৈঠকে মিলিত হতে যাচ্ছেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আবদুল মোমেন এবং যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এন্থনি ব্লিংকেন। বাংলাদেশে জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে যখন সব পক্ষ সরব, ঠিক সেই মুহূর্তে ব্লিংকেনের সঙ্গে বৈঠকটিকে আলাদা গুরুত্ব দিচ্ছেন সংশ্লিষ্টরা। আজ ওয়াশিংটনে এ বৈঠক হওয়ার কথা। সূত্র জানিয়েছে, বৈঠকে উন্নয়ন-অগ্রযাত্রায় মার্কিন সম্পৃক্ততা প্রত্যাশার পাশাপাশি সব দল নিয়ে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সরকার যে আন্তরিক, ঢাকার এমন বার্তাও দেওয়া হবে।

২০২৬ সালের পর স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে উত্তরণের পর উন্নয়ন অগ্রযাত্রা মসৃণ রাখার জন্য ধারাবাহিক বিদেশি বিনিয়োগ প্রয়োজন এবং এ ক্ষেত্রে মার্কিনিদের সহযোগিতা চায় বাংলাদেশ। বাণিজ্য বৃদ্ধির জন্য বাজার-সুবিধা নিয়েও আলোচনা করতে চায় বাংলাদেশ। অন্যদিকে বাংলাদেশে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সুনির্দিষ্ট অবস্থান রয়েছে। এ ছাড়া বর্তমান মানবাধিকার পরিস্থিতি, বাকস্বাধীনতা, সুশীল সমাজের কাজ করার জায়গা, আইনের শাসন নিয়ে সাম্প্রতিক মানবাধিকার রিপোর্টে তাদের অবস্থান তুলে ধরা হয়েছে।

এই ধরনের উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে কোন বিষয়গুলো আলোচনা হবে, সেগুলো আগে থেকে ঠিক করা থাকে এবং সেই অনুযায়ী উভয়পক্ষ প্রস্তুতি নিয়ে আলোচনার টেবিলে বসে। সূত্র জানায়, ঢাকার পক্ষ থেকে অর্থনৈতিক সম্পর্ক জোরদার, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন, যুক্তরাষ্ট্রে থাকা বঙ্গবন্ধুর খুনি রাশেদ চৌধুরীকে ফেরত পাওয়া, বহুপক্ষীয় সহযোগিতাসহ অন্য বিষয়গুলো গুরুত্ব পাবে। অন্যদিকে মানবাধিকার ও গণতন্ত্র, রোহিঙ্গা, আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে মার্কিন অবস্থানকে সমর্থন দেওয়ার আহ্বানসহ অন্য বিষয়গুলোকে গুরুত্ব দেয় যুক্তরাষ্ট্র।

ওয়াশিংটনে সফরের বিষয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন বলেন, আমরা চাই স্বচ্ছ এবং সুষ্ঠু নির্বাচন। আমেরিকাও তা-ই চায়। স্বচ্ছ ও সুষ্ঠু নির্বাচন প্রশ্নে আমাদের দুই দেশের মধ্যে কোনো দ্বিমত নেই। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমাকে দাওয়াত দিয়েছেন। অবশ্যই বলব আমরা খুব লাকি। আমরা পরপর তিনবার তার দাওয়াত পেলাম। তিনি বলেন, আমাদের উন্নয়ন মহাসড়কের সঙ্গে আমেরিকা যথেষ্ট গুরুত্ব পাচ্ছে। আর আমাদের সম্পর্কেরও উন্নতি হয়েছে। দুই বছর কোভিডের জন্য আমাদের আনাগোনা কম ছিল। এখন তা অনেকটা স্বাভাবিক হয়েছে।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, আমেরিকা আমাদের সবচেয়ে বড় বন্ধু দেশ। তারা আমাদের বড় বিনিয়োগকারী দেশ। সেদেশ আমাদের অন্যতম রপ্তানি গন্তব্য। আমেরিকা একমাত্র দেশ, যারা করোনাকালে সম্পূর্ণ বিনামূল্যে আমাদের ১০০ মিলিয়নের বেশি টিকা দিয়েছে। আমরা টিকা অন্য জায়গা থেকে কিনেছি। আর যুক্তরাষ্ট্র কেবল টিকা দেয়নি, তারা পয়সা খরচ করে তা আমাদের বাড়িতে পৌঁছে দিয়েছে। রোহিঙ্গারা আসার পর যে দেশ সবচেয়ে বেশি পাশে দাঁড়িয়েছে, সেটি আমেরিকা। অন্য দেশও সহায়তা করছে। তবে আমি সেই দেশে যাচ্ছি, এসব কাজের অবশ্যই প্রশংসা করব।

যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে কী আলাপ হবে জানতে চাইলে মোমেন বলেন, বাণিজ্য যেন বাড়ানো যায়, সেই নিয়ে আলাপ হবে। আমেরিকা চায়, বাংলাদেশে যেন স্বচ্ছ, সুন্দর ও গ্রহণযোগ্য একটি নির্বাচন হয়। আওয়ামী লীগের নীতিও নির্বাচন। আমরা নির্বাচনের মাধ্যমেই ক্ষমতায় এসেছি। তিনি বলেন, আমরা গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করেছি। ৩০ লাখ লোক জীবন দিয়েছে গণতন্ত্র সমুন্নত করার জন্যই। সে কারণে আমাদের গণতন্ত্র শেখানোর প্রয়োজন নেই। এটা আমাদের অস্থিমজ্জায়। আমাদের রক্তে গণতন্ত্র। সরকার যে সবাইকে নিয়ে নির্বাচন করতে আগ্রহী আমরা সেটা তাদের জানাব।

মন্ত্রী বলেন, আমরা স্বচ্ছ ব্যালট বাক্স করেছি। আগে ভুয়া হতো। এখন যেন না হয়, সে জন্য আমরা স্বাধীন নির্বাচন কমিশন গঠন করেছি। তারাই ইলেকশন করবে। তিনি আরও বলেন, নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব হলো স্বচ্ছ-গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠান। সরকার অবশ্যই কমিশনকে সাহায্য করবে। আর শুধু সরকার সাহায্য করলে হবে না। জনগণ, সব রাজনৈতিক দল, মিডিয়া সবাইকেই সাহায্য করতে হবে। সব রাজনৈতিক দলের সাহায্য ছাড়া সুষ্ঠু ও স্বচ্ছ নির্বাচন সম্ভব নয়। আর আমরা আমাদের শাসনতন্ত্র অনুযায়ী নির্বাচন করব। কারো অন্য ধরনের কোনো চিন্তা থাকলে, তা ভুল চিন্তা। আমরা সংবিধান ও আইনের শাসনে বিশ্বাসী। সরকারের চেষ্টা থাকবে সবার অংশগ্রহণে সুষ্ঠু নির্বাচন। ইতোমধ্যে সব দলকে নির্বাচনে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। আশা করছি, তারা সরকারের ডাকে সাড়া দেবে।