রিপোর্ট: এস.এম.জয়,বগুড়া :
রেল প্রকল্প অনুমোদনের প্রায় সাড়ে ৫ বছর পর বগুড়া-সিরাজগঞ্জ রেলপথ নির্মাণের জন্য ভূমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া শুরু করেছে বগুড়ার জেলা প্রশাসন। প্রয়োজনীয় জমি অধিগ্রহণের প্রস্তাবসংবলিত ৪ ধারার নোটিস ভূমিমালিকদের কাছে পাঠানো হয়েছে। পাশের জেলা সিরাজগঞ্জেও জমির মালিকদের নামে নোটিস প্রস্তুতের কাজ চলছে। কর্মকর্তারা বলছেন, সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে আগামী বছরের শুরুতেই প্রকল্পের নির্মাণকাজ শুরু হবে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ৮৫ কিলোমিটার ডুয়েল গেজ (ব্রড গেজ ও মিটার গেজ) নতুন রেলপথ নির্মাণের জন্য মোট ৯৬০ একর জমি অধিগ্রহণের প্রয়োজন হবে। বগুড়া জেলা সীমানায় অধিগ্রহণ করা হবে ৪৭৯ দশমিক ১৫ একর। বাকি ৪২০ দশমিক ৬৮ একর জায়গা অধিগ্রহণ করা হবে সিরাজগঞ্জ জেলায়। ভূমি অধিগ্রহণ খাতের ব্যয় মেটানোর জন্য প্রকল্পে ১ হাজার ৯২১ কোটি টাকার সংস্থান রাখা হয়েছে।
বগুড়ার শাজাহানপুর উপজেলার হড়িগাড়ি গ্রামের বাসিন্দা তবিবুর রহমান জানান, তার ২০ শতাংশ জমি বগুড়া-সিরাজগঞ্জ রেলপথ প্রকল্পে অধিগ্রহণ করার কথা জানিয়ে ১১ই ফেব্রুয়ারি জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে ৪ ধারার নোটিস পাঠানো হয়েছে। ন্যায্যমূল্য পেলে প্রকল্পের জন্য জমি দিতে তার কোনো আপত্তি নেই।
বগুড়া থেকে সিরাজগঞ্জ পর্যন্ত সরাসরি রেলপথ না থাকায় এ- অঞ্চলের ট্রেনগুলো বর্তমানে সান্তাহার, নাটোর ও পাবনার ঈশ্বরদী হয়ে প্রায় ১২০ কিলোমিটার পথ ঘুরে চলাচল করতে হচ্ছে। বাড়তি পথ ঘুরতে একদিকে যেমন সময়ের অপচয় হচ্ছে তেমনি বেশি ভাড়াও গুনতে হচ্ছে। বগুড়া থেকে যেখানে সড়কপথে ঢাকা পৌঁছাতে লাগে ৭ ঘণ্টা, সেখানে ট্রেনে যেতে লাগে ১০ থেকে ১১ ঘণ্টা।
রেলওয়ের তথ্য অনুযায়ী, দুই জেলার মধ্যে দূরত্ব মাত্র ৭২ কিলোমিটার। নতুন রেলপথ চালু হলে বগুড়া থেকে সিরাজগঞ্জ হয়ে মাত্র ৫ ঘণ্টায় ঢাকায় পৌঁছানো সম্ভব।
দুই জেলার মধ্যে নতুন রেলপথ নির্মাণের জন্য বগুড়া ও সিরাজগঞ্জের বাসিন্দারা দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করে আসছে। এ নিয়ে হরতাল-অবরোধের মতো কর্মসূচিও পালন করা হয়েছে। জনগণের দাবির মুখে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বগুড়া-সিরাজগঞ্জ রেলপথ নির্মাণ প্রকল্প গ্রহণের নির্দেশ দেন। ২০১৮ সালের ৩০শে অক্টোবর জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠকে গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পটি অনুমোদন পায়। বাংলাদেশ সরকার ও ভারতীয় ঋণের অর্থে ওই প্রকল্প বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পটির সম্ভাব্য ব্যয় ধরা হয় ৫ হাজার ৫৭৯ কোটি ৭০ লাখ টাকা। এর মধ্যে ৩ হাজার ১৪৬ কোটি ৫৯ লাখ ১০ হাজার টাকা ঋণ দেবে ভারত। শুরুতে প্রকল্পটি ২০২৩ সালের ৩০শে জুনের মধ্যে শেষ করার কথা ছিল। কিন্তু পরামর্শক নিয়োগ এবং নকশা চূড়ান্ত করা নিয়ে বিলম্বের কারণে তা সম্ভব হয়নি। ২০২১ সালের ২৭শে সেপ্টেম্বর ভারতীয় কর্তৃপক্ষ পরামর্শক নিয়োগ দেওয়ার পর তারা ২০২৩ সালের ৩০শে জুন চূড়ান্ত নকশা প্রণয়ন করে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, প্রকল্পের আওতায় ডুয়েল গেজের দুটি রেলপথ নির্মাণের পরিকল্পনা করা হয়েছে। একটি হলো- বগুড়ার ছোট বেলাইল এলাকা থেকে সিরাজগঞ্জের এম মনসুর আলী স্টেশন পর্যন্ত ৭৩ কিলোমিটার এবং অপরটি বগুড়ার কাহালু স্টেশন থেকে রাণীরহাট পর্যন্ত ১২ কিলোমিটার। মূলত সান্তাহারের দিক থেকে ছেড়ে আসা ঢাকাগামী এবং ঢাকা থেকে ছেড়ে সান্তাহার হয়ে দিনাজপুরের পার্বতীপুরগামী ট্রেনগুলো যাতে বগুড়া স্টেশনকে এড়িয়ে সরাসরি চলাচল করতে পারে, সেজন্য কাহালু-রাণীরহাট রেলপথটি নির্মাণ করা হচ্ছে।
দুটি রেলপথ মিলিত হওয়ার কারণে বগুড়া শহর থেকে ৮ কিলোমিটার দূরে রাণীরহাটে একটি জংশনও নির্মাণ করা হবে। আরেকটি জংশন হবে সিরাজগঞ্জে। এ ছাড়া নতুন রেলপথের জন্য দুই জেলা সীমানায় আরও ছয়টি স্টেশন স্থাপন করা হবে। সেগুলো হলো– শেরপুর, আড়িয়া বাজার, ছোনকা, চান্দাইকোনা, রায়গঞ্জ ও কৃষ্ণদিয়া।
বগুড়ার জেলা প্রশাসক মো: সাইফুল ইসলাম ” CNN Bangla 24 ” -কে জানান, জমি অধিগ্রহণের জন্য মালিকদের সংশ্লিষ্ট ধারায় নোটিস দেওয়া হয়েছে। যদি কারও কোনো আপত্তি থাকে সেগুলো শুনানি করে পরে ৮ ধারায় চূড়ান্ত নোটিস পাঠানো হবে। আপত্তি না এলে খুব দ্রুত অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া শেষ হবে।
সিরাজগঞ্জ জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের ভূমি হুকুম দখল শাখার সিনিয়র সহকারী কমিশনার সুইচিং মং মারমা জানান, রেলপথ নির্মাণ প্রকল্পের জন্য প্রয়োজনীয় ভূমি অধিগ্রহণের প্রস্তাব জানিয়ে তারা খুব শিগগিরই জমিমালিকদের নোটিস ইস্যু করবেন।
বগুড়ায় রেলওয়ের সহকারী নির্বাহী প্রকৌশলী সাইদুর রহমান জানান, প্রকল্পটির জন্য এ-পর্যন্ত ২৫ কোটি ২৫ লাখ ৭০ হাজার টাকা ব্যয় হয়েছে। চলতি বছর আরও ৪৪০ কোটি ৫০ লাখ টাকা বরাদ্দ রয়েছে।
বগুড়া-সিরাজগঞ্জ রেলপথ নির্মাণ প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক মো: মনিরুল ইসলাম ফিরোজী জানান, জমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়ার পাশাপাশি নির্মাণকাজের জন্য টেন্ডার আহ্বানের প্রস্তুতি চলছে। এজন্য প্রয়োজনীয় নথি ভারতীয় এক্সিম ব্যাংকে পাঠানো হয়েছে। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে আগামী বছরের শুরুতে মূল নির্মাণকাজ দৃশ্যমান হবে।