ই-পেপার | বৃহস্পতিবার , ২৭শে জুন, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

শিশুকল্যাণ ট্রাস্ট বিদ্যালয় নিয়ে ভাগবাটোয়ারা 

মির্জা সুবেদ আলি রাজা, ঢাকা :

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ শিশু কল্যাণ ট্রাস্ট। এই শিশু কল্যাণ ট্রাস্ট প্রতিষ্ঠানটি প্রথমে পথকলি ট্রাস্ট নামে পরিচালিত হয়। পরে ১৯৮৯ সালে শিশু কল্যাণ ট্রাস্ট নামে পরিচালিত শুরু করে। এই শিশু কল্যাণ ট্রাস্টের মোট বিদ্যালয় ২০৫টি। এর মধ্যে ঢাকা জেলায় ৬৫টি, বরিশাল জেলায় ২৫ টি, চট্টগ্রাম জেলায় ১১ টি, সিলেট জেলায় ৫টি, ময়মনসিংহ জেলায় ১৪ টি, রংপুর জেলায় ৪৭ টি, রাজশাহী জেলায় ২২ টি ও খুলনা জেলায় ১৬টি।

এই শিশু কল্যাণ ট্রাস্ট যখন পরিচালনা শুরু করে সেই সময় উল্লেখ থাকে যে হতদরিদ্র, সুবিধা বঞ্চিত, ঝরে পড়া শিশু, শ্রমজীবী, অবহেলিত, ঘনবসতি, নৃ-গোষ্ঠী, উপজাতি, বন্যা কবলিত, নিচু এলাকা, ইটভাটা, গুচ্ছগ্রাম- এইসব জায়গার ছেলে মেয়েদেরকে নিয়ে বিকেলকালীন এই বিদ্যালয় পরিচালনা হবে। এবং সেই নীতিমালা অনুযায়ী কিছু জায়গায় হয়েও আসছে।

৬৬তম সভায় নতুন বিদ্যালয় স্থাপনের পর গেল অক্টোবর পর্যন্ত নতুন বিদ্যালয়ের স্থাপন হয়নি। সম্প্রতি শিশু কল্যাণ ট্রাস্ট এর পরিচালক মো: আবুল বশার (উপ সচিব) স্বাক্ষরিত একটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়। শিশু কল্যাণ ট্রাস্টি বোর্ডের ৭৫ ও ৭৬ তম সভার সিদ্ধান্তের আলোকে জানানো হয়, চা বাগানসম ঘন এলাকা, নৃ-গোষ্ঠী সম্প্রদায়, দুর্গম এলাকা, আশ্রয়ন প্রকল্পের কাছাকাছি যেখানে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নেই এমন স্থানে ৫০টি শিশু কল্যাণ প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপন করা হবে।

এতে বলা হয়, সংশ্লিষ্ট এলাকার আগ্রহী শিক্ষানুরাগী  ব্যক্তিরা ০২/১১/২০২৩ইং হতে ১২/১১/২০২৩ ইং তারিখে মধ্যে আবেদন দাখিল করতে পারবেন। কিন্তু ২ তারিখ ছিল বৃহস্পতিবার। পরের দুই দিন শুক্র ও শনিবার বন্ধ। ৫-৯ তারিখ অফিস খোলা ছিল, ১০-১১ তারিখ বন্ধ ছিল। শর্ত ছিল ১২তারিখে মধ্যে আবেদনপত্র অফিস চলাকালীন সময়ের মধ্যে জমা দিতে হবে।

কিন্তু এতদিন পরে শিশু কল্যাণ ট্রাস্টের ৫০ টি বিদ্যালয় অনুমোদনের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পর শিক্ষা অনুরাগীদের এত কম সময় দিয়ে তাড়াহুড়োর ব্যস্ততা সাধারণ মানুষ ও দূরের মানুষের ঢাকায় এসে শিশু কল্যাণ ট্রাস্ট অফিস সদর দপ্তরে জমা করতে অনেকের হিমশিম খেতে হয়। কিন্তু এর ভেতরে শিশু কল্যাণ ট্রাস্ট এর পরিচালকে ১৩/১১/২০২৩ইং তারিখে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় তাকে একটি বদলির আদেশ করা হয়, পরিচালক পায়রা বন্দর কর্তৃপক্ষ হিসেবে।

কিন্তু সেই বদলির আদেশ থাকা সত্ত্বেও শিশু কল্যাণ ট্রাস্টের পরিচালক মোঃ আবুল বশার বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের বিদ্যালয়গুলো  এককভাবে আধিপত্য করার জন্য তদবির করে ১৯/১২/২০২৩ইং তারিখে বদলির আদেশটি বাতিল করে পুনরায় পরিচালক শিশু কল্যাণ ট্রাস্ট পদে বহাল রাখে। তারপর আবেদন করা বিদ্যালয়ে মাঠে সরোজমিনে তদন্ত করার জন্য উপজেলা শিক্ষা অফিসারের দায়িত্ব পালনের জন্য একটি পত্র দেওয়া হয় সকল জেলায়। উপজেলা শিক্ষা অফিসারকে মাত্র কয়েক দিনের জন্য তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য বলা হয় এবং তদন্ত প্রতিবেদন পরিচালক বরাবর পাঠিয়ে দেওয়া হয়।

জানা গেছে, তাদের তদন্ত সন্তোষজনক না হওয়ায় আবার জেলা শিক্ষা অফিসার বরাবর পত্র পাঠানো হয়। সকল জেলা শিক্ষা অফিসারকে মাত্র ৫ দিন সময় দেওয়া হয়। জেলা শিক্ষা অফিসার কিছু সংখ্যক তদন্তের প্রতিবেদন পাঠায় আর কিছু সংখ্যক বিদ্যালয়ের অপেক্ষা তদন্ত প্রতিবেদন তাদের কাছে তদন্তে পড়ে আছে।

সূত্র জানায়, গত ২১ ডিসেম্বর মন্ত্রণালয়ে ট্রাস্টি বোর্ডের একটি সভা নির্ধারণ করা হয় এবং সেই সভায় সাড়ে বারোটার সময় প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে শিশু কল্যাণ ট্রাস্টি বোর্ডের ৮০তম সভা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা থাকলেও দুপুর দুইটার পর ট্রাস্টি বোর্ডের সভা আরম্ভ হয়। কিন্তু সভায় সকল সদস্য উপস্থিত না হওয়ায় এবং মন্ত্রীর বিদ্যালয় তালিকা মন:পুত না হওয়ায় গত ২৭ ডিসেম্বর সিদ্ধান্ত হওয়ার কথা জানিয়ে সভাপতি ঘোষণা দেন।  গোপন সূত্রে জানা যায়, গত ২৭ ডিসেম্বর শিশু কল্যাণ ট্রাস্টি বোর্ডের সভা অনুষ্ঠিত না করে মন্ত্রী ও পরিচালক বাসায় বসে নিজেদের মতো করে বিদ্যালয়ের তালিকা চূড়ান্ত করে রেখেছে যা আজকালের মধ্যে সিদ্ধান্ত হবে।