ই-পেপার | শুক্রবার , ২২শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

১০ লাখ ৩৭ হাজার কোটি টাকার প্রকল্প অনুমোদন

বিশেষ প্রতিনিধি :

* ৯৯টি একনেক সভায় পাশ হয় ৯০৯ প্রকল্প
* নির্বাচনি বছর হওয়ায় ২০২৩ সালে সর্বোচ্চ অনুমোদন

গত পাঁচ বছরে ১০ লাখ ৩৭ হাজার ৭৫৪ কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছে আওয়ামী লীগ সরকার। এর মধ্যে সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে ৬ লাখ ৬১ হাজার ৮৩ কোটি টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে। এছাড়া বৈদেশিক অর্থায়ন ৩ লাখ ৫৭ হাজার ২৩০ কোটি এবং সংস্থার নিজস্ব তহবিল থেকে ১৯ হাজার ৪৪০ কোটি টাকা খরচ হবে। নির্বাচনি বছর হওয়ায় এবার অনুমোদন পেয়েছে সবচেয়ে বেশি প্রকল্প। কিন্তু এত বিপুল ব্যয় বরাদ্দের মধ্যে সংশোধিত এডিপির (বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি) লক্ষ্য পূরণ করতে পারেনি কোনো অর্থবছরেই। এক্ষেত্রে শুধু চার অর্থবছরে অব্যায়িত আছে সংশোধিত এডিপির ১ লাখ ৩০ হাজার ৩৩১ কোটি টাকা। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের এক হিসাব থেকে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।

প্রকল্প অনুমোদন প্রসঙ্গে পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান এর আগে যুগান্তরকে বলেছিলেন, আমাদের সরকার গণতান্ত্রিক সরকার। জনগণের কাছে দায়বদ্ধতা আছে। আমরা জনগণের জন্য কাজ করব, এটাই স্বাভাবিক। জনগণের জন্য কাজ করতে হলে উন্নয়ন প্রকল্পের মাধ্যমেই করতে হবে। সেই বিবেচনা থকে আমরা প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছি। এখানে রাজনৈতিক বিবেচনা বলতে আলাদা কিছু ছিল না। আমরা ভালো করেছি নাকি খারাপ করেছি, সেটি বিচার করবে দেশের জনগণ। আগামী নির্বাচনে মানুষ ভেবে দেখবেন-কারা উন্নয়ন করে আর কারা ধ্বংসাত্মক কাজে লিপ্ত রয়েছে। আওয়ামী লীগ সব সময়ই উন্নয়নে বিশ্বাসী।

পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, ২০১৯ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) মোট ৯৯টি বৈঠক হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী ও একনেক চেয়ারপারসন শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এসব বৈঠকে ৯০৯টি প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়। প্রকল্পগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ভৌত অবকাঠামো সংক্রান্ত। এছাড়া নির্বাচনি বছর হওয়ায় ২০২৩ সালেই অনুমোদন পেয়েছে সর্বোচ্চ ২৪৮টি প্রকল্প। ২০১৯ সালে অনুষ্ঠিত হয় ২৪টি একনেক বৈঠক। এতে ২৩৫টি উন্নয়ন প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এছাড়া ২০২০ সালে ২৮টি একনেক বৈঠকে অনুমোদন পায় ১৮০টি প্রকল্প। ২০২১ সালে ১৫টি একনেক বৈঠকে অনুমোদন দেওয়া হয় ১৩৬টি প্রকল্প। ২০২২ সালে অনুষ্ঠিত ১৮টি একনেক বৈঠকে ১৬৬টি এবং ২০২৩ সালের ৯ নভেম্বর পর্যন্ত ১৪টি একনেক বৈঠকে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে ২৪৮টি উন্নয়ন প্রকল্প।

বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ (আইএমইডি) সূত্র জানায়, ২০১৯-২০ থেকে ২০২২-২৩ অর্থবছর পর্যন্ত মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোর অনুকূলে সংশোধিত এডিপিতে বরাদ্দ ছিল ৮ লাখ ৬৬ হাজার ৬৫৫ কোটি টাকা। কিন্তু বিভিন্ন প্রকল্পের আওতায় মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলো ব্যয় করতে পেরেছে ৭ লাখ ৩৬ হাজার ৩২৪ কোটি টাকা। অব্যয়িত থেকেছে ১ লাখ ৩০ হাজার ৩৩১ কোটি টাকা। আইএমইডির প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ২০২২-২৩ অর্থবছরের সংশোধিত এডিপিতে বরাদ্দ ছিল ২ লাখ ২৬ হাজার ৫৬১ কোটি টাকা। অর্থবছর শেষে খরচ হয়েছে ১ লাখ ৯৯ হাজার ৯৯ কোটি টাকা। অব্যয়িতই থেকেছে ৩৭ হাজার ৪৬২ কোটি টাকা। এছাড়া ২০২১-২২ অর্থবছরে বরাদ্দ ছিল ২ লাখ ১৯ হাজার ৬০৩ কোটি টাকা, ব্যয় হয়েছিল ২ লাখ ৩ হাজার ৬৪৮ কোটি, অব্যয়িত ১৫ হাজার ৯৫৫ কোটি টাকা। ২০২০-২১ অর্থবছরে বরাদ্দ ছিল ২ লাখ ৯ হাজার ২৯২ কোটি টাকা, ব্যয় হয় ১ লাখ ৭১ হাজার ৮৩৬ কোটি টাকা এবং ৩৭ হাজার ৪৫৬ কোটি টাকা ব্যয় হয়নি। এছাড়া ২০১৯-২০ অর্থবছরে বরাদ্দ ছিল ২ লাখ ১ হাজার ১৯৯ কোটি টাকা, ব্যয় হয় ১ লাখ ৬১ হাজার ৭৪১ কোটি টাকা, খরচ হয়নি ৩৯ হাজার ৪৫৪ কোটি টাকা।

আইএমইডির সচিব আবুল কাশেম মো. মহিউদ্দিন বুধবার বলেন, চলতি অর্থবছর যেসব প্রকল্প অনুমোদন পেয়েছে, এর অধিকাংশেরই কাজ শুরু হবে না। দেখা যাবে, চলতি অর্থবছর বরাদ্দই হয়তো পাবে না। উন্নয়নের ধারাবাহিকতা রক্ষায় সরকার বেশি বেশি প্রকল্প অনুমোদন দিয়ে রেখেছে। আগামী অর্থবছর থেকে এসব প্রকল্পে বরাদ্দ দেওয়া হবে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, প্রতি অর্থবছরে মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলো যে অর্থব্যয় করতে পারে না, সেজন্য জবাবদিহি থাকা উচিত। তবে অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায়, জমি অধিগ্রহণ, পিডি নিয়োগে দেরি, দরপত্র প্রক্রিয়ায় জটিলতাসহ নানা বাস্তব কারণেও প্রকল্পের বাস্তবায়ন সময়মতো হয় না।

সূত্র: যুগান্তর