নিজস্ব প্রতিবেদক , ঢাকা :
অবরোধের মধ্যেই গাবতলী থেকে সব রুটের গাড়ি ছেড়ে যাওয়া শুরু করেছে। সকাল থেকে গাবতলীর বাস টার্মিনাল মুখর হয়ে উঠেছে।
খুলেছে কাউন্টার। কলারম্যানদের হাঁক-ডাক চিৎকার বেড়েছে। তবে যাত্রী কম, গাড়ির সংখ্যাও কম।
রোববার (৩ডিসেম্বর) সকালে গাবতলী বাস কাউন্টারের এমন চিত্র দেখা যায়। দেশের উত্তর-পশ্চিম-দক্ষিণাঞ্চল মুখী একজন যাত্রী টার্মিনালে এলেই একাধিক বাসের কলারম্যানরা ঘিরে ধরছে। এ চিত্র গাবতলীর জন্য পুরাতন হলেও, অবরোধ-হরতালে মধ্যে এমন প্রাণচাঞ্চল্যে ভাটা পড়েছিল। অবরোধ যত প্রলম্বিত হচ্ছে, অবরোধের মধ্যেই দূরপাল্লার বাস ছেড়ে যাওয়ার মাত্রাও বাড়ছে। বাড়ছে যাত্রীর সংখ্যাও।
যাত্রী সংখ্যা বাড়ায় টার্মিনাল কেন্দ্রিক হোটেল, মুদিদোকান, চায়ের দোকানগুলোও খুলেছে।হানিফ এন্টারপ্রাইজের কাউন্টার মাস্টার মো. শামীম জানান, অবরোধে অন্যদিন কোন গাড়ি ছেড়ে যায়নি। আমাদের গাড়ি আজকে যাচ্ছে। যাত্রী বাড়ছে। যাত্রী বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে গাড়ির সংখ্যাও বাড়ছে।
সকাল ৮টায় মাগুরামুখী একটি বাস ছেড়ে গেছে, সকাল সাড়ে ১০টায় আরো একটি গাড়ি ছেড়ে যাবে। অন্যদিন সকাল থেকে দুপুর ২ টা পর্যন্ত ৫টি ছেড়ে যায়, আজকে যাবে ৩টি। বিকেল-রাতেও গাড়ি চলবে। সোহাগ গাড়ির কলারম্যানের চিৎকারে মুখর হয়েছে টার্মিনাল। গাড়িটি পদ্মা হয়ে খুলনা যাবে। একজন চীনা নাগরিক সোহাগ বাসে খুলনায় যাবে। কাউন্টারে অপেক্ষা করছে। তিনি একটি গবেষণার কাজে খুলনা যাবেন।
রাজনৈতিক কর্মসূচি অবরোধের মধ্যে ঢাকা ছাড়ার ব্যাপারে তার কোন অনিশ্চয়তা কাজ করছে না বলে জানালেন সি ঊন। তিনি জানালেন, খবর নিয়েই এসেছি, পথে কোন সমস্যা হবে না। সাধারণ কর্ম দিবস, আর রাজনৈতিক অবরোধ কর্মসূচির মধ্যে খুব একটা পার্থক্য মনে হচ্ছে না।
এসপি ডিলাক্সের কোন গাড়ি সকালে ছেড়ে যাবে না। বাসের কাউন্টার মাস্টার রাজু আহমেদ জানালেন, সকালে কোন যাত্রী নেই। যাত্রী পেলে বিকেলে গাড়ি ছাড়বে। এসপি ডিলাক্স যাবে নড়াইল। যাত্রী কম হওয়ার কারণে বাড়া দ্বিগুন নেওয়ার অভিযোগ করে খুলনার যাত্রী মো. হাসান। তিনি বলেন, স্বাভাবিক ভাড়া ৫০০ টাকা হলেও এখন চায় ৮০০ টাকা। হাসান কয়েকটি কাউন্টার দেখে তারপর গাড়ির টিকেট কিনত চায়।
হাসানের অভিযোগের পুরোপুরি সত্যতা পাওয়া গেলো না। বিভিন্ন কাউন্টারে খোঁজ নিয়ে জানা গেলো অবরেধের কারণে কোন কোন বাসের ভাড়া বাড়ালেও হানিফ, শ্যামলী, সোহাগের মত ব্রান্ডের গাড়ির ভাড়া বাড়েনি। তুলনামূলক খারাপ মানের গাড়িগুলো বেশি ভাড়া নেওয়ার চেষ্টা করছে। ভাড়া বাড়ার কারণ হিসেবে জানানো হলো, যাত্রী কম, রাস্তায় ঝুঁকি বেশি, খরচ বেশি। এ কারণে কিছু ভাড়া বাড়ানো হয়েছে।
খুলনামুখী আরবি বাসের কলারম্যান আমিরুল ইসলাম জানান, অন্যদিনে আরবি বাসের টিকেটের মূল্য ৫০০ টাকা, অবরোধেও প্রায় একই ভাড়া নেওয়া হচ্ছে। যাত্রী কম হওয়ার কারণে খরচ বেড়ে যাওয়ায় একটু বেশি চাচ্ছি। শ্যামলী কাউন্টার মাস্টার সূর্যকান্ত ঘোষ জানান, আগের মতই ভাড়া নেওয়া হচ্ছে। দুপুরে ছাড়ে একটি গাড়ি। এরপর যাত্রী পেলে গাাড়ি ছেড়ে যাবে। অন্য দিন যেখানে সারা দেশে ৮০/৯০ টি গাড়ি ছেড়ে যায়। অবরোধের কারণে যাত্রী কম, দুপুর থেকে রাত অবধি ৮/১০টি গাড়ি ছাড়ার প্রস্তুতি আছে।
শ্যামলী ও হানিফ পরিবহন উত্তরাঞ্চলের সব জেলা, পশ্চিমাঞ্চলের কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর এবং দক্ষিণ অঞ্চলের যশোরে মুখী গাড়ি গুলো ছেড়ে যাচ্ছে। দূরপাল্লার গাড়ির সংখ্যা কম হলেও ঢাকা থেকে সাভার, নবীনগর মানিকগঞ্জ মুখী গাড়ির চলাচল স্বাভাবিক। রাজধানীর ভেতরেও যান চলাচল স্বাভাবিক। মিরপুর থেকে সব রুটের গাড়ি ছেড়েছে। মিরপুর-১০ গোলচক্কর, মিরপুর-১ গোল চক্কর, টেকনিকালে মোড় ও কল্যাণপুর বাসস্ট্যান্ডে গাড়ির জটলার সেই পুরানো চিত্র। চলছে যাত্রী টানার প্রতিযোগিতা। বেলা বাড়ার সাঙ্গে সাঙ্গে অফিস মুখে মানুষের ভীড় বাড়ছে, বাড়ছে প্রাণচাঞ্চল্য।