বিশেষ প্রতিনিধি :
কক্সবাজারের টেকনাফ স্থলবন্দর দিয়ে মিয়ানমারের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বন্ধ রয়েছে। ১৪ নভেম্বর থেকে মিয়ানমারের রাখাইনের মংডু শহর থেকে টেকনাফ স্থলবন্দরে কোনো পণ্য আসছে না। একইভাবে টেকনাফ থেকেও পণ্য মিয়ানমারে যাচ্ছে না। টেকনাফ স্থলবন্দর সংশ্লিষ্টরা বলছেন, রাখাইনে নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র গোষ্ঠীর সংঘর্ষের কারণে হঠাৎ আমদানি-রপ্তানি বন্ধ হয়ে পড়েছে।
টেকনাফ স্থলবন্দর সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে চলছে দেশটির নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান আর্মির (এএ) সংঘর্ষ। এ কারণে রাখাইনের জেলা শহর মংডু থেকে টেকনাফ স্থলবন্দরে পণ্য আসা বন্ধ হয়ে যায়। গেল সাত দিন ধরে এ বন্দরের আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম মূলত বন্ধই রয়েছে। এতে করে প্রতিদিন গড়ে তিন কোটি টাকার বেশি রাজস্ব আদায় থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সরকার। সর্বশেষ ১৩ নভেম্বর মিয়ানমারের আকিয়াব বন্দর থেকে ৪৭ টনের একটি হিমায়িত মাছের চালান টেকনাফে এসেছিল।
মিয়ানমারের মংডুর অবস্থান টেকনাফের উল্টো পাশে নাফ নদীর ওপারে। টেকনাফ স্থলবন্দর থেকে শহরটির দূরত্ব মাত্র পাঁচ কিলোমিটার। টেকনাফ-মংডু সীমান্ত বাণিজ্য অচল হয়ে পড়ায় বিপাকে পড়েছেন এ বন্দরকেন্দ্রীক ব্যবসায়ীরা।
টেকনাফ স্থলবন্দর পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান ইউনাইটেড ল্যান্ড পোর্ট লিমিটেডের মহাব্যবস্থাপক (হিসাব) মো. জসিম উদ্দিন চৌধুরী বলেন, দশদিন ধরে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম বন্ধ থাকলেও আগে আসা আদা, নারকেল, আচার, সুপারি, শুঁটকিসহ বিভিন্ন ধরণের পণ্য বিভাগীয় ও জেলা শহরে সরবরাহ করা হচ্ছে।
বুধবার (২২ নভেম্বর) সকালে সরেজমিনে টেকনাফ স্থলবন্দরে গিয়ে দেখা যায়, বন্দরের জেটি ফাঁকা পড়ে আছে। কোনো কার্গো ট্রলার বা জাহাজ নেই। কার্যক্রম না থাকায় বন্দরের কর্মরত শ্রমিকেরা অলস সময় পার করছেন। এদিকে, এ স্থলবন্দরকে কেন্দ্র করে টেকনাফ-কক্সবাজার আঞ্চলিক মহাসড়কের পাশে গড়ে উঠা অর্ধশতাধিক দোকানপাটও প্রায় বন্ধ রয়েছে। স্বাভাবিক সময়ে বন্দরের প্রধান ফটকে ট্রাক ও কাভার্ড ভ্যানের জটলা দেখা গেলেও ওই সময় কোনো যানবাহন চোখে পড়েনি। নাফ নদীতেও নেই পণ্যবোঝাই ট্রলার-জাহাজ। তবে বন্দরের খোলা জায়গা ও ওয়্যারহাউসে মিয়ানমার থেকে আগে আসা বিভিন্ন ধরণের কাঠ, আদা, শুঁকনা সুপারি, শুঁটকি, নারিকেল, আচারসহ বিভিন্ন ধরণের পণ্য মজুত রয়েছে।
টেকনাফ স্থলবন্দরের সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আমিনুর রহমান বলেন, মিয়ানমারের ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে শুনেছি, তাদের অভ্যন্তরীণ সমস্যার কারণে পণ্য আমদানি-রপ্তানি বন্ধ রয়েছে। কবে নাগাদ চালু হবে তাও বলা যাচ্ছে না। এতে করে স্থানীয় ব্যবসায়ীরা নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।
বন্দরকেন্দ্রীক ব্যবসায়ী ও কক্সবাজার জেলা প্রেসক্লাবের নির্বাহী সদস্য শাকের বিন ফয়েজ বলেন, ১৩ নভেম্বর মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের আকিয়াব শহরে কারফিউ জারি করা হয়েছে। দেশটির বিভিন্ন জায়গায় সামরিক বাহিনীর সঙ্গে ও ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর সংঘর্ষ চলছে। দেশটির স্থানীয় প্রশাসন আকিয়াব শহরের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রাত সাড়ে ৮টার মধ্যে বন্ধের নির্দেশ দিয়েছে। এর ফলে টেকনাফ স্থলবন্দর দিয়ে পণ্য আমদানি-রপ্তানি বন্ধ রয়েছে। এতে করে ব্যবসায়ীরা দারুণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। পাশাপাশি সরকারও কোটি কোটি টাকার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। গত দশদিনে সরকার অন্তত ৩০ কোটি টাকা রাজস্ব বঞ্চিত হয়েছে বলে দাবি এই ব্যবসায়ীর।
স্থলবন্দরের শ্রমিকনেতা আলি আজগর মাঝি বলেন, বন্দরে মালামাল উঠা নামার কাজের জন্য ছয় শতাধিক শ্রমিক রয়েছে। টানা দশদিন কাজ বন্ধ থাকায় বিপাকে পড়েছেন এসব শ্রমিক। আয় না থাকায় অনেকের ঘরে চুলা জ্বলছে না।
মিয়ানমার থেকে হিমায়িত মাছ আমদানিকারক এম কায়সার বলেন, হঠাৎ করে আমদানি-রপ্তানি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় মিয়ানমারে বাংলাদেশের ব্যবসায়ীদের বেশ কিছু পণ্য আটকা পড়েছে। তার মধ্যে রয়েছে হিমায়িত মাছসহ পঁচনশীল নানা পণ্য। এসব পণ্য নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে আনতে না পারলে বাংলাদেশি ব্যবসায়ীদের লোকসানের মুখে পড়তে হবে।