ই-পেপার | শনিবার , ২৯শে জুন, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

বিশ্বের নবম বৃহৎ বাজার হবে বাংলাদেশ

নিজস্ব প্রতিবেদক , ঢাকা :

আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে বাংলাদেশ বিশ্বের নবম বৃহত্তম ভোক্তা বাজারে পরিণত হবে। যুক্তরাজ্য এবং জার্মানির মত প্রতিষ্ঠিত বাজারগুলোকে এবং বর্তমান উচ্চ-প্রবৃদ্ধির দেশ ভিয়েতনাম বা থাইল্যান্ডকেও বাংলাদেশ যাতে ছাড়িয়ে যেতে পারে সে লক্ষ্য নিয়েই বাংলাদেশ কাজ করছে। ২০৩১ সালের মধ্যে একটি উচ্চ মধ্য-আয়ের দেশ এবং ২০৪১ সালের মধ্যে একটি উন্নত-সমৃদ্ধ দেশে রূপান্তরিত হওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে বাংলাদেশ। আর ২০৪০ সালের মধ্যে আনুমানিক মাথাপিছু জিডিপি দাঁড়াবে ৫ হাজার ৮৮০ মার্কিন ডলার। কৌশলগত ভৌগলিক অবস্থানের কারণে বাংলাদেশ ৩০০ কোটি মানুষের আঞ্চলিক বাজারের কেন্দ্রস্থলে পরিণত হতে পারে।

২০৩১ সালের মধ্যে জিডিপিতে বেসরকারি বিনিয়োগের অনুপাত ৩১ দশমিক ৪৩ শতাংশে উন্নীত করার পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের। ২০২৫ সালের মধ্যে কেবল লজিস্টিকস খাতই ৯০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বাজারে পরিণত হবে। বাংলাদেশে এখন জ্বালানি, পানি, লজিস্টিকস এবং পরিবহন খাতে ৩৫০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের অবকাঠামো গড়ার সুযোগ রয়েছে এবং ২০২৫ সাল নাগাদ বাংলাদেশে ক্রমবর্ধমান মধ্যবিত্ত ও ধনীক শ্রেণির সংখ্যা হবে ৩ কোটি ৪০ লাখে।

সরকারের নানা পদক্ষেপের সাথে সাথে বাংলাদেশকে ঘিরে আরো কিছু ভবিষ্যৎ সম্ভাবনার কথা তুলে ধরে ফিকি’র সদস্যদের সেই অনুযায়ী বৈদেশিক বিনিয়োগ আকৃষ্ট করার অনুরোধ করেছেনন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। একইসাথে তিনি বাংলাদেশ নিয়ে তার ভিশনের কথা জানিয়েছেন।

বাংলাদেশকে প্রবৃদ্ধির শিখরে পৌঁছাতে যেরকম অবকাঠামোগত উন্নয়ন প্রয়োজন বর্তমান সরকার সেই কাজ ইতিমধ্যে করে দিয়েছে। যোগাযোগ ব্যবস্থা, জ্বালানি বিদ্যুৎ, দক্ষ শ্রমিক, শিক্ষিত জনগণ সবদিকেই বাংলাদেশ ব্যাপক উন্নতি করেছে। এখন এসব অবকাঠামো নিয়ে ভবিষ্যতে বাংলাদেশকে কোথায় পৌঁছাতে চান সেই কর্মপরিকল্পনাও তুলে ধরা হয়েছে বৈদেশিক বিনিয়োগ আনয়নকারী এই সংগঠনের সদস্যদের সামনে। সব মিলিয়ে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, কাঠামোগত উন্নয়ন কর্মসূচি, বিনিয়োগবান্ধব নীতি, বৃহৎ অভ্যন্তরীণ বাজার অনেক দেশের কাছে বিনিয়োগ, শিল্পায়ন এবং রপ্তানির জন্য একটি আকর্ষণীয় গন্তব্যে পরিণত হয়েছে।

জানতে চাইলে ফরেন ইনভেস্টরস চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রির(ফিকি) নির্বাহী পরিচালক টি আই এম নুরুল কবির বলেন, ‘দেখেন আমরা বাংলাদেশে বিনিয়োগ আনতে সব ধরণের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। আপনার লক্ষ্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী তার বক্তব্যে সেই কথা তুলেও ধরেছেন। প্রধানমন্ত্রী বাংরাদেশের অবকাঠামোগত উন্নয়নের কথা তুলে ধরে বলেছেন, ইতিমধ্যে সবকিছু তৈরি করে দেওয়া হয়েছে, এখন আপনার বিনিযোগ আনেন। আমরা প্রধানমন্ত্রীর এই আহবানকে খুবই গুরুত্ত্বের সঙ্গে নিয়েছি এবং বাংলাদেশে আরও বিদেশি বিনিয়োগ নিয়ে আসতে আমরা সব রকম চেষ্টা অব্যাহত রেখেছি। আশা করি আমরা তাতে সফল হবো এবং বাংলাদেশ তার অভিষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছতে পারবে। অদূর ভবিষ্যতে বাঙরাদেশই সবচেয়ে বড় কর্মসংস্থানের জায়গা।’

নুরুল কবির বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী যে বলেছেন, বাংলাদেশ হবে ৩০০ কোটি মানুষের আঞ্চলিক বাজারের কেন্দ্রস্থল। আমরা মনে করি, ফিকি এই কেন্দ্রস্থলে পরিণত কেরতে বড় ভূমিকা রাখবে।’

বাংলাদেশে ফিকি’র যত অবদান
বাংলাদেশের ফরেন ইনভেস্টরস চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রি(ফিকি) সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়তে রূপরেখা ও পরিকল্পনা প্রণয়নের সাথে সাথে বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করবার জন্য বাংলাদেশ সরকারকে সহযোগিতা করে। ১৯৬৩ সালে প্রতিষ্ঠিত হবার পর ৬০ বছরে ফিকি ৩৫ টি দেশের বিনিয়োগ বাংলাদেশের ২১ টি সেক্টরে আনতে সহায়তা করেছে। বাংলাদেশে বৈদেশিক বিনিয়োগের প্রায় ৯০শতাংশ এসেছে ফিকি’র মাধ্যমে।
ইতিমধ্যে ফিকি বাংলাদেশে বৈদেশিক বিনিয়োগ আনার পাশাপাশি সেসব বৈদেশিক বিনিয়োগ যে সঠিক ভাবে সঠিক ক্ষেত্রে ব্যবহার হয় এবং সার্বিকভাবে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে তা অবদান রাখে তা নিশ্চিত করে।

ইতিমধ্যে ফিকির মাধ্যমে যেসব বৈদশিক বিনিয়োগ বাংলাদেশে এসেছে তারমধ্যে বাংলাদেশের গ্যাস অনুসন্ধানের ৮০শতাংশই এসেছে ফিকি’র মাধ্যমে। ৫০ লক্ষ লোকের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে ফিকি’র আনা বৈদেশিক বিনিয়োগের কারণে। বাংলাদেশের শেয়ার মার্কেটে ২০শতাংশ বিনিয়োগের পিছনে ফিকি’র অবদান রয়েছে।

ফিকি’র মাধ্যমে দেশের ৩১টি জেলায় ৩ লক্ষ মানুষের জন্য নিরাপদ খাবার পানির সংস্থান করতে ১০২ টি পানি শোধন প্ল্যান্ট তৈরি করা হয়েছে। যার মাধ্যমে প্রতিদিন ৫ লক্ষ ৩০ হাজার লিটার নিরাপদ পানি সরবরাহ করা হচ্ছে। ২৯টি গ্রামে ২ হাজার ৫৯০ টি সৌর বিদ্যুৎ প্ল্যান্ট স্থাপন করেছে ফিকি। এতে পার্বত্য এলাকায় ১৩০০০ মানুষ বিদ্যুৎ সুবিধা পাচ্ছেন। সারা দেশে ৭৫ টি শিক্ষা কেন্দ্রের মাধ্যমে ৩ হাজার শিক্ষার্থীকে পাঠদান করছে ফিকি। চার হাজার শারীরিক প্রতিবন্ধীর জন্য কর্মসংস্থানের সৃষ্টি করাসহ ২১টি সেক্টরে ফিকি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করে। এসব সেক্টরের মধ্যে রয়েছে- ব্যাংকিং এন্ড ফাইন্যান্স খাত, সিমেন্ট ও সিরামিক খাত,ক্যামিক্যাল ,কন্সট্রাকশন এন্ড রিয়েল এস্টেট সেক্টর, ফার্টিলাইজার এন্ড এগ্রিকালচার, সফটওয়্যার ও টেলি কমিউনিকেশন, পাওয়ার এন্ড এনার্জি সেক্টর,চামড়াজাত পণ্য, রেডিমেড গার্মেন্টস,শিপিং এবং চা শিল্প।