নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
যেসব বিদেশি নির্বাচন নিয়ে কথাবার্তা বলেন, তাদের একটি রাজনৈতিক দল গঠন করার পরামর্শ দিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন।রোববার (১৯ নভেম্বর) পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এসব কথা বলেন। এর আগে স্কটল্যান্ডের প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠক করেন মন্ত্রী।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, যেসব বিদেশি নির্বাচন নিয়ে কথাবার্তা বলেন, তারা একটি রাজনৈতিক দল গঠন করুন, এটা হচ্ছে দ্য অ্যাম্বাসেডর পার্টি বা অন্যকিছু। আর একটা অঙ্গীকার করুন। যারা তাদের ভোট দেবে, তাদের নিজেদের দেশের নাগরিক করে নিয়ে যাবেন। দেখবেন, অনেকেই তাদের ভোট দেবে। তাদের সেই নিশ্চয়তা দেওয়া উচিত, যারা তাদের ভোট দেবে, তাদের নিজ দেশের নাগরিক করে নেবেন।
যারা শ্রমিকদের অধিকার হরণ করবে, তাদের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হবে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, তারা নিষেধাজ্ঞার দেশ, তারা দিতে পারে, তারা বড়লোক। আমরা আমাদের মতো কাজ করবো। আমাদের বাস্তবতার নিরীখে কাজ করবো। আমরা-তো একদিনে আমেরিকা হতে পারবো না। আমাদের ইচ্ছা, তাদের মতো ভালো করবো। তবে সত্যি একদিনে পারবো না। আর তারা যাদের টাকা দিয়ে রাখেন, তারা মনে করেন, একদিনে তারা আমেরিকা হয়ে যাবে। আমেরিকার এই অবস্থায় আসতে ২৫০ বছর সময় লেগেছে। আমেরিকায় শ্রমিকরা একসময় দাস ছিল। তাদের দাসত্ব বহু বছর ধরে ছিল। মাত্র ১৮৮২ খ্রিস্টাব্দে দাসত্বটা আব্রাহাম লিংকনের কারণে বাদ পড়েছে। এটা বাদ পড়ায় আমেরিকায় গৃহযুদ্ধ হয়েছে। তবে দাসত্ব বাদ দেওয়ায় আব্রাহাম লিংকনকে আমি অভিনন্দন জানাই।
মন্ত্রী বলেন, ১৯ শতকের শুরুতে আমেরিকার শ্রমিককে ১৮ ঘণ্টার মতো কাজ করতো ২০ সেন্ট মজুরিতে। আমেরিকার উন্নয়নের কথা আমরা জানি। কেমন অত্যাচারিত হয়েছে সেখানকার শ্রমিকরা। কিন্তু আমাদের এখানের শ্রমিকরা আমেরিকার তুলনায় অনেক ভালো। আমেরিকায় জনপ্রতি আয় প্রায় ৬৫ হাজার ডলার। আর আমাদের দেশে ২ হাজার ৮০০ ডলার। সে তুলনায় আমাদের দেশের শ্রমিকরা অনেক ভালো আছে। আমেরিকায় মাত্র কয়েকদিন আগে নারীরা ভোট দেওয়ার অধিকার পেয়েছে। সেখানকার কৃষ্ণাঙ্গরা বাসে উঠতে পারতেন না। আমরা মার্টিন লুথার কিংয়ের কথা জানি।
ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাসকে হুমকি দেওয়া নিয়ে ম্যাথু মিলার কথা বলেছেন। এ বিষয়ে তিনি বলেন, আমরা বলা উচিত না। কিন্তু আপনি যদি রাজনীতিবিদ হন, তাহলে একদল না-একদল আপনাকে নিয়ে বক্তব্য দেবেই। আর রাজনীতি থেকে সরে থাকলে কেউ আপনাকে নিয়ে তিরস্কার করবে না। আর কে কী বলেছে, সে তথ্যপ্রমাণ আমাদের দেননি। আমাদের প্রমাণ দরকার।
মন্ত্রী আরও বলেন, আমাদের দেশে আমরা মুক্তচিন্তা, বাকস্বাধীনতায় বিশ্বাস করি। এগুলো আমরা কারও মুখে আঠা দিয়ে বন্ধ করে দিতে পারি না। তবে কেউ গর্হিত কাজ করলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আমরা সব কূটনীতিকদের নিরাপত্তার নিশ্চয়তা দিচ্ছি। আমরা ভিয়েনা কনভেনশন অক্ষরে অক্ষরে পালন করি। কাজেই বন্ধু দেশগুলোকেও তা মেনে চলার অনুরোধ করবো। ভিয়েনা কনভেনশন লঙ্ঘন করে আপনারা বড় বড় কথা বলবেন না।
এসময় হাসতে হাসতে বলেন মন্ত্রী বলেন, দুনিয়ার এত দেশে নির্বাচন হয়, তাতে আমেরিকা মাথা ঘামায় না। আর আপনাদের (সাংবাদিক) কারণে আমেরিকা প্রতিদিন আমাদের নির্বাচন নিয়ে মাথা ঘামায়। আপনারা আমেরিকাকে বাংলাদেশের রাজনীতিতে ডেকে নিয়েছেন।