ই-পেপার | সোমবার , ১লা জুলাই, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

স্বপ্নের মাতারবাড়ি, গভীর সমুদ্রবন্দরের যুগে বাংলাদেশ

বিশেষ প্রতিবেদক :

আজ মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্রবন্দরের চ্যানেল উদ্বোধন এবং প্রথম টার্মিনাল নির্মাণ কাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর ফলে বহুল প্রতীক্ষিত গভীর সমুদ্র বন্দরের যুগে প্রবেশ করছে বাংলাদেশ। কক্সবাজার জেলার মহেশখালীর মাতারবাড়িতে দেশের প্রথম গভীর সমুদ্র বন্দরের প্রথম টার্মিনালের নির্মাণ কাজ শুরু হতে যাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শনিবার (১১ নভেম্বর) মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্র বন্দর চ্যানেল উদ্বোধন এবং প্রথম টার্মিনাল নির্মাণ কাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করবেন।

মাতারবাড়ি বন্দর বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য গেম চেঞ্জারের ভূমিকা পালন করবে। এই বন্দরে জোয়ার-ভাটায় যেকোন সময়ে ৮ হাজার টিইইউএস কনটেইনারবাহী জাহাজ ভিড়তে পারবে। একসাথে বড় জাহাজে বেশি পরিমাণ কনটেইনার আসার ফলে পণ্য পরিবহন খরচ উল্লেখযোগ্য হারে কমে আসবে। বন্দরকে ঘিরে মাতারবাড়ি মহেশখালী এলাকায় ব্যাপক শিল্পায়নসহ গড়ে উঠবে অর্থনৈতিক অঞ্চল। ফলে সৃষ্টি হবে ব্যাপক কর্মসংস্থানের।

দক্ষ ও অদক্ষ শ্রমিকসহ পেশাজীবীদের জীবিকার সুযোগ সৃষ্টি হবে। দেশের বেকার সমস্যার সমাধানের ক্ষেত্রে এই বন্দর ইতিবাচক প্রভাব বিস্তার করবে। বন্দরকে ঘিরে যে লজিস্টিকস ও সাপ্লাইচেইন ম্যানেজমেন্টের অবকাঠামো গড়ে উঠবে ও ব্যবসা-বাণিজ্যের সুযোগ সৃষ্টি তা বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। বন্দরকে কেন্দ্র করে মাতারবাড়ি মহেশখালী এলাকায় যে নগরায়ন হবে তা উক্ত এলাকাকে দক্ষিণ এশিয়ার সিঙ্গাপুরে পরিণত করবে। মাতারবাড়ি বন্দরকে ঘিরে যে ব্যাপক অর্থনৈতিক কর্মযজ্ঞ আবর্তিত হবে তা বাংলাদেশের অর্থনীতি তথা জিডিপিতে ২ থেকে ৩ শতাংশ অবদান রাখবে বলে আশা করা যায়।

 

২০২৬ সালে মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্র বন্দরের অপারেশনাল কার্যক্রম শুরু করার পরিকল্পনা রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ২০৪১ সাল নাগাদ উন্নত ও স্মার্ট বাংলাদেশ বর্তমানের স্মার্ট দেশ সিঙ্গাপুরকে ছাড়িয়ে যাবে। মাতারবাড়ি বন্দর বাণিজ্যিক হাব হবে। চট্টগ্রাম বন্দর যেমন অর্থনীতির লাইফ লাইন, তেমনি মাতারবাড়ি বন্দরও হবে প্যারালাল অর্থনীতির লাইফ লাইন।

 

উল্লেখ্য, দেশের প্রথম ও একমাত্র গভীর সমুদ্র বন্দর স্থাপনের জন্য ১৭ হাজার ৭৭৭ কোটি ২০ লাখ টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ে মাতারবাড়ি বন্দর উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। মাতারবাড়ি টার্মিনাল বাস্তবায়িত হলে ১৬ মিটারের অধিক গভীরতা সম্পন্ন বাণিজ্যিক জাহাজ গমনাগমন করতে সক্ষম হবে, যা দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতিতে মাইলস্টোন হিসেবে কাজ করবে। এখানে বড় ধরনের ফিডার ভেসেল আসবে। অর্থ ও সময় বাঁচবে। অর্থনীতিতে সুপ্রভাব ফেলবে। গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণের লক্ষ্যে ৩৫০ মিটার প্রশস্ত ও ১৬ মিটার গভীরতা সম্পন্ন ১৪ দশমিক ৩০ কিলোমিটার দীর্ঘ অ্যাপ্রোচ চ্যানেলের নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। এছাড়া অ্যাপ্রোচ চ্যানেলের উত্তর পার্শ্বে ২ হাজার ১৫০ মিটার দীর্ঘ ও দক্ষিণ পার্শ্বে ৬৭০ মিটার দীর্ঘ ব্রেক ওয়াটার (ঢেউ নিরোধক বাঁধ) নির্মাণ কাজ সমাপ্ত হয়েছে। ২০২৬ সালের মধ্যে আনুমানিক শূন্য দশমিক ৬ থেকে ১ দশমিক ১ মিলিয়ন টিইইউস (বিশ ফুট দৈর্ঘ্যের কনটেইনার) এবং ২০৪১ সালের মধ্যে আনুমানিক ২ দশমিক ২ হতে ২ দশিমক ৬ মিলিয়ন টিইইউস কনটেইনার কার্গো হ্যান্ডেল করা সম্ভব হবে। প্রকল্পের সড়ক ও জনপথ অংশে ২৭ দশমিক ৭ কিলোমিটার সড়ক নির্মাণের মাধ্যমে মাতারবাড়ি বন্দরের সাথে ন্যাশনাল হাইওয়ের সংযোগ স্থাপন করার কাজ চলমান।