ই-পেপার | শুক্রবার , ২২শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

পুলিশের গুলিতে নারী পোশাক শ্রমিক নিহত

নিজস্ব প্রতিবেদক, গাজীপুর :

পোশাক শ্রমিকদের বেতন বৃদ্ধির পরও গাজীপুরে শ্রমিক বিক্ষোভ অব্যাহত আছে। বুধবার সকালে গাজীপুর মহানগরীর কোনাবাড়ী ও জরুনসহ বিভিন্ন এলাকায় পুলিশের সঙ্গে পোশাক শ্রমিকদের সংঘর্ষ হয়েছে। এ সময় পুলিশের গুলিতে আঞ্জুয়ারা খাতুন (২৮) নামে এক নারী শ্রমিক নিহত হয়েছেন। সকাল সাড়ে ৮টার দিকে কোনাবাড়ি জরুন চার রাস্তার মোড়ে এই ঘটনা ঘটে। মুমূর্ষু অবস্থায় আঞ্জুয়ারাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে আসলে চিকিৎসক বেলা সোয়া ১২ টার দিকে তাকে মৃত ঘোষণা করেন। একই ঘটনায় জামাল উদ্দিন (৪৮) নামে গুলিবিদ্ধ একজনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

 

 

জানা গেছে, বুধবার সকালে গাজীপুর মহানগরীর কোনাবাড়ী ও জরুনসহ বিভিন্ন এলাকায় পোশাক শ্রমিকদের বিক্ষোভ, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে। এ সময় পুলিশ বিক্ষুব্ধ শ্রমিকদের মহাসড়কে উঠতে বাধা প্রদান করে। এক পর্যায়ে শ্রমিকরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করলে পুলিশ রাবার বুলেট, সাউন্ড গ্রেনেড ও টিয়ারসেল নিক্ষেপ করে শ্রমিকদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এ ঘটনায় অন্তত ১০ শ্রমিক আহত এবং এক নারী শ্রমিক নিহত হয়েছে। আহতরা শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং স্থানীয় বিভিন্ন ক্লিনিকে চিকিৎসা নিয়েছে। গুরুতর আহত দুই শ্রমিককে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

 

 

নিহত ওই নারী শ্রমিক মোসা. আঞ্জুয়ারা খাতুন কোনাবাড়ি জরুন এলাকার ইসলাম গার্মেন্টস-২ এর সেলাই মেশিন অপারেটর পদে চাকরি করতেন। তার বাড়ি সিরাজগঞ্জ জেলার কাজীপুর থানার চরগিরিশ এলাকায়। নিহতের স্বামী জামাল হোসেন ও ভাই মোস্তফা বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তবে কোনাবাড়ি থানার অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার খায়রুল আলম বলেন নারী শ্রমিক নিহতের বিষয়টি এখনো নিশ্চিত নয়। তবে গুরুত্বর আহত অবস্থায় তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। তিনি পদদলিত হয়ে না কি অন্য কোনভাবে আহত হয়েছেন তা জানা যায়নি। গাজীপুর মেট্রোপলিটনের কোনাবাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) একেএম আশরাফ উদ্দিন জানান, শ্রমিকরা আঞ্চলিক সড়কগুলোতে আগুন জ্বালিয়ে অবরোধ সৃষ্টি করে। এছাড়া ভাংচুরের চেষ্টা করে। শ্রমিকদের মহাসড়কে নামতে দেওয়া হয়নি। পরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে টিয়ারসেল ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করা হয়। বর্তমানে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে।

 

পুলিশ, শ্রমিক ও এলাকাবাসী জানায়, দীর্ঘদিন ধরে গাজীপুরের বিভিন্ন এলাকায় বেতন বৃদ্ধির দাবিতে পোশাক কারখানার শ্রমিকরা বিক্ষোভ করে আসছিল। এরপর গতকাল ৭ নভেম্বর পোশাক শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি সাড়ে ১২ হাজার টাকা নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু এতে সন্তুষ্ট না শ্রমিকরা। ফলে বুধবার সকাল থেকে গাজীপুরের কোনাবাড়ী, জরুন ও বাইমাইলসহ বিভিন্ন এলাকায় শ্রমিকরা বিক্ষোভ শুরু করে। এক পর্যায়ে শ্রমিকরা বিভিন্ন সড়ক অবরোধ করে কাঠ ও টায়ারে আগুন ধরিয়ে দেয়। এছাড়া বিভিন্ন যানবাহন ভাংচুরের চেষ্টা করে। শ্রমিকরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট পাটকেল নিক্ষেপ করে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ টিয়ারসেল ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে শ্রমিকদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। সর্বশেষ সকাল সাড়ে ৯টা পর্যন্ত শ্রমিক-পুলিশের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া চলে।

 

 

সিএনএন বাংলা২৪