ই-পেপার | সোমবার , ১লা জুলাই, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

পটিয়া মাদরাসার উদ্ভুত পরিস্থিতিতে আল্লামা সুলতান যওক নদভীর বিবৃতি

বিশেষ সংবাদদাতা, চট্টগ্রাম :

দেশের শীর্ষ আরবি বিশ্ববিদ্যালয় জামেয়া ইসলামিয়া আরবিয়া (পটিয়া মাদরাসা) এর সাম্প্রতিক পরিস্থিতিতে একটি বিবৃতি দিয়েছেন মাদরাসাটির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম শূরা কমিটির চেয়ারম্যান ও জামেয়া দারুল মা’আরিফের মহাপরিচালক আল্লামা সুলতান যওক নদভী।

 

বিবৃতিতে তিনি বলেন, শূরার নামে যে বৈঠক করা হয়েছে তা সম্পূর্ণ অবৈধ ও অসাংবিধানিক, বৈঠকে যেসব সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে সেগুলোও সর্বোতভাবে অবৈধ ও অগ্রহণযোগ্য, উল্কানিদাতাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে এবং মাওলানা ওবাইদুল্লাহ হামযার বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগমালার নিরপেক্ষ তদন্তের জন্যে একটি তদন্ত করা হবে। বিবৃতিটি হুবহু তুলে ধরা হলো: বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম । অবগতিপত্র আল-জামিয়া আল-ইসলামিয়া পটিয়ার সম্মানিত শুভানুধ্যায়ীবৃন্দ,আসসালামু আলাইকুম ওয়ারাহমাতুল্লাহ।

 

আপনাদের সদয় অবগতির জন্যে অত্যন্ত ভারাক্রান্ত হৃদয়ে ক’টি কথা লিখতে বাধ্য হলাম। আপনারা সকলেই জানেন যে, আল-জামিয়া আল-ইসলামিয়া পটিয়া উপমহাদেশের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ইসলামি বিদ্যাপীঠ। বিশ্বব্যাপি এর খ্যাতি ও সুনাম রয়েছে। আমি এই প্রতিষ্ঠানেরই সন্তান। মাদরাসার প্রতিষ্ঠাতা কুতুবে জামান হযরত মুফতী আযীযুল হক (রহ.) প্রথম শিক্ষক ও প্রথম শাইখুল হাদিস আল্লামা আহমদ (ইমাম সাহেব হুজুর (রহ.), শাইখুল আরব ওয়াল আজম হযরত আলহাজ মাওলানা মুহাম্মদ ইউনুস (রহ), হযরত মাওলানা উবাইদুর রহমান (নায়েব সাহেব হুজুর (রহ.), হযরত বোয়ালভী সাহেব (রহ.), হযরত গাজী সাহেব (রহ.), হযরত মীর সাহেব হুজুর (রহ.) ও হযরত কদীম সাহেব হুজুর (রহ.) সহ আকাবির আসাতিজার স্নেহ-মমতায় আমার জীবন গর্বিত ও হৃদয়জগত আলোকিত। বাল্যকাল থেকেই এ প্রতিষ্ঠানের সাথে আমার নাড়ীর সম্পর্ক রয়েছে। যা এখনো পর্যন্ত অবিচল। অনুরূপ মরহুম আসাতিযায়ে কিরামের ফ্যামিলি সদস্যদের প্রতি আমার আন্তরিক ভালোবাসা ও স্নেহ-মমতা বিদ্যমান। পটিয়া মাদরাসার ধূলিকণার সাথে আমার হাজারো স্মৃতি অম্লান ।

প্রিয় ভাই ও বন্ধুরা,
সম্প্রতি ঘটে যাওয়া ঘটনাপ্রবাহ পটিয়া মাদরাসার গর্ব করার মতো ইতিহাসে এক কলঙ্কজনক অধ্যায় হিসেবে সংযোজিত হলো। এর জন্যে যারাই দায়ী, আল্লাহপাক তাদের বিচার করুন। আমি যেহেতু আঞ্জুমানে ইত্তেহাদুল মাদারিসের সভাপতি, মাদরাসার প্রধান পৃষ্ঠপোষক ও পদাধিকারবলে শূরা কমিটির স্থায়ী সভাপতি, সেহেতু দেশ-বিদেশের অনেক হিতাকাঙ্ক্ষী জানতে চান, এই ক্রান্তিলগ্নে আমার অবস্থান কী? কিন্তু ঘটনার আকস্মিকতা ও অমানবিকতা আমাকে কিংকর্তব্যবিমূঢ় ও বাকরুদ্ধ করেছিলো। কিছু বলার শক্তি ও ভাষা আমার ছিলো না, বিধায় কাউকে কিছু বলতে ও লিখতে পারিনি। আজ নিজেকে সামলে নিয়ে আমার অবস্থান ব্যক্ত করার প্রয়াস পাচ্ছি। আমি সবসময় সুলহ্-সন্ধিকেই গুরুত্ব দিয়ে থাকি। মুহতামিম মাওলানা ওবাইদুল্লাহ হামযার বিরুদ্ধে উত্থাপিত অনলাইনে ভাইরাল নানা অভিযোগের প্রেক্ষিতে শূরার জরুরি বৈঠক বসার প্রস্তুতি চলছিলো। কিন্তু নানা প্রতিকূলতার কারণে সময় নির্ধারণ করা যায়নি।

 

বিগত ২৮ অক্টোবর, শনিবার দিবাগত রাতে কতিপয় সিনিয়র শিক্ষকের উস্কানি ও আশ্রয়-প্রশ্রয়ে একদল সশস্ত্র বহিরাগত সন্ত্রাসী জামেয়ায় যে তাণ্ডব চালিয়েছে, মুহতামিম মাওলানা ওবাইদুল্লাহ হামযাকে অমানবিক পন্থায় হেনস্থা করে তাদের লিখিত তথাকথিত ইস্তফানামায় জোরপূর্বক দস্তখত নিয়ে রাতের অন্ধকারে জামেয়া থেকে বের করে দিয়েছে, তা ইতোমধ্যে আপনারা বিভিন্ন সূত্রে জানতে পেরেছেন নিশ্চয়ই। এরপর ২৯ অক্টোবর, রোববার বাদে মাগরিব শূরার নামে যে বৈঠক করা হয়েছে তা সম্পূর্ণ অবৈধ ও অসাংবিধানিক। উক্ত বৈঠকে যেসব সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে সেগুলোও সর্বোতভাবে অবৈধ ও অগ্রহণযোগ্য। কেননা, ১. ইত্তেহাদের সংবিধান অনুযায়ী (ধারা নং: ৯/জ) শূরার স্থায়ী সভাপতি তথা ইত্তেহাদের সভাপতি মহোদয়ের অনুমোদনক্রমে শূরা ডাকার একমাত্র অধিকার রয়েছে মুহতামিম সাহেবের। ২. হযরত বোখারী সাহেব (রহ.) এর আমলে গঠিত সর্বশেষ শূরা কমিটিতে হযরত মাওলানা মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী ও হাটহাজারীর কারো নাম নেই বিধায় তাদেরকে শূরার সদস্য আখ্যায়িত করা যায় না। তাছাড়া তিনজন ছাড়া ওই বৈঠকে শূরার অন্য কোনো সদস্য উপস্থিত হননি। ৩. সন্ত্রাসীবেষ্ঠিত অবৈধ বৈঠকে ওবাইদুল্লাহ হামযার কথিত ইস্তফানামা গ্রহণ ও পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট পরিচালনা পর্ষদ গঠন দুটোই অবৈধ।

সম্মানিত সুধীমণ্ডলী,
পটিয়া মাদরাসায় কর্মরত সকল কর্মকর্তা ও শিক্ষকমণ্ডলীর সাথে আমার সুসম্পর্ক রয়েছে। কারো সাথে বৈরিতা যেমন নেই, তেমনি কারো প্রতি বিশেষ আকর্ষণও নেই। তবে সন্ত্রাসীদের লেলিয়ে দিয়ে মাওলানা ওবাইদুল্লাহ হামযার প্রতি যে অন্যায় করা হয়েছে এবং যে ক্ষতি সাধন করা হয়েছে, সুষ্ঠু তদন্তসাপেক্ষে এর বিচার হওয়া জরুরি। অনুরূপ উল্কানিদাতা শিক্ষকবৃন্দের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া ও মাওলানা ওবাইদুল্লাহ হামযার বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগমালার নিরপেক্ষ তদন্তের জন্যে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করাও জরুরি; যাতে কিছুটা হলেও মাদরাসার দুর্নাম ঘুছে যায়। এই লক্ষ্যে অচিরেই শূরার বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে, ইনশাআল্লাহ।  (আল্লামা) সুলতান যওক নদভী।