ভয়েস কল, এসএমএস ও ইন্টারনেট সেবা প্রদানে মোবাইল অপারেটরদের ব্যয় এবং প্যাকেজ সংখ্যা সর্ম্পকে ইতোমধ্যে যাচাইবাছাই করছে বিটিআরসি। সকলের মতামত নিয়ে একটি ফলপ্রসূ ও গ্রাহকবান্ধব সিদ্ধান্তে পৌঁছানোর লক্ষ্যে কাজ করছে সংস্থাটি।
মঙ্গলবার (৩০ মে) বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) প্রধান সম্মেলন কক্ষে এক মতবিনিময় সভায় এসব তথ্য জানান সংস্থাটির স্পেকট্রাম বিভাগের কমিশনার প্রকৌশলী শেখ রিয়াজ আহমেদ। মানসম্মত টেলিযোগাযোগ সেবা নিশ্চিতের লক্ষ্যে মোবাইল অপারেটরসমূহের প্যাকেজ এবং ডাটার মূল্য নিয়ে মতবিনিময় সভাটি অনুষ্ঠিত হয়।
তিনি জানান, অপারেটর ও গ্রাহক উভয়ের মতামত নিয়ে মোবাইল ইন্টারনেটের নিম্নসীমা ও প্যাকেজ সংখ্যার বিষয়ে শীঘ্রই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসবে।
বিটিআরসির ভাইস-চেয়ারম্যান প্রকৌশলী মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, গ্রাহকের মতামত পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে যাচাই করে আমরা একটি যৌক্তিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবো। প্রত্যন্ত অঞ্চলের ঘরে ঘরে মোবাইল ও ইন্টারনেট ব্যবহার হচ্ছে। দেশে ১৮ কোটির অধিক মোবাইল সংযোগ রয়েছে। তাই সকল গ্রাহক যেন উপকৃত হয় সে লক্ষ্যেই পরবর্তী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে।
ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (টেলিকম) মো. মাহবুব-উল-আলম বলেন, বিটিআরসির দায়িত্ব হলো নিরপেক্ষ ভূমিকায় থেকে অপারেটর ও গ্রাহক উভয়ের স্বার্থ বিবেচনায় নিয়ে যৌক্তিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা। ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটের ক্ষেত্রে ‘এক দেশ এক রেট’ যেভাবে প্রণয়ন করা হয়েছে তেমনিভাবে মোবাইল ইন্টারনেট সেবায় ‘এক দেশ এক রেট’ চালু করা দরকার। গ্রাহক সচেতন হলে মূল্য নির্ধারণ প্রয়োজন হবে না। প্রান্তিক পর্যায়ের মানুষ প্রযুক্তি সর্ম্পকে এখনো তেমন সচেতন নয়, তাই তাদের স্বার্থ বিবেচনায় ডাটার মূল্য ও মেয়াদ নির্ধারণ করতে হবে।
এ বিষয়ে গ্রামীণফোনের সিনিয়র ডিরেক্টর (কর্পোরেট অ্যাফেয়ার্স) হুসেইন সাদাত বলেন, অপারেটর ও গ্রাহকদের মতামত নিয়ে নিয়ন্ত্রক সংস্থা হিসেবে বিটিআরসির পক্ষে একটি যৌক্তিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা সম্ভব হবে।
রবির চিফ কর্পোরেট অ্যান্ড রেগুলেটরি অফিসার মোহাম্মদ সাহেদুল আলম বলেন, গ্রাহক চাহিদার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে অপারেটরদের প্যাকেজ নির্ধারণ করতে হয় বলেই ডাটা প্যাকেজ সংখ্যা বেশি মনে হয়। কর কমানো হলে ডাটার দাম কমানো সম্ভব হবে।
বাংলালিংকের চিফ কর্পোরেট অ্যান্ড রেগুলেটরি অ্যাফেয়ার্স অফিসার তাইমুর রহমান বলেন, বছর খানেক আগে ডাটা মূল্য নিয়ে বেশি আলোচনা হলেও বর্তমানে সেবার মান নিয়ে গ্রাহকরা প্রশ্ন তুলছেন বেশি। বিভিন্ন পর্যায়ে অপারেটরদের প্রচুর পরিচালন ব্যয় হওয়ায় ডাটার দাম চাইলেই কমানো সম্ভব হয় না।
সভায় বিটিআরসির সিস্টেমস অ্যান্ড সার্ভিসেস বিভাগের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. নাসিম পারভেজ তার উপস্থাপনায় প্যাকেজ সংখ্যা ও ডাটার মূল্যের উপরে অনলাইনে গ্রাহক জরিপের ফলাফল তুলে ধরেন। জরিপে ৫৪৯ জন অংশগ্রহণকারীর মধ্যে শিক্ষার্থী ৪৯.৫ ভাগ, চাকরিজীবী ২৯.১ ভাগ, ব্যবসায়ী ৯.৫ ভাগ, অন্যান্য পেশার ৬ ভাগ গ্রাহক ছিল।
একটি মোবাইল অপারেটর কর্তৃক সর্বোচ্চ কতগুলো অফার থাকা উচিত? এমন প্রশ্নের উত্তরে জরিপে অংশগ্রহণকারী ৫৪.৯ ভাগ ৪০-৪৫টি সর্বোচ্চ প্যাকেজ থাকা উচিত বলে মত দিয়েছেন। বাকী ২৩.২ ভাগ অংশগ্রহণকারী ৭১-৮৫টি প্যাকেজ এবং ১৪ ভাগ ৫১-৬০টি প্যাকেজের বিষয়ে মতামত প্রদান করেন।
ডাটা প্যাকেজের মেয়াদ কতদিন থাকা উচিত? এমন প্রশ্নের উত্তরে ৫২.২ ভাগ প্যাকেজের মেয়াদ ৭ দিন, ৩০ দিন ও আনলিমিটেড হওয়া উচিত বলে মতামত প্রদান করেন এবং ৪৪ ভাগ অংশগ্রহণকারী ৩/৭/১৫/৩০ দিন প্যাকেজের মেয়াদ থাকা উচিত বলে জানিয়েছেন।
ডাটা ক্যারি ফরওয়ার্ড (অব্যবহৃত ডাটা পরবর্তী প্যাকেজে যুক্ত হওয়া) কী রকম হওয়া উচিত? এমন প্রশ্নের উত্তরে ৮৭.৮ ভাগ মেয়াদকালের মধ্যে যেকোনো প্যাকেজ গ্রহণ করলেই নতুন প্যাকেজে অব্যবহৃত ডাটা যুক্ত হওয়া উচিত বলে মত দেন।
ডাটা মূল্যমান কী রকম হওয়া উচিত? এর উত্তরে ৫২.৮ ভাগ অংশগ্রহণকারী প্রতি জিবির মূল্য যে কোনো মেয়াদের জন্য একই রকম থাকা উচিত বলে মতামত প্রদান করেন। ২৭.২ ভাগ অংশগ্রহণকারী জানান প্রতি জিবি ডাটার মূল্য বিভিন্ন মেয়াদের জন্য ভিন্ন রকম থাকা উচিত এবং ১৯.৬ ভাগ স্বল্প মেয়াদের ডাটার দাম অধিক মেয়াদের ডাটার দাম অপেক্ষা কম থাকা উচিত বলে জানান।
প্রতি জিবির ডাটা সর্বোচ্চ মূল্য ও সর্বনিম্ন মূল্য কত থাকা উচিত? এমন প্রশ্নের জবাবে ৪৬ ভাগ অংশগ্রহণকারীরা জানান, প্রতি জিবির জন্য সবসময় একটি ফ্লোর (সর্বনিম্ন মূল্য) থাকা উচিত। ২০.৭ ভাগ মনে করেন ভিন্ন মেয়াদের ডাটার জন্য পৃথক সিলিং (সর্বোচ্চ মূল্য) ও ফ্লোর (সর্বনিম্ন মূল্য) থাকা উচিত। ১৭.১ ভাগ জানান প্রতি জিবির জন্য একটি ফ্লোর (সর্বনিম্ন মূল্য) ও একটি সিলিং (সর্বোচ্চ মূল্য) থাকা উচিত।
সভায় আরও বক্তব্য রাখেন টেলিটকের অ্যাডিশনাল জেনারেল ম্যানেজার (মার্কেটিং, সেলস অ্যান্ড ডিসট্রিবিউশন) সাইফুর রহমান খান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. মইনুল জাবের, অ্যামটবের মহাসচিব ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এস এম ফরহাদ, টেলিকম বিশেষজ্ঞ আবু সাঈদ খান প্রমুখ।
এচি এম কাদের সিএনএন বাংলা ২৪