ই-পেপার | শনিবার , ২৯শে জুন, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

দেশের মানুষের মাথাপিছু ঋণ ৪০ হাজার টাকা : অর্থমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা :

দেশের মানুষের মাথাপিছু ঋণের পরিমাণ ৩৬৫ মার্কিন ডলার। যা বাংলাদেশি টাকায় ৪০ হাজার ১৫০ টাকা (প্রতি ডলার ১১০ টাকা ধরে) বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। মঙ্গলবার (৩১ অক্টোবর) জাতীয় সংসদে সরকার দলীয় সংসদ সদস্য হাজী মো. সেলিমের প্রশ্নের জবাবে এ তথ্য জানান অর্থমন্ত্রী।অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, ২০২৩ সালের জুন মাস পর্যন্ত বৈদেশিক ঋণের স্থিতি ৬২ হাজার ৩১২ দশমিক ৭১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার (সাময়িক) যার মধ্যে বহুপাক্ষিক ৩৬ হাজার ৭৮১ দশমিক শূন্য ৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং দ্বিপাক্ষিক ২৫ হাজার ৫৩১ দশমিক ৬৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।

 

অর্থমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী দেশের জনসংখ্যা ১৭০ দশমিক ৭৯ মিলিয়নের হিসাব অনুযায়ী বর্তমানে মাথাপিছু ঋণের পরিমাণ ৩৬৪ দশমিক ৮৫ মার্কিন ডলার।মন্ত্রীর দেওয়া তথ্য মতে বিশ্বব্যাংক থেকে সর্বোচ্চ ১৯ হাজার ৫৩৬ দশমিক ৮২ মিলিয়ন ডলার, এশিয়া উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) ১৪ হাজার ১১৪ দশমিক ৮৯ মিলিয়ন ডলার, তৃতীয় সর্বোচ্চ ১০ হাজার ৯৯৯ দশমিক ৯৮ মিলিয়ন ডলার, রাশিয়া থেকে ৫ হাজার ৮৯৯ দশমিক ৯৮ মিলিয়ন ডলার, চীন থেকে ৫ হাজার ৩৭৪ দশমিক ১৫ মিলিয়ন ডলার, এআইআইবি ১ হাজার ৫০৪ দশমিক ১২ মিলিয়ন ডলার, ভারত থেকে ১ হাজার ২৯৯ দশমিক ৩৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। এছাড়াও আরও কয়েকটি দেশ এবং সংস্থা হতে ঋণ নেয় বাংলাদেশ।

 

২০২২-২৩ অর্থবছরে সুদ বাবদ ৯৩৫ দশমিক ৬৬ মিলিয়ন ডলার এবং আসল বাবদ এক হাজার ৭৩৪ দশমিক ৫৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলার পরিশোধ করা হয়েছে বলে জানান অর্থমন্ত্রী।তিনি বলেন, চলতি অর্থ বছরে (২০২৩-২৪) অর্থবছরে সুদ বাবদ এক হাজার ১৯০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং আসল বাবদ ২ হাজার ৩৭৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার পরিশোধের নিমিত্ত বাজেট রয়েছে। জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য মসিউর রহমান রাঙ্গার প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, ৫ বছরে (২০১৯-২৩) বিমানবন্দরের কাস্টমস এক হাজার ৪০৮ কেজি সোনা উদ্ধার করা হয়েছে। যার আনুমানিক মূল্য ১ হাজার ২২৬ কোটি টাকা। উদ্ধারকৃত সোনার মধ্যে এক হাজার ২৭২ দশমিক ১০ কেজি বাংলাদেশ ব্যাংকে জমা দেওয়া হয়েছে। যার মধ্যে স্থায়ী খাতে (দাবিদার নেই) ১০৯ দশমিক ৭৬ কেজি এবং অস্থায়ী খাতে (দাবিদার আছে) ১ হাজার ১৬১ দশমিক ৩৪ কেজি।

 

মসিউর রহমান রাঙ্গার আরেক প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, চলতি অর্থবছরের (২০২৩-২৪) অক্টোবর পর্যন্ত একটি প্রকল্পের জন্য বিশ্বব্যাংক থেকে ৩০০ মিলিয়ন ডলার ঋণ সহায়তার প্রতিশ্রুতি পাওয়া গেছে। একই সময়ে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) কাছ থেকে ৪টি প্রকল্পের জন্য ৯১০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের ঋণ সহায়তা পাওয়া গেছে। নোয়াখালী-২ আসনের সংসদ সদস্য মোরশেদ আলমের প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, দারিদ্র্য বিমোচন কর্মসূচি নামে কোনো কর্মসূচি বাংলাদেশ ব্যাংকের আওতায় চলমান নেই। তবে বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক জারিকৃত কৃষি ঋণ নীতিমালা ও কর্মসূচিতে ‘দারিদ্র্য বিমোচন’ নামে ঋণ বিতরণের একটি খাত রয়েছে।

 

 

ভোলা-৩ আসনের সংসদ সদস্য নুরুন্নবী চৌধুরী প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, বর্তমানে চলতি বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত দেশে ট্যাক্স আইডেন্টিফিকেশন নম্বরধারীর সংখ্যা ৯৩ লাখ ৪৬ হাজার ৮৬৯। আয়কর আইন-২০২৩ অনুযায়ী স্পট ট্যাক্স নির্ধারণ বাতিল করা হয়েছে।চট্টগ্রাম-৩ আসনের সংসদ সদস্য মাহফুজুর রহমানের প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, জুন, ২০২৩ পর্যন্ত দেশে ব্যক্তি পর্যায়ে কর দাতার সংখ্যা ৮৯ লাখ ৫৩ হাজার ২০৬জন। করদাতা বৃদ্ধির জন্য জাতীয় রাজস্ব বোর্ড কয়েকটি পদক্ষেপ নিয়েছে। এর মধ্যে ৪৩ টি সেবা গ্রহণের লক্ষ্যে রিটার্ন দাখিলে প্রমাণ প্রদর্শন বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক জরিপ কার্যক্রমের মাধ্যমে নতুন করদাতা বৃদ্ধি হচ্ছে।ময়মনসিংহ ১১ আসনের সরকার দলীয় সংসদ সদস্য কাজিম উদ্দিন আহম্মেদের প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) মানদণ্ড অনুযায়ী চলতি মাসের ১২ অক্টোবর পর্যন্ত দেশে বর্তমানে গ্রস রিজার্ভের পরিমাণ ২১ হাজার ১১৬ দশমিক ৫৯ মিলিয়ন ডলার।

 

 

তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলসহ বিভিন্ন পণ্যের মূল্য বৃদ্ধির ফলে আমদানি ব্যয় বৃদ্ধিসহ রেমিট্যান্সের পরিমাণ হ্রাস ইত্যাদি কারণে বর্তমানে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের পরিমাণ পূর্বের তুলনায় কমে আসলেও কোনো ঘাটতি পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়নি। জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য সৈয়দ আবু হোসেন বাবলার প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ ও যুদ্ধ সংশ্লিষ্ট নিষেধাজ্ঞার ফলশ্রুতিতে মূল্যস্ফীতি বেড়েছে, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ হ্রাস পেয়েছে এবং মুদ্রা বিনিময় হারে কিছুটা চাপ সৃষ্টি হয়েছে। মূল্যস্ফীতি হ্রাস ও রিজার্ভ পুনর্গঠনের জন্য সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে।

 

 

সরকারি দলের সংসদ সদস্য বেনজির আহমদের এক প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, ২০২২-২০২৩ অর্থবছরে বাংলাদেশে মাথাপিছু জাতীয় আয়ের পরিমাণ ২ হাজার ৭৬৫ মার্কিন ডলারে দাঁড়িয়েছে (সাময়িক হিসাব)। ২০০৫–২০০৬ ও ২০০৮ অর্থবছরে মাথাপিছু জাতীয় আয় ছিল যথাক্রমে ৫৪৩ ও ৮৬৮ মার্কিন ডলার। ২০০৫-২০০৬ অর্থবছরের তুলনায় মাথাপিছু জাতীয় আয় ইতোমধ্যে পাঁচগুণের বেশি বেড়েছে।

 

সিএনএনবাংলা২৪