ই-পেপার | বুধবার , ৩রা জুলাই, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

পটিয়া মাদরাসায় উত্তেজনা : মহাপরিচালকের পদত্যাগ!

আবদুল হাকিম রানা, পটিয়া :

পটিয়া আল জামিয়া আল ইসলামিয়ার মহাপরিচালক মাওলানা ওবায়দুল্লাহ হামজার কাছ থেকে জোরপূর্বক পদত্যাগপত্রে স্বাক্ষর নেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। শনিবার রাতে মাদ্রাসার ভেতরে বিরোধী পক্ষের ছাত্রদের হাতে লাঞ্চিত হন তিনি।

এ সময় তার বাসভবনে ভাঙচুরের পাশাপাশি বেশকিছু ছাত্র জোরপূর্বক মহাপরিচালকের পদত্যাগপত্রে স্বাক্ষর নেন। এ ঘটনায় মাদ্রাসার মহাপরিচালক মাওলানা ওবায়দুল্লাহ্ হামজা রোববার পটিয়া থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযোগে ৮ জনের নাম উল্লেখ সহ ৬০-৭০ জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয় বলে সূত্রে প্রকাশ ।

পক্ষান্তরে গতকাল রাতে তার এ পদত্যাগ পত্র গৃহিত হযেছে মর্মে পরিচালনা পর্ষদের পক্ষে আবু তাহের নদভী স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, আজ ২৯/১০/২০২৩ ইং রোববার বাদ মাগরিব আলজামিয়ার শিক্ষক মিলনায়তনে মজলিসে শুরার এক সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত হয়।

সভায় দীর্ঘ আলোচনা-পর্যালোচনার পর সর্বসম্মতিক্রমে নিম্নলিখিত সিদ্ধান্তসমূহ গৃহীত হয়। সভায় সর্বসম্মতিক্রমে আলজামিয়া পটিয়ার সাবেক মুহতামিম হযরত আল্লামা ওবায়দুল্লাহ হামজা সাহেবের ইস্তিফানামা গৃহীত হয় এবং ইস্তাফা নামার আলোকে শিক্ষকতাসহ আলজামিয়া পটিয়ার সকল জিম্মাদারী থেকে তাঁকে অব্যাহতি দেয়া হয়।

সভায় সর্বসম্মতিক্রমে আলজামিয়া পটিয়ার পরিচালনার জন্য ৫ সদস্য বিশিষ্ট একটি পরিচালনা পরিষদ (মজলিসে এদারী) গঠিত হয়। উক্ত পরিষদের আহবায়ক করা হয় হযরত আল্লামা আবু তাহের নদভী । অন্য সদস্যবর্গ হলেন- হযরত আল্লামা আমীনুল হক, হযরত আল্লামা হাফেজ মুফতি আহমদুল্লাহ, হযরত আল্লামা মুফতি শামসুদ্দীন জিয়া ও হযরত আল্লামা মুফতি একরাম হোসাইন আদুদী ।

অধিবেশন শেষে বাবুনগর মাদ্রাসার মুহতামিম হযরত আল্লামা মুহিববুল্লাহ বাবুনগরী, হাটহাজারী মাদ্রাসার মুহতামিম হযরত আল্লামা খলীল আহমদ কাসেমী এবং ফটিকছড়ী মাদ্রাসার মুহতামিম হযরত আল্লামা এমদাদুল্লাহ নানুপুরী আলজামিয়ার জমে মসজিদে ছাত্রদেরকে অধিবেশনের সিদ্ধান্তসমূহ জানিয়ে দেন এবং তাদের উদ্দেশে গুরুত্বপূর্ণ নসীহত পেশ করেন। ছাত্রদেরকে এখন থেকে নিয়মিত লেখাপড়ায় মনোযোগ দেয়ার আহবান জানান আগামী কাল থেকে যথারীতি সবক হওয়ার ঘোষণা দেন।

জানা গেছে, অভ্যন্তরীণ বিষয় নিয়ে মাদ্রাসায় ছাত্র ও শিক্ষকদের মধ্যে অনেকদিন ধরেই মতবিরোধ চলছিল। ওই মতবিরোধ গত দুই সপ্তাহ ধরে তীব্র আকার ধারণ কনে। তার জের ধরে শনিবার রাত ১২টার পর থেকে হাটাৎ মাদ্রাসার বেশকিছু ছাত্র মহাপরিচালকের অপসারণ দাবিতে বিক্ষোভ শুরু করে। এ সময় মাদ্রাসার মাইকে বিভিন্ন উসকানিমূলক স্লোগান দিয়ে মহাপরিচালকের বাস ভবনে ভাঙচুর চালানো হয় ।

এ বিক্ষুব্ধ ছাত্ররা মহাপরিচালকের অনুসারী হিসেবেপরিচিত জাকারিয়াসহ বেশ কয়েকজনকে পিটিয়ে আহত করে। পরে জাকারিয়াকে পটিয়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হলে মাথায় পাঁচটি সেলাই দেওয়া হয়।

রাতে ঘটনা শুরুর পর পুলিশ ও সংবাদকর্মীরা মাদ্রাসায় গেলেও ছাত্ররা পুলিশ ও সংবাদকর্মীদের কাউকে সেখানে প্রবেশ করতে দেয়নি। ওই সময় ভেতরে কিছু ছাত্র লাঠিসোটা ও লোহার রড নিয়ে অবস্থান নিতে দেখা যায়।

বিক্ষোভরত ওই ছাত্রদের অভিযোগ, মাওলানা ওবাইদুল্লাহ হামজাহ মহাপরিচালকের দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে ছাত্র- শিক্ষকদের সঙ্গে অসাদাচারণ, স্বেচ্ছাচারিতা, ছাত্রদের বিভিন্ন কার্যক্রমে বাধা দেন। তার এসব আচরণের কারণে ছাত্র-শিক্ষকদের একাংশ বিক্ষুদ্ব হয়ে উঠে।

শনিবার রাতের ওই ঘটনার পর রোববার বিকালে পটিয়া থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন মাদ্রাসার মহাপরিচালক ওবাইদুল্লাহ হামজা। সেখানে তিনি উল্লেখ করেন তার কাছ থেকে জোরপূর্বক স্বাক্ষর নেওয়া হয়েছে।

রোববার বিকালেও মাদ্রাসা এলাকায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করে । মাদ্রাসার প্রধান প্রধান গেটগুলো বন্ধ রয়েছে। এদিন রাতে আন্দোলনকারী ওই ছাত্র-শিক্ষকদের নিয়ন্ত্রণে শূরা কমিটির একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।

তবে সে ঠকে শূরার প্রধান আল্লামা সুলতান নদভী উপস্থিত ছিলেন না। বিপরীতে হেফাজত র মাওলানা মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী ও হাটহাজারী মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল মাওলানা খলিলুর রহমান কাসেমী এতে উপস্থিত ছিলেন।

মাদ্রাসা সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানিয়েছে, বিক্ষোভের পর থেকে মহাপরিচালক মাওলানা ওবাইদুল্লাহ্ হামজা বিরোধী ছাত্র-শিক্ষকরা সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করছেন। আগামী ২ নভেম্বর মাদ্রাসার শূরার বৈঠক ছিল। ওই বৈঠকে শিক্ষকদের দুপক্ষের বক্তব্য শুনে সমাধানের কথা ছিল; কিন্তু তার আগেই বিক্ষোভের মাধ্যমে ওবাইদুল্লাহ হামজাকে সরিয়ে দেয় বিরোধীরা। তাদের নিয়ন্ত্রণেই হেফাজত আমির ও হাটহাজারী মাদ্রাসার প্রিন্সিপালকে এনে একটি বৈঠক করা হয়েছে। যদিও তারা কেউ পটিয়া মাদ্রাসার শূরা সদস্য নয়।

বর্তমানে রাতে শূরা কমিটির গৃহীত সিদ্ধান্ত মহা পরিচালকের পক্ষ থেকে মেনে নেওযা হয়েছে কিনা জানা যায়নি। এতে ফেসবুক পেইজে মহা পরিচালকের পক্ষে মাদরাসা বন্ধ ঘোষণা করলে ও শূরা বৈঠকে মাদরাসা খোলা রাখার সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়েছে। তাই কার কি হয় তা নে দেখে কিছুই বলা যাচ্ছে না।

পটিয়া থানার ওসি প্রিটন সরকার বলেন, মাদ্রাসার অভ্যন্তরীণ বিষয় নিয়ে কিছুদিন ধরে বিরোধ চলে আসছিল। এ বিষয়ে বেশ কয়েকবার বৈঠকে বিষয়টি সমাধানের কথা ছিল। সবশেষ শনিবার নতুন করে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। এ ঘটনায় আমরা একটি অভিযোগ পেযেছি। পুলিশ শান্তি শৃঙ্খলা রক্ষায় কাজ করে যাচ্ছে।

এইচ এম কাদের,সিএনএন বাংলা২৪