ই-পেপার | বুধবার , ৩রা জুলাই, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট প্রাসাদে ‘বৈঠক’ ঘিরে রহস্য, বাড়ছে জল্পনা

আন্তর্জাতিক বালা২৪

সাম্প্রতিক মাসগুলোতে তো বটেই, গত বছর থেকেই পাকিস্তানের রাজনীতি রয়েছে অস্থিতিশীল অবস্থায়। গত বছরের শেষের দিকে সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের ওপর হামলা, চলতি বছরের মে মাসে তাকে নাটকীয়ভাবে আটক ও পরে মুক্তি এবং পরে অনেকটা তড়িঘরি করে কারাদণ্ড দিয়ে তাকে ফের বন্দি করার ঘটনায় রাজনীতিতে ছড়িয়েছে উত্তাপ।

এমনকি শেহবাজ সরকারের মেয়াদ শেষে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতা নিলেও সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন আদৌ ৯০ দিনের মধ্যে হবে কিনা সেটিও নিশ্চিত নয়। এই পরিস্থিতিতে পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট প্রাসাদে একটি ‘বৈঠক’ ঘিরে রহস্য ছড়িয়েছে। আর তাতেই বাড়ছে নানা জল্পনা।

রোববার (৩ সেপ্টেম্বর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যম দ্য নিউজ ইন্টারন্যাশনাল।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পাকিস্তানের প্রেসিডেন্টের সরকারি বাসভবন আইওয়ান-ই-সদরে গত শুক্রবার একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বিশেষ করে দেশের বর্তমান এই রাজনৈতিক পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে সেদিনের সেই বৈঠক নিয়ে জল্পনা চলছে।

দ্য নিউজ ইন্টারন্যাশনাল বলছে, বৈঠকটি আইওয়ান-ই-সদরের (প্রেসিডেন্সি) চতুর্থ তলায় অনুষ্ঠিত হয়েছে বলে জানা গেছে। সেখানেই পাকিস্তানের প্রেসিডেন্টের কার্যালয় অবস্থিত। বৈঠকের সময় আইওয়ান-ই-সদরের চতুর্থ তলায় কারও প্রবেশের অনুমতি ছিল না। এমনকি প্রেসিডেন্ট প্রাসাদের কর্মীদেরও ভবনের ওই এলাকায় প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা ছিল।

গত শুক্রবার আইওয়ান-ই-সদরের চতুর্থ তলায় ‘তিনজন প্রবীণ’ ব্যক্তি বৈঠকে মিলিত হওয়ার পর সেখানে কী ঘটেছিল সে বিষয়ে প্রেসিডেন্ট ভবনের পক্ষ থেকে কোনও বিবৃতি জারি করা হয়নি। তবে পাকিস্তানের বর্তমান পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চলছে নানা জল্পনা-কল্পনা।

দ্য নিউজ ইন্টারন্যাশনাল বলছে, কিছু জল্পনা অনুসারে- প্রেসিডেন্ট ড. আরিফ আলভি আগামী ৭২ ঘণ্টার মধ্যে সাধারণ নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করতে পারেন। এর আগে আসন্ন নির্বাচনের তারিখ নির্ধারণে বৈঠকের জন্য প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে চিঠি দিয়েছিলেন তিনি।

তবে পাকিস্তানের সিইসি সেই বৈঠক প্রত্যাখ্যান করে বলেছিলেন, ২০১৭ সালের নির্বাচন আইনের ৫৭ ধারা অনুযায়ী নির্বাচনের তারিখ নির্ধারণের ক্ষমতা কমিশনের হাতে। অন্যদিকে প্রেসিডেন্টের পরামর্শ নেওয়ার অনুরোধে পাকিস্তানের আইন মন্ত্রণালয়ের প্রতিক্রিয়াও ছিল একই।

সংবাদমাধ্যম বলছে, সংবিধানের ৫৮ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করতে পারেন বলে জল্পনা রয়েছে এবং সেই প্রেক্ষাপটে গত শুক্রবারের বৈঠকটি ছিল খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

বৈঠকের আরেকটি দিক হতে পারে আর্মি অ্যাক্ট এবং অফিসিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্টের সংশোধনী। মূলত এ সম্পর্কে প্রেসিডেন্ট আরিফ আলভি সম্প্রতি টুইট করেছিলেন। সেখানে তিনি বলেছিলেন, তিনি ওই দুটি বিলে স্বাক্ষর করেননি এবং অনুমোদনও করেননি। কিন্তু তার অনুমোদন ছাড়াই সেগুলো পরে আইনে পরিণত হয়।

বৈঠকের তৃতীয় আরেকটি দিক হতে পারে বর্তমান প্রেসিডেন্টের মেয়াদ। মূলত আগামী ৮ সেপ্টেম্বর পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট হিসেবে আরিফ আলভির মেয়াদ শেষ হবে। তবে রাষ্ট্রপতির মেয়াদ শেষ করে তিনি যে বাড়িতে ফিরে যাবেন তা প্রেসিডেন্ট হাউস থেকে নিশ্চিত করা হয়নি।

তবে পাকিস্তানের সংবিধান অনুযায়ী, নতুন প্রেসিডেন্ট দায়িত্বে না আসা পর্যন্ত বর্তমান প্রেসিডেন্ট তার পদে বহাল থাকতে পারেন।

 

এদিকে প্রেসিডেন্ট আরিফ আলভি রোববার থেকে চার দিনের সফরে পাকিস্তানের পূর্বাঞ্চলীয় প্রদেশ পাঞ্জাবের রাজধানী লাহোরে যাচ্ছেন এবং আগামী ৭ সেপ্টেম্বর সেখান থেকে ইসলামাবাদে ফিরে আসবেন তিনি।

পর্যবেক্ষকরা বলছেন, সাধারণ নির্বাচনের তারিখ যতদূর সম্ভব নির্বাচন কমিশনও আগামী সপ্তাহে ঘোষণা করতে পারে। যদি প্রেসিডেন্ট ও নির্বাচন কমিশন থেকে নির্বাচনের জন্য পৃথক তারিখ ঘোষণা করা হয় তাহলে সেক্ষেত্রে অস্পষ্টতা দূর করতে সাহায্য করার জন্য পাকিস্তানের সুপ্রিম কোর্ট এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে।

উল্লেখ্য, পাকিস্তানের সংবিধানে নির্বাচিত সরকার তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরের ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচনের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফের পরামর্শ মেনে প্রেসিডেন্ট আরিফ আলভি গত ৯ আগস্ট দেশটির পার্লামেন্ট ভেঙে দেন, তারপর ১২ আগস্ট ক্ষমতা গ্রহণ করেন তত্ত্বাবধায়ক প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার হোসেন কাক্কারের নেতৃত্বাধীন সরকার।

 

সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা অনুসারে আগামী নভেম্বর মাস শেষ হওয়ার আগেই নির্বাচন হওয়ার কথা পাকিস্তানে। কিন্তু পাকিস্তানের সাবেক আইনমন্ত্রী আজম নাজির তারার গত ৬ আগস্ট জানান, নির্বাচন কমিশনের কাছে হালনাগাদ ভোটার তালিকা না থাকায় এবার নির্ধারিত সময়ে নির্বাচন হওয়া সম্ভব নয়।

অন্যদিকে ভোটার তালিকা হালনাগাদ ও নির্বাচনী আসন বিন্যাসের কাজ শেষ হলে ২০২৪ সালের জানুয়ারি শেষ হওয়ার আগেই জাতীয় নির্বাচন করার পরিকল্পনা রয়েছে দেশটির নির্বাচন কমিশনের। যদি কোনও কারণে জানুয়ারির মধ্যে এ কাজ শেষ না হয়, সেক্ষেত্রে ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি হবে নির্বাচন।

তবে সাংবিধানিক নিয়ম মেনে ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিষয়ে বর্তমানে পাকিস্তান বার কাউন্সিল, সুপ্রিম কোর্ট বার, জামায়াতে ইসলামি, ইমরানের দল পিটিআই এবং অন্যান্যদের আপিলের শুনানি করছে সুপ্রিম কোর্ট।

 

এইচ এম কাদের,সিএনএন বাংলা২৪