ই-পেপার | শুক্রবার , ২২শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

লক্ষ্য অর্জনে সক্ষম সোনালী লাইফ

সিএনএন বাংলা২৪,ডেস্ক:

চতুর্থ প্রজন্মের বিমা প্রতিষ্ঠান সোনালী লাইফ ইনস্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড। দেশের বিমা খাতে আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তিসম্পন্ন প্রথম বিমা কোম্পানি। প্রতিষ্ঠার পর থেকেই গ্রাহকের সঙ্গে সম্পৃক্ত থেকে একের পর এক ছিনিয়ে এনেছে ব্যবসায়িক সাফল্য। মাত্র কয়েক বছরের ব্যবধানে সমসাময়িক জীবন বিমা প্রতিষ্ঠান তো বটেই, ব্যবসায়িকভাবে দেশের শীর্ষ স্থানীয় বিমা কোম্পানিগুলোর ঘাড়ে নিঃশ্বাস ফেলছে। ১ আগস্ট প্রতিষ্ঠানটির পথচলার ১০ বছর পূর্ণ হয়েছে। এই এক দশকে সোনালী লাইফের প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তি ও প্রত্যাশা নিয়ে প্রতিষ্ঠানটির মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মীর রাশেদ বিন আমানের সঙ্গে কথা হয় প্রতিদিনের সংবাদের। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন অর্থনৈতিক প্রতিবেদক মো. জাহিদুল ইসলাম।

 

প্রশ্ন : আগামীকাল ১ আগস্ট এক দশক পূর্ণ হতে চলেছে সোনালী লাইফের। প্রতিষ্ঠাকালীন যে লক্ষ্য নিয়ে কার্যক্রম শুরু হয়েছিল তার কতটুকু অর্জিত হয়েছে বলে মনে করেন।

মীর রাশেদ বিন আমান : প্রতিষ্ঠাকালে আমাদের স্বপ্নদ্রষ্টা মোস্তাফা গোলাম কুদ্দুসের যে লক্ষ্য আমরা পেয়েছি তা হলো লাইফ ইনস্যুরেন্স কোম্পানি যেমন হওয়া দরকার ঠিক তেমনই লাইফ ইনস্যুরেন্স কোম্পানি গঠন। যেমন- গ্রাহকের পক্ষে সঠিক সময়ে মধ্যে বিমা দাবি পরিশোধ এবং ভোগান্তিহীন স্বচ্ছ সেবা প্রদানের মাধ্যমে মানুষের আস্থা অর্জন। আমরা গ্রাহককে দেওয়া প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করিনি। তাছাড়া যুগোপযোগী আধুনিক বিমা পরিকল্পনা, সুন্দর কর্মপরিবেশ তৈরিও আমাদের লক্ষ্য ছিল। আমরা চেয়েছিলাম দৃষ্টান্ত হিসেবে একটি ভিন্ন করপোরেট পরিবেশ, ডিসিপ্লিন কালচার। এখানে স্টাফ ও কর্মকর্তাদের জন্য রয়েছে ক্যাফেটেরিয়া, রয়েছে ক্যান্টিন, নিজস্ব জিমনেশিয়াম, অডিটোরিয়াম, নারী ও পুরুষদের আলাদা প্রার্থনা কক্ষ, নারীকর্মীদের বাচ্চাদের জন্য ডে-কেয়ার ব্যবস্থাসহ বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা। সাধারণত দেশের করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলোতে এ ধরনের সুযোগ সুবিধা তেমন দেখা যায় না কিন্তু আমরা পেরেছি। এছাড়া এমপ্লয়িদের ঠিক রিটার্ন দেওয়া, এটা অনেকেই করে না। এমনিতে মূল্যায়ন এক জিনিস কিন্তু কাজের বিপরীতে যত বেশি সম্ভব রিটার্ন, বেনিফিট দেওয়া, সেটা ভিন্ন বিষয়। তখন ক্যারিয়ারের চিন্তা থাকে, মন থেকে কাজের প্রতি একাগ্রতা থাকে। শুরুর দিকে আমাদের কাজের পদ্ধতি ও বৈশিষ্ট্য নিয়ে অনেকেই বলেছিল এদেশে এসব সম্ভব না। কিন্তু এক দশক পর আমরা সে ধারণা ভুল প্রমাণ করে দেখিয়েছি। তাই ক্যারিয়ার ওরিয়েন্টেড, কালচারাল ডিসিপ্লিন একটা পরিবেশ, স্বচ্ছতার মাধ্যমে কমিটমেন্ট অ্যান্ড সার্ভিস ডেলিভারি, যথাসময়ে দাবি পরিশোধের মাধ্যমে কাস্টমারের স্যাটিসফেকশন যে লক্ষ্য ছিল তা অর্জিত হয়েছে। প্রিমিয়াম বা ব্যবসা কখনো আমাদের লক্ষ্য ছিল না। আমরা বিশ্বাস করি অভ্যন্তরীণভাবে শৃঙ্খলা মেনে গ্রাহককে প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী সেবা প্রদান করলে ব্যবসা এমনিতেই বাড়বে। যখন থেকে আমাদের দাবি পরিশোধের হার বেড়েছে তখন থেকেই প্রিমিয়াম আয়ও বাড়তে শুরু করে। ২০১৫-১৬ সালে আমাদের পার্ট ম্যাচিউরিটি ছিল অল্প কিছু কিন্তু ২০১৮-১৯ সালের পর এটা অনেক বেড়ে যায়। হয়তো এ কারণেই ২০১৯ সালে ৮১ কোটি, ২০ সালে ১৩৫ কোটি, ২১ সালে প্রায় ৩২০ কোটি এবং ২২ সালে ৬১৪ কোটি টাকারও বেশি প্রিমিয়াম আয় হয়েছে। একই সঙ্গে বাড়ে রিনুয়েল পারসেন্টেইজ। ২০১৪ সালে যেখানে রিনুয়েল হার ছিল ৩ শতাংশ, সেটা বর্তমানে ৮৯ শতাংশ। আবার সবচেয় কম ব্যয়ে কার্যক্রম পরিচালনায় বিমা খাতে সোনালী লাইফ এগিয়ে।

এসব কারণে বর্তমানে বিমা খাতে গ্রোস প্রিমিয়াম সংগ্রহে ৭ নম্বর এবং প্রথম বর্ষের ক্ষেত্রে তৃতীয় অবস্থানে আছি আমরা। এই সময়ে এসে আমরা বলতে পারি, যে লক্ষ্য উদ্দেশ্য নিয়ে আমরা জার্নিটা শুরু করেছিলেন, তার চেয়েও ভালো অবস্থানে এসেছি। এখন আমাদের লক্ষ্যগুলো পরিবর্তন করেছি আরো ভালো কিছুর উদ্দেশ্যে।

প্রশ্ন : সোনালী লাইফ প্রযুক্তি ব্যবহারের ক্ষেত্রে অগ্রগামী কিন্তু যুগোপযোগী বিমা পলিসি চালুর ক্ষেত্রে কতটা অগ্রগামী?

 

মীর রাশেদ বিন আমান : আমার মনে হয় এক্ষেত্রেও সোনালী লাইফ লিডিং ফ্রম দি ফ্রন্ট ইনোভেটেভলি। উদাহরণ হিসেবে বলতে পারি এ মুহূর্তে আমাদের ২৬টি প্রোডাক্ট রয়েছে। এর মধ্যে ১২-১৫টি প্রোডাক্ট এই দেশের অন্য জীবন বিমা কোম্পানিগুলোর নেই, আমরাই প্রথম শুরু করি। যেমন প্রভিডেন্ট ফান্ডের প্রোডাক্ট, ফিক্সড সেভিংস ইনস্যুরেন্স প্ল্যান, শর্ট টার্ম ইনস্যুরেন্স, ফ্যামিলি সিকিউরিটি প্ল্যান যেটা একটা প্রিমিয়ামের মাধ্যমে ফ্যামিলির চারজনকে ইনস্যুরেন্স কভারেজ দেয়, লাইফ টাইম প্রটেকশন প্ল্যান, কোটিপতি প্ল্যান- প্রত্যেক কাস্টমারের নিড যেন ফুলফিল করা যায়। তিনটি ক্যাটাগরির মধ্যে প্রোডাক্ট আছে ম্যাচুউরিটি অনলি, ম্যাচিউরিটি অ্যান্ড সেভিংস অনলি, রিস্ক অনলি এবং ম্যাচিউরিটি, সেভিং অ্যান্ড রিস্ক অনলি। এই তিন ক্যাটাগরিতেই আমাদের প্রোডাক্ট পোর্টফলিও আছে। আমাদের ট্রেনিংয়ের কারণে এমপ্লয়িরা, এজেন্টরা অনেক ডাইভারসিফিকলি প্রোডাক্ট সেল করতে পারছে। বিমা খাত কাস্টমার ওরিয়েন্টেড হওয়া সত্ত্বেও কোনো কোম্পানি গ্রাহকের সঙ্গে কথা বলত না। আমরা প্রথম ২০১৩ সালে কাস্টমার কেয়ার ডিপার্টমেন্ট চালু করে গ্রাহক ফোন কল শুরু করি। ব্যাংকের মতো করে ইনস্যুরেন্সেও ই-কেওয়াইসি আমরা চালু করি। বিএফআইইউর সঙ্গে কাজ করে এটাকে আরো উন্নত করা হয়েছে। অনলাইন পেমেন্ট, এজেন্ট ও গ্রাহকদের জন্য মোবাইলঅ্যাপ আমরা শুরু করি। রিনুয়াল হলে গিফট পাওয়ার প্রথা আমরাই শুরু করি। প্রিভিলাইজড কার্ড আমরা শুরু করি। এ ধরনের ইনোভেটিভ বিষয় নিয়ে কাজ করার জন্য আমাদের রিসার্চ সেল রয়েছে। আমাদের একটা সেবা রয়েছে যেখানে একজন গ্রাহক নিয়মিত তার পলিসি চালিয়ে গেলে তিন বছর পর নিজের পলিসিতে জমা টাকার স্যারেন্ডার ভ্যালুর ৮০ শতাংশ পর্যন্ত নিজেই ঋণ হিসেবে নিতে পারেন। সমস্যা হলে তুলে নিলাম, আবার ছয় মাস বা ১২ মাসের কিস্তিতে আবার ফান্ডে রেখে দিলাম। এজন্য কোনো আবেদন বা কাউকে ফোন করতে হবে না। এই সিস্টেমটা শুধু বাংলাদেশ নয়, বিশ্বে কোথাও খুঁজে পাবেন না। এছাড়া গ্রাহকের সুবিধার্থে কিছু দিনের মধ্যেই এমন একটি প্রযুক্তির ব্যবহার শুরু করতে যাচ্ছি যা জীবন বিমায় বিশ্বের আর কোথাও এখন পর্যন্ত নেই।

প্রশ্ন : বৈশ্বিক মন্দার কারণে সোনালী লাইফের ব্যবসায়িক পারফরম্যান্সে কোনো পরিবর্তন এসেছে কি না?

মীর রাশেদ বিন আমান : গুরুত্বপূর্ণ একটি পয়েন্টে এনেছেন। পাশাপাশি এটাও মনে রাখতে হবে সামনে কিন্তু জাতীয় নির্বাচন। সবদিক বিবেচনায় আমি বলব সোনালী লাইফ স্টিল প্রগ্রেসিভ সাকসেসফুলি। এখনো আমরা প্রায় ৬০ পারসেন্ট গ্রোথে আছি। ফলে বৈশ্বিক পরিস্থিতির প্রভাব তেমনটা ফিল হয়নি। তবে গত বছর যখন দুর্ভিক্ষের মতো একটি বার্তা এলো তখন গ্রাহকদের মধ্যে একটা অনিশ্চয়তা, অনিরাপত্তাবোধ তৈরি হয়েছিল। আমরা সে সময়টাও কাটিয়ে উঠে ৬০০ কোটিরও বেশি প্রিমিয়াম অর্জন করেছি। এরপর এই যুদ্ধ, মন্দার মাঝেও আমরা এখন পর্যন্ত ৩৫০ কোটি টাকারও বেশি প্রিমিয়াম অর্জন করেছি। আসলে মানুষের মধ্যে একবার আস্থা তৈরি হয়ে গেলে তার প্রতিদান আপনি পাবেন। তো সবদিক থেকে আমি যেটা বলব, আমাদের গ্রোথ এখন পর্যন্ত ঠিক আছে।

 

প্রশ্ন : আপনার দৃষ্টিতে ১০ বছর আগের তুলনায় বর্তমানে সময় পর্যন্ত বিমা খাতের অগ্রগতিতে কী কী পরিবর্তন এসেছে। এছাড়া আর কোথায় কোথায় কাজ করা প্রয়োজন।

 

মীর রাশেদ বিন আমান : অনেক পরিবর্তন হয়েছে। অনেক কোম্পানি ডিজিটালাইজেশনে এসেছে। আমরা যখন মোবাইল অ্যাপ চালু করি তখন গুগল প্লে স্টোরে শুধু আমরাই ছিলাম। এখন অনেকেই এসেছে। ই-কেওয়াসি এসেছে, অনলাইন পেমেন্ট হচ্ছে, অনেক কোম্পানি কাস্টমারের ভ্যালু অ্যাডিশনের কথা চিন্তা করে কাস্টমার পেমেন্টে এগিয়েছে। সেক্ষেত্রে সরকারের পক্ষ থেকে যে চাপ এসেছিল সেটা ভালো হয়েছে। বিমা দিবস করার কারণে মানুষের মাঝে বিমা বিষয়ে সচেতনতা এসেছে, বিমা সম্পর্কে এখন অনেকেই আগ্রহী। আমি বলব অগ্রগতি অনেক হয়েছে, তবে কিছু কোম্পানির টাকা প্রদানে ঝামেলার কারণে নেগেটিভ ইমপ্যাক্টও তৈরি হয়েছে। ফলে যারা ভালো কাজ করছে তাদের পারফরম্যান্স ও প্রফিট দুটোই ঠিক আছে। ডিজিটালাইজড অনেক অ্যাডভান্সড হয়েছে বিমা খাত।

আর কাজ করার এখনো অনেক সুযোগ আছে বলে মনে করি। সেক্ষেত্রে প্রথমেই যে বিষয়টি সামনে আসে তা হলো স্কিলড ওয়ার্ক ফোর্সড। কোনো বাবা তার ছেলেকে বলে না, বড় হলে তুমি ইনস্যুরেন্সে কাজ করবে। এজন্য প্রয়োজন কাজের একটি সুন্দর পরিবেশ। ক্যারিয়ার ওরিয়েন্টেশন, এখানে সিনিয়র যেন জুনিয়রের পথে বাধা হয়ে না দাঁড়ায়, কাজে যেন সর্বোচ্চ গুরুত্ব থাকে। অর্থাৎ সার্বিকভাবে একটি স্ট্রাকচার। তবে সরকারের পক্ষ থেকে যদি অন্যান্য দেশের মতো বিমা বাধ্যতামূলক করা হয় তবে বিমা খাতে আরো প্রচুর অগ্রগতি হবে। যেমন প্রবাসী বিমা, বঙ্গবন্ধু শিক্ষা বিমা এসব করা হয়েছে। সাধারণ বিমার ক্ষেত্রে দেখুন, থার্ড পার্টি ইনস্যুরেন্স বাতিল করায় এখন আর পুলিশও ধরে না। তাই সরকারের পক্ষ থেকে বিমা করা নিয়ে একটা চাপ থাকতে হবে। তবে বড় অগ্রগতি হবে, যদি সবাই ঠিকমতো দাবি পরিশোধ করে।

 

প্রশ্ন : বিমা এজেন্টদের বিরুদ্ধে অভিযোগ অবাস্তব কথাও বলে সাধারণ মানুষের কাছে পলিসি সেল করে। তাই ব্যাংকাস্যুরেন্স চালু করতে যাচ্ছে সরকার। তবে এটি চালু হলে আবার এজেন্টরা কাজ হারাবে। সার্বিকভাবে ব্যাংকাস্যুরেন্স নিয়ে আপনার মূল্যায়ন কি?

 

মীর রাশেদ বিন আমান : ব্যাংকাস্যুরেন্স ডেফিনেটলি আমাদের দেশের জন্য ভালো বলে মনে করি। এটা নিয়ে যত নেগেটিভ কথা হচ্ছে, আমার মনে হয় সেটা যথাযথভাবে না বোঝার কারণে। আমরা যদি পাশের দেশ ভারতের দিকে তাকাই, সেখানে ব্যাংকাস্যুরেন্স ৪০ হাজার কোটিরও বেশি অবদান রাখছে। ব্যাংকাস্যুরেন্স হলে এটার সঙ্গে সম্পৃক্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মূল ফোকাসড হবে বিমা পলিসি সেল। তাদের তো আমরা তখন এজেন্ট হিসেবে নিয়োগ দিচ্ছি। তাহলে এজেন্ট কমে যাবে কীভাবে। নিয়মিত এজেন্টেদের পাশাপাশি ব্যাংকের মাধ্যমেও সেল হবে পলিসি। এতে পেনিট্রেশন বাড়বে। বরং এজেন্টদের জন্যই আরো লাভবান হওয়ার সুযোগ তৈরি হয়েছে।

 

এইচ এম কাদের,সিএনএন বাংলা২৪