ই-পেপার | শুক্রবার , ২২শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

৮ নারী ফুটবলারের ক্যাম্পে ফিরলেই শাস্তি

সিএনএন বাংলা২৪ ডেস্ক:

বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনকে (বাফুফে) না জানিয়ে সাতক্ষীরায় ফ্র্যাঞ্চাইজি লীগ খেলতে গেছেন আট নারী ফুটবলার।কাউকে না জানিয়ে খেলতে গিয়ে শৃঙ্খলা ভেঙেছেন দেশের নারী ফুটবলাররা। শৃঙ্খলা ভাঙার সঙ্গে গণমাধ্যমে ফুটবলারদের ‘ঔদ্ধত্যপূর্ণ’ আচরণে ক্ষুব্ধ বাফুফে।

 

ছুটি শেষে ক্যাম্পে ফিরলে ফুটবলারদের কাছে এর জবাবদিহি চাইবেন সভাপতি মোহাম্মদ কাজী সালাউদ্দিন। বাফুফের নারী উইংয়ের চেয়ারম্যান মাহফুজা আক্তার কিরণ জানিয়েছেন না জানিয়ে খেলতে যাওয়ায় শাস্তি পেতে হবে ফুটবলারদের।

নেপালের বিপক্ষে দুটি প্রীতি ম্যাচ খেলে ছুটি কাটাতে বাড়িতে গেছেন বাংলাদেশ নারী ফুটবল দলের সদস্যরা। এশিয়ান গেমসকে সামনে রেখে ৩১শে জুলাইয়ের মধ্যে বাফুফে ভবনের ক্যাম্পে ফেরার কথা তাদের। তবে যাওয়ার আগে ছয় দফা দাবিতে আলটিমেটাম দিয়ে গেছেন তারা।

নারী ফুটবলারদের ‘আলটিমেটামে’ এশিয়ান গেমসের প্রস্তুতি নিয়ে তৈরি হয়েছে অনিশ্চয়তা। এরইমধ্যে অধিনায়ক সাবিনা খাতুনের নেতৃত্বে আট ফুটবলার সাতক্ষীরা খেলতে গিয়ে সেই জটিলতা আরও বাড়িয়েছেন।

যদিও বিষয়টিকে স্বাভাবিক হিসেবে দেখছেন বাংলাদেশ দলের অধিনায়ক সাবিনা খাতুন। তিনি দুটি বিষয়কে এক করে দেখতে নারাজ। তারমতে ক্যাম্পের দাবি দাওয়ার সঙ্গে সাতক্ষীরার টুর্নামেন্টের কোনও সর্ম্পক নেই।

উল্টো মিডিয়ার ওপর ক্ষোভ জানিয়ে তিনি বলেন, ‘মেয়েরা ছুটিতে আছে। ছুটিতে থাকার সময়ে ম্যাচ খেলা অন্যায় না। এটা আপনারা অন্যায় হিসেবে বাফুফের কাছে তুলে ধরেছেন। আপনাদের কারণেই বিষয়টি জটিল আকার ধারণ করছে।

কারণ এখানে টুর্নামেন্ট হবে, ক্যাম্পের কয়েকজন খেলবে এটা সকলেই জানতো।’ সাবিনা বিষয়টিকে স্বাভাবিক হিসেবে দেখলেও তার ডাকে সাড়া দিয়ে সাতক্ষীরায় খেলতে গিয়ে বিপাকে পড়েছেন মারিয়া মান্ডা, শামসুন্নাহার, শামসুন্নাহার জুনিয়র, মাতসুশিমা সুমাইয়া, মাসুরা পারভীন, মারজিয়া ও তহুরা খাতুন। যাদের হাত ধরে নারী ফুটবলে রচিত হয়েছে ইতিহাস, তাদের এমন আচরণে হতাশ দেশের ফুটবলের অভিভাবক সংস্থাটি।

গত সেপ্টেম্বরে সাফ জয়ের পর বেতন বৃদ্ধির দাবি নিয়ে বাফুফে সভাপতি কাজী সালাউদ্দিনের সঙ্গে দেখা করেছিলেন ফুটবলাররা। দাবি পূরণের আশ্বাসও দিয়েছিলেন বাফুফে সভাপতি। তবে ১০ মাসেও দাবি পূরণ হয়নি।

এ কারণেই এবার ছুটিতে যাওয়ার আগে নিজেদের দাবিদাওয়ার কথা আবারও বাফুফের কাছে লিখিত আকারে দিয়ে গেছেন তারা। ফুটবলারদের দাবিদাওয়ার মধ্যে আছে বেতন-ভাতা বৃদ্ধি, পুরুষ ফুটবলারদের সমান সুযোগ-সুবিধা, পুষ্টিকর খাবার, উন্নত সরঞ্জামসহ ছয় দফা দাবি।

পুরোনো এসব চাওয়ার সঙ্গে নতুন যোগ হয়েছে বেশি বেশি আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলার দাবি। ছুটিতে যাওয়ার আগে নারী ফুটবলাররা জানিয়ে গেছেন, তাদের দাবিদাওয়া পূরণ না হওয়া পর্যন্ত ক্যাম্পে আর ফিরছেন না তারা! বর্তমানে নারী ফুটবলাররা তিন ক্যাটাগরিতে মাসিক বেতন পেয়ে থাকেন।

সিনিয়র ফুটবলার হিসেবে সাবিনা খাতুন মাসিক বেতন পান ২০ হাজার টাকার মতো। জাতীয় দলের বাকি ফুটবলারদের বেতন ১০ হাজার টাকা। বয়সভিত্তিক ফুটবলারদের বেতন আরও কম।

১০ হাজার টাকায় বর্তমান পরিস্থিতিতে জীবনযাপন কঠিন, সে কথাও মনে করিয়ে সাতক্ষীরায় খেলতে যাওয়া এক এক ফুটবলার বলেন, ‘আমাদের দেওয়া হয় মাত্র ১০ হাজার টাকা। এই টাকায় আমাদের নিজেদেরও চলতে হয়, পরিবারকেও পাঠাতে হয়। নানা প্রয়োজনীয় জিনিসের দরকার হয়। এ টাকায় কী হয়। এ কারণেই ছুটির মধ্যে কিছু টাকার জন্য আমরা এখানে খেলতে এসেছি। অন্যায় তো কিছু করিনি।

বিকেএসপির মেয়েরা ক্যাম্প থেকে ছুটি নিয়ে খেলতে যেতে পারলে আমরা কেন পারবো না?’ তবে মেয়েদের দাবি দাওয়ার বিষয়ে কোনও মন্তব্য করতে রাজি হননি বাফুফে সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন।

আন্তর্জাতিক ম্যাচে খেলে ব্রিটেনের প্রথম হিজাবি ক্রিকেটার হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেছেন স্কটিশ মহিলা আবতাহা মাকসুদ। হিজাব প্রগতির অন্তরায় নয়, বিশ্বকে দেখিয়ে দিয়েছেন তিনি।

 

নুর মোহাম্মদ, সিএনএন বাংলা২৪