নিজস্ব প্রতিনিধি:
চট্টগ্রামের হাটহাজারি উপজেলার প্রত্যন্ত এক গ্রাম মনাই ত্রিপুরা পল্লী। একসময় সেখানে ছিলোনা ভালো যোগাযোগ ব্যবস্থা। বিদ্যুৎহীন ছিল পুরো এলাকা। ২০১৮ সালে হাম আক্রান্ত হয়ে পল্লীর পাঁচ শিশুর মৃত্যু হয়।
এই ঘটনার পর সবার নজরে আসে গ্রামটি। তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রুহুল আমিন গ্রামের সমস্যাগুলো দূর করার উদ্যোগ নেন।
কিছুদিনের মধ্যে বিদ্যুৎ পৌঁছে মনাই ত্রিপুরাপল্লীতে। সুপেয় পানির অভাব দূর করতে স্থাপন করা হয় একাধিক টিউবওয়েল। যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে তৈরি হয় রাস্তা।
পরে গ্রামে মন্দিরভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষা কার্যক্রমের আওতায় যাত্রা করে একটি প্রাক-প্রাথমিক বিদ্যালয়। মন্দিরভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষা কার্যক্রম সরকারের ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন হিন্দু ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্ট বাস্তবায়িত একটি প্রকল্প। এই প্রকল্পের শিশুদের প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষার মাধ্যমে বিদ্যালয়ে গমনোপযোগী হিসেবে গড়ে তোলা হয়। সেসময় উপজেলা প্রশাসন সেই বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য বৃত্তিরও ব্যবস্থা করে।
তবে করোনার পর থেকে সারাদেশের মন্দিরভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষা কার্যক্রম প্রকল্পের আওতায় থাকা সব প্রাক-প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বেতন বন্ধ হয়ে যায়। দেড় বছরের বেতন বকেয়া থাকায় চলতি বছরের জানুয়ারিতে চাকরি ছেড়ে দেন ত্রিপুরাপল্লীর সেই প্রাক-প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা দিপন বালা ত্রিপুরা। এরপর থেকেই বন্ধ আছে ত্রিপুরাপল্লীর সেই স্কুল। স্কুল বন্ধ থাকায় মনাই ত্রিপুরা পল্লীর প্রায় ৫০ জন শিশুর শিক্ষাজীবন এখানেই শেষ হবার উপক্রম হয়েছে।
মনাই ত্রিপুরাপল্লীর বাসিন্দা হৃদয় ত্রিপুরা বলেন, ‘জানুয়ারি থেকে স্কুলটি বন্ধ। টিচারকে বেতন দিচ্ছে না বলে চাকরি ছেড়ে দিয়েছেন। সেখানে যারা পড়তো তারা গ্রামের কাছাকাছি একটা স্কুলে ভর্তি হয়েছে’।
শিক্ষিকা দিপন বালা ত্রিপুরা বলেন, দেড় বছর ধরে বেতন না দেওয়ায় আমি জানুয়ারিতে চাকরি ছেড়ে দিয়েছি। তবে গত মাসের মাঝামাঝি সময়ে ৬ মাসের বেতন দিয়েছে, আরো ১২ মাসের বেতন বাকি। দ্রুত আমার বকেয়া বেতন দেওয়ার দাবি জানাই।
মন্দিরভিত্তিক গণশিক্ষা কার্যক্রম চট্টগ্রাম অঞ্চলের সহকারি পরিচালক রিংকু কুমার শর্মা বলেন, করোনার কারণে বেতন বন্ধ ছিল। সারাদেশে ৭ হাজারের বেশি শিক্ষক আছে, সবার বেতন বন্ধ। ধীরে ধীরে বেতন দিয়ে দেওয়া হবে। পূর্বের শিক্ষক চাকরি ছেড়ে দেওয়ায় নতুন শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হবে।
মনাই ত্রিপুরা পাড়ার সভাপতি সচিন ত্রিপুরা বলেন, শিশু শিক্ষার্থীদের একমাত্র শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি বন্ধ হয়ে গেলেও উপজেলা প্রশাসন থেকে এ নিয়ে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। আমি নিজে কয়েকবার স্কুল চালুর জন্য মন্দিরভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষার কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। কিন্তু তারা নতুন করে কোনো শিক্ষক নিয়োগ দিচ্ছে না।
জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান বলেন, পাহাড়ি গ্রাম সোনাই ও মনাই ত্রিপুরা পল্লীতে সরকার শিক্ষার আলোসহ নানা সুবিধা পৌঁছে দিয়েছে। কিন্তু স্কুলগুলো যে বন্ধ হয়ে গেছে, সেটি আমাকে কেউ জানায়নি। খুব শীঘ্রই স্কুলটি চালু হবে।সূত্র:বাংলানিউজ২৪।