ই-পেপার | রবিবার , ২৪শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) সংশোধনের ভোগান্তি কমাতে মাঠপর্যায়ে গণশুনানির সিদ্ধান্ত:ইসি

নিজস্ব প্রতিবেদক:

জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) সংশোধনের আবেদন দ্রুত নিষ্পত্তির পাশাপাশি ভোগান্তি কমাতে মাঠপর্যায়ে গণশুনানির সিদ্ধান্ত দিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এক্ষেত্রে উপজেলা, জেলা ও আঞ্চলিক পর্যায়ে প্রতি সপ্তাহে করা হবে শুনানি।

ইসি কর্মকর্তারা জানান, কোন কর্মকর্তার কার্যালয়ে সপ্তাহে কোন কোন বার শুনানি হবে, সে পরিকল্পনা তৈরি করে পাঠানোর জন্যও নির্দেশনা দিয়েছে সংস্থাটি।ইসির এনআইডি অনুবিভাগের পরিচালক (অপারেশন্স) মো. ফরহাদ হোসেন নির্দেশনাটি ইতোমধ্যে মাঠ পর্যায়ে পাঠিয়েছেন।

এতে বলা হয়, জাতীয় পরিচয়পত্রের অনলাইন সংশোধন সেবা সহজ করার লক্ষ্যে মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের ক্ষমতায়ন করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা নিজ আওতাভুক্ত আবেদনগুলোর সংযুক্ত বিভিন্ন দলিল যাচাই-বাছাই এবং প্রয়োজনানুসারে তদন্তের পর আবেদন নিষ্পত্তি (অনুমোদন বা আংশিক অনুমোদন বা বাতিল) করবেন।

সম্প্রতি চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে এক মাসিক সমন্বয় সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তারা নিজ এবং আওতাধীন সিনিয়র জেলা বা জেলা ও উপজেলা বা থানা নির্বাচন অফিসের জাতীয় পরিচয়পত্র সেবা দেওয়ার ক্ষেত্রে প্রতি সপ্তাহে কোন কোন দিন শুনানি নেবেন, সেই তথ্য জানানোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, মাঠপর্যায়ে জাতীয় পরিচয়পত্র সেবা দেওয়ার ক্ষেত্রে প্রতি সপ্তাহে এক অথবা দুই দিন শুনানি নিয়ে অনিষ্পন্ন আবেদন নিষ্পন্ন করার জন্য অনুরোধ জানানো হয়েছে।

সেই সঙ্গে চিঠি পাওয়ার তিন কার্যদিবসের মধ্যে আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা ও তার আওতাধীন সব সিনিয়র জেলা বা জেলা ও উপজেলা বা থানা নির্বাচন অফিসে সপ্তাহে কোন এক বা দুই দিন শুনানি নেবেন, তার সমন্বিত তথ্য পাঠাতে হবে।

জানা গেছে, নানা উদ্যোগের পরও জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) সংশোধনে নাগরিকদের ভোগান্তি যেন দূরই হচ্ছে না। একেকটি আবেদন নিষ্পত্তিতে লেগে যাচ্ছে মাসের মাসের পর। ফলে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) টেবিলে পড়ে আছে সাড়ে পাঁচ লাখ অনিষ্পন্ন আবেদন।

ইসি সূত্রগুলো জানায়, আবেদন আসার পর সেগুলোর জটিলতা অনুযায়ী ক, খ, গ ও ঘ- এ চার ক্যাটাগরিতে (শ্রেণি) ফেলা হয়। এক্ষেত্রে ১০টি নির্বাচনী অঞ্চলের জন্য ১০ জন কর্মকর্তা রয়েছেন। এক্ষেত্রে কোনো আবেদন কোনো ক্যাটাগরিতে ফেলতে দেরি হলে তা নিয়ে কোনো কাজই করা হয় না।

ক্যাটাগরিতে ফেললেও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা আবার নানা অজুহাতে পরবর্তী কার্যক্রম হাতে নেন না। তদন্ত করতেও দেরি করা হয়। মূলত এসব কারণে এনআইডি সংশোধন আবেদন নিষ্পত্তিতে মাসের পর মাস লেগে যায়। কোনো কোনো আবেদন বছরের পর বছরও পড়ে থাকার নজিরও আছে।

বর্তমানে ইসির কাছে থাকা সাড়ে পাঁচ লাখের বেশি অনিষ্পন্ন আবেদনের মধ্যে ক ক্যাটাগরিতে এক লাখ ৩০ হাজার ৪২৬টি, খ ক্যাটাগরিতে দুই লাখ ৫১টি, গ ক্যাটাগরিতে দুই লাখ চার হাজার ২৫৫ টি ও ঘ ক্যাটাগরিতে সাত হাজার ৬৬৫টি আবেদন পড়ে আছে। এ ছাড়া ৯ হাজার ১১৫টি আবেদন এখনো ক্যাটাগরি করা হয়নি। সব মিলিয়ে পাঁচ লাখ ৫১ হাজার ৫১২টি আবেদনের নিষ্পত্তি হয়নি।

ইসি কর্মকর্তারা জানান, এনআইডি সংশোধনের আবেদন ক্যাটাগরিকরণ ও দ্রুত নিষ্পত্তির লক্ষ্যে ১০ জন আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা, প্রত্যেক অঞ্চল থেকে একজন করে সিনিয়র জেলা বা জেলা নির্বাচন অফিসার, অতিরিক্ত আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা, অতিরিক্ত জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা, নির্বাচন কর্মকর্তা, থানা বা উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও সহকারী থানা বা উপজেলা কর্মকর্তা, নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের ১০ কর্মকর্তা, জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগের ১০ কর্মকর্তা, নির্বাচনী প্রশিক্ষণ ইনিস্টিটিউটের পাঁচ কর্মকর্তা, স্মার্টকার্ড তথা আইডিইএ প্রকল্পের পাঁচ কর্মকর্তার অংশগ্রহণে একটি প্রশিক্ষণ কর্মশালার প্রস্তাব করা হয়েছে।
আগামী ২৬ মে প্রশিক্ষণ কর্মসূচিটি হওয়ার কথা রয়েছে।

মাঠপর্যায়ে শুনানি করা হলে তদন্ত জটিলতা অনেকাংশেই কমে যাবে। এনআইডি সংক্রান্ত আবেদন নিষ্পত্তিতে গতিও বাড়বে, এমনটি মনে করা হচ্ছে।