ই-পেপার | শুক্রবার , ২২শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

১৫৩ রোহিঙ্গার জন্ম নিবন্ধন: চেয়ারম্যান বরখাস্ত

বিশেষ প্রতিনিধি :

১৫৩ রোহিঙ্গার ভুয়া জন্ম নিবন্ধন সনদ দেওয়ার প্রক্রিয়ায় জড়িত থাকার অভিযোগে মৌলভীবাজারের রাজনগর উপজেলার এক ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যানকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।

বুধবার (২৪ এপ্রিল) রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে স্থানীয় সরকার বিভাগের সিনিয়র সহকারী সচিব এ.কে.এম আনিছুজ্জামানের স্বাক্ষরিত প্রজ্ঞাপনে রাজনগর উপজেলার ফতেপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নকুল চন্দ্র দাসকে বরখাস্ত করা হয়।

তবে এ বিষয়ে মৌলভীবাজারের জেলা প্রশাসক উর্মি বিনতে সালাম বলেন, “একটি চিঠি এসেছে। আমি এখনও দেখিনি।”

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, গত বছরের ১৮ সেপ্টেম্বর শরীয়তপুর আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে আছিয়া বিবি (২৭) নামে একজন রোহিঙ্গা নারী পাসপোর্ট করতে গিয়ে কর্তৃপক্ষের হাতে আটক হন। নাগরিকত্ব সনদ না থাকায় জন্মনিবন্ধন সনদ দিয়ে পাসপোর্ট করতে যান তিনি। আছিয়া আক্তার যে নিবন্ধন দিয়ে পাসপোর্ট করতে গিয়েছিলেন সেটি রাজনগর উপজেলার ফতেহপুর ইউনিয়ন থেকে নিবন্ধিত। যা গত বছরের ৯ সেপ্টেম্বর ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয় থেকে নিবন্ধিত হয়। আটক ওই নারী কক্সবাজারের টেকনাফ থানার আলী যোহার ও আম্বিয়া খাতুন দম্পতির মেয়ে বলে জানিয়েছেন।

বিষয়টি যাচাই করার জন্য ওই সময় ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ মৌলভীবাজারের রাজনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে পাঠালে তিনি ফতেহপুর ইউনিয়নের সচিব পাপড়ি দত্তকে কার্যালয়ে ডেকে নেন। পরে ওই ইউনিয়নের জন্ম নিবন্ধনের আইডি নিষ্ক্রিয় করে রাখা হয়।

যাচাই করতে গিয়ে ইউএনও দেখেন, ৯ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ১৫৩টি ভুয়া জন্ম নিবন্ধন হয়েছে। প্রাথমিকভাবে তাদের সবাইকে রোহিঙ্গা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়।

এ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে ফতেহপুর ইউপি চেয়ারম্যান নকুল চন্দ্র দাস রাজনগর থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন।

রেজিস্ট্রার জেনারেলের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, জন্ম নিবন্ধনের সার্ভারের কার্যক্রম ওটিপি-ভিত্তিক (ওয়ান টাইম পাসওয়ার্ড)। ওটিপি আসার পর স্থানীয় চেয়ারম্যান যাচাই করে নিবন্ধনের সুপারিশ করেন। এই প্রক্রিয়ায় সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদের সুপারিশ বা সহায়তা অবশ্যই প্রয়োজন হয়।

এ ঘটনায় রেজিস্ট্রার জেনারেলের কার্যালয় থেকেও তদন্ত করা হয়। রেজিস্ট্রার জেনারেল (অতিরিক্ত সচিব) মো. যাহিদ হোসেন বলেন, “এ ঘটনায় আমরা তদন্ত করেছি। দায়ী ব্যক্তিদের আমরা চিহ্নিত করেছি। তদন্ত প্রতিবেদন তৈরি করে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।”

রেজিস্ট্রার জেনারেলের কার্যালয় থেকে তদন্ত প্রতিবেদন পাঠানোর পর স্থানীয় সরকার বিভাগ গত বুধবার ফতেহপুর ইউপি চেয়ারম্যান নকুল চন্দ্র দাসকে পদ থেকে সাময়িক বরখাস্ত করে।

বরখাস্তের প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, “অসৎ উদ্দেশ্যে রোহিঙ্গাদের জন্ম নিবন্ধন করায় স্থানীয় সরকার আইন, ২০০৯ অনুযায়ী রেজিস্ট্রার জেনারেল, জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সুপারিশ করেন। যেহেতু ইউপি চেয়ারম্যান নকুল চন্দ্র দাসের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে- তার দ্বারা ইউনিয়ন পরিষদের ক্ষমতা প্রয়োগ প্রশাসনিক দৃষ্টিকোণে সমীচীন নয় মর্মে সরকার মনে করে। আইন অনুযায়ী ইউনিয়ন চেয়ারম্যানকে স্বীয় পদ হতে সাময়িক বরখাস্ত করা হলো।”

স্থানীয় সরকার বিভাগের সিনিয়র সহকারী সচিব এ কে এম আনিছুজ্জামান বলেন, “রেজিস্ট্রার জেনারেলের কাছ থেকে তদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পর ওই ইউনিয়ন চেয়ারম্যানকে বরখাস্ত করেছি।”

এ বিষয়ে অভিযুক্ত নকুল চন্দ্র দাস বলেন, “সার্ভার হ্যাক হয়ে ভুয়া নিবন্ধন হয়েছে। এসব নিবন্ধনে আমাদের স্বাক্ষর নেই। মন্ত্রণালয় থেকে কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে তা আমার জানা নেই।”