ই-পেপার | শনিবার , ২৩শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

রেকর্ড গরমে পুড়ছে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার

বিশেষ প্রতিবেদক :

চট্টগ্রাম-কক্সবাজারে তীব্র তাপদাহে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে জনজীবন। এমন তাপদাহের কারণে জ্বর, ডায়রিয়াসহ বিভিন্ন রকম অসুখে আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ। দেখা দিয়েছে হিটস্ট্রোকও। ভ্যাপসা গরমে শরীরের তাপমাত্রা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে হিটস্ট্রোকের ঝুঁকিও বেড়ে যাচ্ছে।

 

হিটস্ট্রোকে আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা পেতেও দেরী হচ্ছে। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন ওয়ার্ডে ভর্তি দেওয়া হচ্ছে হিটস্ট্রোকে আক্রান্ত রোগী ও ঝুঁকিতে থাকা রোগীদের। কিন্তু যথাসময়ে চিকিৎসা ও পরীক্ষা-নিরীক্ষা অভাবে রোগী অবস্থার অবনতি হচ্ছে।

 

বিশেষজ্ঞ ডাক্তাররা জানান, শরীরের তাপমাত্রা ১০৪ থেকে ১০৫ ডিগ্রি ফারেনহাইট অতিক্রম করলেও সেটিকে ‘ভাইরাল ফিভার’ বলে মনে করে প্যারাসিটামল খাচ্ছেন রোগীরা। তবে হিটস্ট্রোকের জ্বরে ঘাম থাকবে না। সাধারণ জ্বর ৬ ঘণ্টা পর কমে যাবে, তবে হিটস্ট্রোকের ক্ষেত্রে সেটি হবে না। তাই জ্বরের অবস্থা দেখে রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি হতে হবে।

 

জানা গেছে, হিটস্ট্রোকের আগে অপেক্ষাকৃত কম মারাত্মক হিট ক্র্যাম্প অথবা হিট এক্সহসশন হতে পারে। হিট ক্র্যাম্পে শরীরের মাংসপেশিতে ব্যথা হয়, শরীর দুর্বল লাগে এবং প্রচণ্ড পিপাসা পায়। এর পরের ধাপে হিট এক্সহসশনে দ্রুত শ্বাস-প্রশ্বাস, মাথাব্যথা, ঝিমঝিম করা, বমিভাব, অসংলগ্ন আচরণ দেখা দেয়। এই দুই ক্ষেত্রেই শরীরের তাপ নিয়ন্ত্রণ ঠিক থাকে এবং শরীর অত্যন্ত ঘামতে থাকে। এই অবস্থায় দ্রুত ব্যবস্থা না নেওয়া হলে হিটস্ট্রোক হতে পারে। এই সময় শরীরের তাপমাত্রা ১০৫ ডিগ্রি ফারেনহাইট ছাড়িয়ে যাবে। ঘাম বন্ধ হয়ে যাবে, ত্বক শুষ্ক ও লালচে হয়ে যাবে, নিশ্বাস দ্রুত হবে। নাড়ির স্পন্দন ক্ষীণ ও দ্রুত হবে, রক্তচাপ কমে যাবে, খিঁচুনি, মাথা ঝিমঝিম করা, অস্বাভাবিক আচরণ, হ্যালুসিনেশন, অসংলগ্নতাসহ প্রসাবের পরিমাণ কমে যাবে। রোগী শকে চলে গিয়ে অজ্ঞান হয়ে যাবে।

 

এই বিষয়ে চট্টগ্রাম মেডিকেলের মেডিসিন বহির্বিভাগের রেসিডেন্ট ফিজিশিয়ান (আরপি) ডা. মো. শাহেদ উদ্দিন বলেন, ‘সারাদেশের মত চট্টগ্রামেও তীব্র তাপদাহে দিশেহারা মানুষ। জ্বর, নিউমোনিয়া, ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছেন অনেকে। হাসপাতালে বাড়ছে ভীড়। এর মধ্যে চট্টগ্রাম মেডিকেলের মেডিসিন বহির্বিভাগে জ্বরের রোগী বাড়ছে। কিন্তু সেই জ্বরের রোগী ‘ভাইরাল ফিভার’ ভেবে বাড়িতে কালক্ষেপণ করে হাসপাতালে আসছেন।’

 

চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার মেডিকেলের সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, বহির্বিভাগে হিটস্ট্রোকের রোগী আসার পর তাদের ডায়াগনোসিস না করে ১৩, ১৪, ১৬ নম্বর ওয়ার্ডে ভর্তি দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু সেই জ্বর ‘ভাইরাল ফিভার’ নাকি হিটস্ট্রোক হয়েছে, তা জানতে ডায়াগনোসিস করতেই পুরো দেড় থেকে দু’দিন চলে যাচ্ছে। এমন অনেক রোগীর দেখা মিলেছে তিন ওয়ার্ডে। এছাড়া রোগীর শরীর থেকে লবণ বের হয়ে গেলেও তা জানতে ইলেকট্রোলাইট পরীক্ষা করাতেও দেরী হচ্ছে। ফলে রোগীর অবস্থা অবনতি হয়ে শকে চলে যাচ্ছে।

 

কক্সবাজারের পোকখালীর বাসিন্দা ইশরাক রাইয়ান নামের এক রোগী ভর্তি আছেন কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালে। হঠাৎ করেই তার জ্বর ওঠে। পরে স্থানীয় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে সেখান থেকে কক্সবাজার মেডিকেলে পাঠানো হয় তাকে।

 

চট্টগ্রাম মেডিকেলের মেডিসিন বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডা. অনিরুদ্ধ ঘোষ জয় চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘হিটস্ট্রোকে আক্রান্ত রোগীদের জ্বর ও পানিশূন্যতা নিয়ে একটা ঘাপলা থাকে। সেটি নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষার প্রয়োজন পড়ে। সাধারণ কিছু নির্ণায়কও থাকে। যা আমরা ডায়াগনোসিস রিপোর্ট দেখেই নিশ্চিত হতে পারি। বসন্তের শেষের দিকে এবং গ্রীষ্মের শুরুতে কিছু ব্যাকটেরিয়া ও ভাইরাস সক্রিয় হয়ে ওঠে উল্লেখ করে তিনি বলেন, মানুষের মধ্যে জ্বর, কাশি, ডায়রিয়া ইত্যাদি রোগ ছড়ানোর জন্য এইসব অণুজীব দায়ী। তিনি বলেন, দূষিত পানি ও খাবারের মাধ্যমে অণুজীবগুলি বেশিরভাগ রোগ ছড়ায়। তাই খাদ্য ও পানীয় জল গ্রহণে মানুষকে সতর্ক থাকতে হবে।’

 

এদিকে পতেঙ্গা প্রধান আবহাওয়া কার্যায়লয়ের পূর্বাভাস কর্মকর্তা মো. জহিরুল ইসলাম বলেন, ‘বুধবার (১৭ এপ্রিল) চট্টগ্রামের তাপমাত্রা সর্বোচ্চ ৩৪ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। যা স্বাভাবিকের চেয়ে ২ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি। সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ২৭ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা স্বাভাবিকের চেয়ে ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি। তবে দিন ও রাতের তাপমাত্রা সামান্য পরিবর্তন হতে পারে।’