নিজস্ব প্রতিবেদক:
রাজশাহী: আর কোনো অপরাধে না জড়ানোর কারণে সংশোধনের জন্য প্রবেশনে থাকা ৩৫ শিশুর হাতে ফুল ও জাতীয় পতাকা দিয়ে চূড়ান্ত মুক্তি দিয়েছেন রাজশাহীর শিশু আদালত-২।
সোমবার (২৫ মার্চ) বেলা ১১টার দিকে আদালতে এ শিশুদের মামলাগুলোর দীর্ঘ চূড়ান্ত শুনানি অনুষ্ঠিত হয়।এরপর প্রবেশনে থাকার সময় যথাযথ নির্দেশনানুযায়ী সন্তোষজনক আচরণ করায় আদালতের বিচারক মুহা. হাসানুজ্জামান তাদের চূড়ান্ত মুক্তির আদেশ দেন।
আদালত সূত্রে জানা গেছে, এসব শিশুদের কারো বিরুদ্ধে মারামারির অভিযোগ ছিল, কেউ বা কারও শ্লীলতাহানি ঘটিয়েছিল। এছাড়া মাদক সেবন কিংবা পরিবহনেও জড়িয়ে পড়েছিল কেউ কেউ। আদালতে তাদের অভিযোগও প্রমাণ হয়। তবে শিশু বয়স বিবেচনায় তাদের কারাগারে না পাঠিয়ে প্রবেশনের মাধ্যমে সংশোধনের সুযোগ দেন আদালত। এজন্য বই পড়া, বাবা-মায়ের সঙ্গে ভালো ব্যবহার করা, অভিযোগকারীর সঙ্গে বিরোধ নিষ্পত্তিসহ বেশকিছু শর্তও জুড়ে দেওয়া হয়েছিল।
রাজশাহী জেলা প্রবেশন কর্মকর্তা মো. মনিরুজ্জামান জানান, শিশু আইন-২০১৩ শিশুদের সর্বোচ্চ স্বার্থ সংরক্ষণ করেছে। এ আইনের ৪৮ ধারায় শিশুদের অপরাধের জন্য তাদের কারাগারে না পাঠিয়ে বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তির সুযোগ আছে। এ আইনের ৩৭ ধারায় অভিযুক্ত শিশু ও অভিযোগকারী পক্ষের সঙ্গে আলোচনার সুযোগ রয়েছে প্রবেশন কর্মকর্তার। সে আইন অনুযায়ীই অভিযোগকারীর সঙ্গে শিশুদের বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি করা হয়েছে।
আদালত এ শিশুদের কারাগারে না পাঠিয়ে সংশোধনের জন্য প্রবেশন কর্মকর্তার তত্ত্বাবধানে বিভিন্ন মেয়াদে প্রবেশন দিয়েছিলেন। বাড়িতে থেকে তাদের বই পড়া, বাবা-মায়ের সঙ্গে সদাচরণ, একই অপরাধ আবার না করা কিংবা কোনো অপরাধেই না জড়ানোসহ বেশকিছু শর্ত দেওয়া হয়েছিল।
প্রবেশন কর্মকর্তা দুই মাস পর পর তাদের কার্যক্রমের ওপর আদালতে প্রতিবেদন দিয়েছেন। এমন তিনটি প্রতিবেদনের পর প্রবেশন কর্মকর্তা একটি চূড়ান্ত প্রতিবেদন দিয়েছিলেন। সে প্রতিবেদনের ওপর শুনানি করে শিশুদের চূড়ান্ত মুক্তি দেওয়া হয় আজ।
এদিকে চূড়ান্ত মুক্তিপ্রাপ্ত শিশুরা কাঠগড়া থেকে বাইরে বের হওয়ার সময় আদালতের পক্ষে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী শামসুন্নাহার মুক্তি ও জেলা প্রবেশন কর্মকর্তা মো. মনিরুজ্জামান প্রত্যেক শিশুর হাতে একটি করে গোলাপ ও রজনীগন্ধা ফুল তুলে উপহার দেন।
এছাড়া তাদের একটি করে কাগজের তৈরি জাতীয় পতাকা দেওয়া হয়। আদালতের পক্ষ থেকে এমন উপহার পেয়ে শিশুরা খুশিমনে বাবা-মায়ের সঙ্গে বাড়ি ফিরে যায়।