ই-পেপার | শুক্রবার , ২২শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

পাকিস্তান-আফগানিস্তান উত্তেজনা তুঙ্গে, সীমান্তে গোলাগুলি

আন্তর্জাতিক ডেস্ক:

আফগানিস্তানের অভ্যন্তরে রাতারাতি বিমান হামলা শুরু করেছে পাকিস্তান। এর কয়েক ঘণ্টা পরে সীমান্ত পেরিয়ে গুলি চালানোর দাবি করেছে তালেবান। এ নিয়ে দুই দেশের সীমান্তে উত্তেজনা দেখা দেয়।

 

আলজাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়, সোমবার রাতভর অভিযানের পর ইসলামাবাদ ও কাবুলের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। পাকিস্তান বলেছে, সীমান্ত এলাকায় লুকিয়ে থাকা সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোকে লক্ষ্য করে এই হামলা চালানো হয়েছে। তালেবান জানিয়েছে, হামলায় আট নারী ও শিশু নিহত হয়েছে।

 

আফগানিস্তানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় পরে দাবি করেছে, সীমান্ত পেরিয়ে পাকিস্তানের লক্ষ্যে গুলি চালানো হয়েছে। ইসলামাবাদ এখনো এই দাবির বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি। িপাকিস্তানের সামরিক ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সূত্র আল জাজিরাকে নিশ্চিত করে বলেছে, ‘প্রতিশোধমূলক’ আক্রমণগুলো তেহরিক-ই-তালেবান পাকিস্তান (টিটিপি) বা পাকিস্তানি তালেবানের কমান্ডারদের আস্তানাগুলো লক্ষ্য করে চালানো হয়েছে।পাকিস্তানের দাবি, সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপগুলো আফগান ভূখণ্ড থেকে পরিচালিত হচ্ছে। এতে পৃষ্ঠপোষকতা করছে দেশটি।

 

শনিবার আফগানিস্তানের সীমান্তবর্তী পাকিস্তানের খাইবার পাখতুনখাওয়া প্রদেশের উত্তর ওয়াজিরিস্তান জেলায় একটি সামরিক চেকপোস্টকে লক্ষ্য করে একদল আত্মঘাতী বোমা হামলা চালায়। এতেু সাত সেনা নিহত হয়।আফগানিস্তানের অন্তর্বর্তী সরকার বলেছে, পাকিস্তানি জেট বিমান পাকতিকা ও খোস্ত প্রদেশে ‘সাধারণ মানুষের’ বাড়িতে হামলা করেছে। এতে অন্তত আটজন নিহত হয়েছে। এর মধ্যে পাঁচ নারী ও তিন শিশু ছিল।

 

এক্স-এ জারি করা এক বিবৃতিতে তালেবান সরকারের মুখপাত্র জাবিহুল্লাহ মুজাহিদ বলেছেন, পাকিস্তান যাকে টার্গেট করার দাবি করেছে সে পাকিস্তানেই থাকে।কাবুল এই পদক্ষেপকে ‘বেপরোয়া’ ও আফগান ভূখণ্ডের লঙ্ঘন বলে ‘তীব্র নিন্দা’ জানিয়েছে।

 

বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘বিশ্বের পরাশক্তির বিরুদ্ধে স্বাধীনতা সংগ্রামের দীর্ঘ অভিজ্ঞতা সম্পন্ন আফগানিস্তান কাউকে তার ভূখণ্ডে আগ্রাসন করতে দেয় না।’২০২১ সালে তালেবান সরকার ক্ষমতা দখলের পর থেকে পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা বেড়েছে। ইসলামাবাদ দাবি করে, সশস্ত্র শত্রু গোষ্ঠীরা সীমান্তের ওপার থেকে নিয়মিত হামলা চালায়।

 

আফগানিস্তান ২০২২ সালের এপ্রিলে জানিয়েছে, দেশটির পূর্ব অঞ্চলে পাকিস্তানি বিমান হামলায় ৪৭ জন নিহত হয়েছে।বিশ্লেষকরা বলছেন, সোমবারের হামলার দুই দিন আগে উত্তর ওয়াজিরিস্তানে আত্মঘাতী হামলার সঙ্গে নবগঠিত গোষ্ঠী জয়শ-ই-ফুরসান-ই-মুহাম্মদ জড়িত থাকতে পারে। গোষ্ঠীটির নেতৃত্বে পাকিস্তানি তালেবানের (টিটিপি) নেতা হাফিজ গুল বাহাদুর রয়েছে।জবাবে পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফ বলেছেন, সশস্ত্র গোষ্ঠীরা আফগান ভূমি ব্যবহার করে পাকিস্তানের অভ্যন্তরে সন্ত্রাসী হামলা চালাচ্ছে।

 

রোববার তিনি বলেন, ‘আমাদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবাদের বেশিরভাগই আফগানিস্তান থেকে পরিচালিত হচ্ছে।’ তবে তালেবান সরকার বারবার এই অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে।মুজাহিদ বলেছিলেন, ‘আমরা আফগানিস্তানে যে কোন বিদেশি গোষ্ঠীর উপস্থিতি প্রত্যাখ্যান করি। তাদের আফগান ভূমি ব্যবহার করার অনুমতি নেই। এ ব্যাপারে আমরা আমাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি এবং চালিয়ে যাচ্ছি। তবে একটি জিনিস আমাদের অবশ্যই মেনে নিতে হবে যে আফগানিস্তান ও পাকিস্তানের দীর্ঘ সীমান্ত রয়েছে। সীমান্ত অঞ্চলটিতে পাহাড় ও বনসহ রুক্ষ ভূখণ্ডের পাশাপাশি এমন দুর্গম জায়গা রয়েছে যা আমাদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে হতে পারে।

রক্তাক্ত বছর

গত বছর পাকিস্তানজুড়ে ৬৫০টির বেশি হামলার খবর পাওয়া গেছে। এত প্রায় ১ হাজার নিহত হয়েছেন যাদের বেশিরভাগই নিরাপত্তা কর্মী। বেশিরভাগ হামলাই আফগানিস্তানের সীমান্তবর্তী খাইবার পাখতুনখাওয়া ও বেলুচিস্তানের পশ্চিমাঞ্চলীয় প্রদেশকে লক্ষ্য করে ঘটেছে।

 

যদিও বিভিন্ন সশস্ত্র গোষ্ঠী পাকিস্তানে সহিংসতার কাজ করেছে তবে রাষ্ট্রের প্রধান প্রতিপক্ষ টিটিপি আদর্শগতভাবে আফগান তালেবানের সঙ্গে সম্পর্কিত। ২০০৭ সালে গোষ্ঠীটি প্রতিষ্ঠার পর থেকে পাকিস্তানে বেসামরিক ও আইন প্রয়োগকারী কর্মীদের লক্ষ্যবস্তু করেছে। এতে হাজার হাজার মানুষ মারা গেছে।দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়ার সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর নিয়ে সুইডেনভিত্তিক গবেষক আবদুল সাঈদ বলেছেন, সোমবার পাকিস্তানের বিমান হামলাটিকে দুই দিন আগের আত্মঘাতী হামলার প্রতিক্রিয়া বলে মনে হচ্ছে।

 

ইসলামাবাদ-ভিত্তিক নিরাপত্তা বিশ্লেষক ও পাকিস্তান ইনস্টিটিউট অব পিস স্টাডিজ (পিআইপিএস) এর পরিচালক মুহাম্মদ আমির রানা বলেছেন, রমজান মাসে টিটিপি বা অন্যান্য সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর পক্ষে আক্রমণ চালানো অস্বাভাবিক কিছু নয়৷

 

রানার মতে, সোমবারের বিমান হামলার পর পাকিস্তানে লক্ষ্যবস্তুতে প্রতিশোধমূলক হামলার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যায় না। কূটনৈতিক চ্যানেলগুলো সক্রিয় না হলে আগামী সপ্তাহগুলোতে দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা বাড়তে পারে।