ই-পেপার | সোমবার , ২৫শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

এমপি হওয়ার পর প্রচুর কৃষিজমির মালিক নিক্সন চৌধুরী, স্ত্রীর ৭ কোটি টাকা

ফরিদপুর প্রতিনিধি

মজিবুর রহমান চৌধুরী ওরফে নিক্সন চৌধুরী। ২০১৪ সালে ফরিদপুর–৪ (ভাঙ্গা, চরভদ্রাসন ও সদরপুর) আসন থেকে প্রথমবার জাতীয় সংসদ (দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন) নির্বাচনে অংশ নিয়ে বিজয়ী হন। ওই নির্বাচনে তাঁর দাখিলকৃত হলফনামায় কৃষি জমির পরিমাণ ছিল মাত্র শূন্য দশমিক ৩৮ শতাংশ। এবার দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দাখিলকৃত হলফনামায় জমির পরিমাণ দেখিয়েছেন প্রায় ৬২ বিঘা।

সে হিসাবে ১০ বছরে নিক্সন চৌধুরীর কৃষি জমি প্রায় শূন্য থেকে বেড়েছে বিপুল। এ ছাড়া অকৃষি জমি, স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদের পরিমাণ এবং বার্ষিক আয়ও বেড়েছে তাঁর। নিক্সন চৌধুরী তৃতীয়বারের মতো ওই আসন থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করছেন। ২০১৪ সালে প্রথমবার স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে আনারস প্রতীকে এবং ২০১৮ সালে দ্বিতীয়বার স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে সিংহ প্রতীকে জয়লাভ করেন তিনি। বর্তমানে যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির প্রেসিডিয়াম সদস্য।

হলফনামায় দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, তাঁর শিক্ষাগত যোগ্যতা এসএসসি পাস। তিনি স্বাধীন বাংলা সার্ভিসিং অ্যান্ড ফিলিং স্টেশনের অংশীদার, নীপা পরিবহন ও রীতা কনস্ট্রাকশন লিমিটেডের পরিচালক এবং এন ডেইরি ফার্ম, এন ডাক ফার্ম ও এন ফিশারিজের স্বত্বাধিকারী।

নিক্সন চৌধুরী হলফনামায় বলেছেন, বর্তমানে তাঁর স্থাবর এবং অস্থাবর সম্পদ মোট ১১ কোটি ৮৭ লাখ ৯১ হাজার ৮৭৩ টাকা মূল্যের। স্বর্ণ রয়েছে মাত্র ৩০ তোলা। তাঁর স্ত্রীর নামে রয়েছে ৯ কোটি ৪২ লাখ ৯৭ হাজার ২৪২ টাকা মূল্যের সম্পদ এবং ৫০ তোলা স্বর্ণ।

দশ বছর আগে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দাখিলকৃত মনোনয়নপত্রের হলফনামায় কৃষি জমির পরিমাণ উল্লেখ করেছিলেন শূন্য দশমিক ৩৮ শতাংশ। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দাখিলকৃত হলফনামায় কৃষি জমির পরিমাণ দেখিয়েছেন ২০৪২ দশমিক ৫৬ শতাংশ, বা প্রায় ৬২ বিঘা (৩৩ শতাংশে এক বিঘা)। এর মধ্যে ২০৩৯ দশমিক ২৮ শতাংশ বা ৬১ দশমিক ৭৯ বিঘাই রয়েছে নিজ এলাকা ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলার ব্রাহ্মণপাড়ায়।

২০১৪ সালের হলফনামায় দেখা যায়, ২ কোটি ৫৭ লাখ ৯৫ হাজার ২৩০ টাকার অস্থাবর সম্পদ রয়েছে নিক্সন চৌধুরীর। স্থাবর সম্পদ হিসেবে উল্লেখ করেন—কৃষি জমির পরিমাণ শূন্য দশমিক ৩৮ শতাংশ, অকৃষি জমির পরিমাণ ১৭ দশমিক ১০ শতাংশ এবং স্ত্রীর নামে ৭ দশমিক ৫ কাঠা জমি ও একটি ফ্ল্যাট। সে সময় কোনো গাড়ি, প্লট, ফ্ল্যাট কিছুই ছিল না তাঁর।

২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে হলফনামায় উল্লেখ করেন, তাঁর অস্থাবর সম্পদ ২ কোটি ৯৮ লাখ ৩৯ হাজার ৩৯৮ টাকার মূল্যের এবং ৩০ তোলা স্বর্ণ রয়েছে। স্ত্রীর নামে ৬ কোটি ৪৬ লাখ ৬ হাজার ৪০ টাকা এবং স্বর্ণ রয়েছে ৫০ তোলা। স্থাবর সম্পদ হিসেবে কৃষি জমির পরিমাণ উল্লেখ করেন, নিজ নামে ভাঙ্গা উপজেলার ব্রাহ্মণপাড়ায় ৯৭৫ দশমিক ২৩ শতাংশ এবং ঢাকার সাভারে ৩ দশমিক ২৮ শতাংশ। এ ছাড়া নিজ নামে মাদারীপুরের শিবচরে ৫ কাঠার প্লট, রাজউক পূর্বাচলে ১০ কাঠার প্লট এবং বনানী ও গুলশানে একটি করে ফ্ল্যাট রয়েছে তাঁর।

আর দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের হলফনামায় দেখা যায়, নিজের নামে ও স্ত্রীর নামে সম্পদের পাহাড় গড়েছেন তিনি। অস্থাবর সম্পদ রয়েছে ৩ কোটি ২৩ লাখ ৬৪ হাজার ২৭৭ টাকা মূল্যের এবং স্ত্রীর নামে রয়েছে ৭ কোটি ৩৬ লাখ ৫১ হাজার ৬৪২ টাকার সম্পদ।

তিনটি নির্বাচনের হলফনামা বিশ্লেষণে দেখা যায়, দশ বছরেই নিক্সনের কৃষি জমি বেড়েছে ৫৪ গুন, স্ত্রীও হয়েছেন কোটিপতি।

হলফনামায় উল্লেখ করেন, বর্তমানে তাঁর নগদ টাকা রয়েছে ৩৮ লাখ ৩০ হাজার ৬০০ টাকা, ব্যাংকে জমা আছে ৭ কোটি ৪৫ হাজার ২৫৯ টাকা। ৯১ লাখ টাকা মূল্যের একটি জিপ গাড়ি, ৩০ তোলা অলংকার, ৯ লাখ ১০ হাজার টাকার ইলেকট্রিক সামগ্রী, ৭ লাখ ৭০ হাজার টাকার আসবাবপত্র, ১ লাখ ১০ টাকার বন্দুক/পিস্তল এবং ৪ লাখ ২০ হাজার টাকার পিয়ানো রয়েছে নিক্সন চৌধুরীর। এ ছাড়া পাঁচটি বেসরকারি কোম্পানিতে ১ কোটি ৬৪ লাখ ৬২ হাজার টাকার শেয়ার রয়েছে তাঁর।

এ ছাড়া স্ত্রীর কাছে নগদ রয়েছে ১ কোটি ৫২ লাখ ৮৫ হাজার ৬০০ টাকা, ব্যাংকে ৭ লাখ ২৩ হাজার ১৯১ টাকা, সাড়ে ৪ লাখ টাকার ইলেকট্রিক সামগ্রী এবং ৫০ তোলা স্বর্ণ, আইপিডিসি ফাইন্যান্সে বিনিয়োগ রয়েছে ২৮ লাখ ১৮ হাজার ৪৫১ টাকা এবং পাঁচটি বেসরকারি কোম্পানিতে শেয়ার রয়েছে ৫ কোটি ৪৩ লাখ ৭৪ হাজার ৪০০ টাকার।

সূত্র ; আজকের পত্রিকা