সালেহ আহমদ স’লিপক, সিলেট :
মৌলভীবাজারের নিখোঁজের খবর সোস্যাল মিডিয়ায় দেখে জনমনে দেখা দিয়েছে আতংক। অভিবাবক মহল ছেলে মেয়েদেরে নিজে পাহারা দিয়ে নিয়ে যাচ্ছে বিদ্যাপীঠে। সম্প্রতি নিখোঁজের ঘটনায় রাজনগর থানায় ২টি ও সদর থানায় ২টি জিডি হয়েছে। এসব পরিবারের মধ্যে ২টি পরিবার বলছে, তাদের নিকট মুক্তিপণ দাবি করছে একটি চক্র। নিখোঁজের ঘটনা নিয়ে জনমনে দেখা দিয়েছে কৌতুহল। এলাকাবাসী বলছে, বিষয়টি রহস্যজনক। অনেকে আবার ছেলেমেয়ে স্কুল-কলেজে পাঠাতে ভয় পাচ্ছেন। স্কুল, কলেজ থেকেও সতর্ক করে দেওয়া হচ্ছে শিক্ষার্থীদেরকে।
সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, রাজনগর উপজেলার কদমহাটা গ্রামের শাহানা আক্তার (১৮) নামে এক তরুণী নিখোঁজ হয়। সে রাজনগর মাওলানা মোফাজ্জাল হোসেন মহিলা ডিগ্রী কলেজের একাদশ শ্রেণির ছাত্রী।
নিখোঁজ শাহানা আক্তারের মা রেহানা বেগম বলেন, ১৬ নভেম্বর সকালে কলেজ যাওয়ার উদ্দেশ্যে শাহানা বাড়ি থেকে বের হয়। এরপর থেকে তার কোনও খোঁজ পাওয়া যায়নি। রাজনগর থানায় জিডি করেছি।
রাজনগর থানার পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, এটা প্রেম সংক্রান্ত ঘটনা ছিল। প্রেমের টানে মেয়েটি পালিয়ে যায়। তাকে উদ্ধার করা হয়েছে।
রাজনগরের শারমপুর গ্রামের মোছাম্মৎ ফাতেমা বেগম (১৬)। রাজনগর মাওলানা মোফাজ্জাল হোসেন মহিলা ডিগ্রী কলেজ একাদশ শ্রেণির ছাত্রী। সে গত অক্টোবর মাসে কলেজে যাওয়ার কথা বলে বাড়ি থেকে বের হয়ে নিখোঁজ হয়। ঘটনাটি প্রেমঘটিত বলে তার পরিবারের দাবি। উদ্ধারের পর রাজনগর থানায় বসে এবিষয়ে মীমাংসা হয় বলে ইউপি সদস্য কুটি মিয়া জানান।
বুধবার (১৫ নভেম্বর) রাজনগর পলিটেকনিক কলেজের ৯ম শ্রেণীর ছাত্র, মজিদপুর গ্রামের তায়িফ আহমেদ নিখোঁজ হয়। পরে তাকে ঢাকায় অবচেতন অবস্থায় পাওয়া যায়। এব্যাপারে তার পরিবার মুখ খুলতে নারাজ এবং থানায় জিডিও করেনি।
রাজনগর গবিন্দপুর গ্রামের সোলেমান মিয়ার মেয়ে ইমা বেগম (১৬) নিখোঁজের খবর সোস্যাল মিডিয়া দেখা গেলেও তার পরিবার এব্যাপারে মুখ খুলতে অপারগতা প্রকাশ করে। তারা ঘটনা এড়িয়ে গিয়ে বলেন, ইমা বেগম বোনের বাড়ি গিয়েছিল।
সদর উপজেলার নাজিরাবাদ ইউনিয়নের নাজিরাবাদ গ্রামের মোস্তাকিন মিয়ার মেয়ে নাদিয়া আক্তার (১৭) গত ১৪ নভেম্বর সকাল ৯টায় কলেজের কথা বলে বাসা থেকে বের হয়। এরপর আর বাড়ি ফেরেনি। সে মৌলভীবাজার শহরের শাহ্ মোস্তফা কলেজে একাদশ শ্রেণীতে পড়ালেখা করে।
নিখোঁজ নাদিয়া আক্তারের পিতা মোঃ মোস্তাকিন মিয়া বলেন, আমার মেয়ে কলেজে যাওয়ার জন্য বাসা থেকে বের হয়। এরপর আর আসেনি। সব জায়গায় খোঁজ নিয়েছি, কোথাও নেই। পরে মৌলভীবাজার মডেল থানায় জিডি করেছি।
মৌলভীবাজার মডেল থানার পুলিশ সূত্রে জানা যায়, নাদিয়া আক্তারকে ঢাকা থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। সে তার দুলাভাইয়ের হাত ধরে পালিয়েছিল।
মৌলভীবাজারের রাজনগর উপজেলার এক তরুণ আইনজীবীর খোঁজ মেলেনি সাড়ে তিন মাসের অধিক সময় পেরিয়ে গেলেও। গত ১০ জুলাই মৌলভীবাজার সদরের এক বন্ধুর সাথে দেখা করতে বাড়ি থেকে বের হয়ে আর ফেরেননি। এরপর থেকে নিখোঁজ রয়েছেন সিলেট কোর্টে শিক্ষানবিশ আইনজীবী মিজানুর রহমান। ঘটনার পরপরই রাজনগর থানায় সাধারণ ডায়েরি করার সাড়ে তিনমাস অতিবাহিত হলেও পুলিশ সন্ধান বের করতে পারেনি। পুলিশ বিভিন্ন স্থানে খোঁজ করে এখনো তার কোনো সন্ধান পাচ্ছে না বলে পরিবারকে অবহিত করেছে। এতে পরিবারের মাঝে শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
মৌলভীবাজার সদরের গন্ধব্বপুর এলাকার রুবেল আহমদ নগদ ৫৫ হাজার ও বিকাশে ২৫ হাজার টাকা নিয়ে বাড়ি থেকে বের হওয়ার পর ২১ নভেম্বর দুপুর ১২টার দিকে নিখোঁজ হন। সন্ধ্যার দিকে মুক্তিপণ চেয়ে ফোন আসে। ২২ নভেম্বর সন্ধ্যায় কমলগঞ্জের ভানুগাছ বাজারে আটককারীরা তাকে মুক্তি দেয়।
বড়লেখা উপজেলার প্রবাস থেকে আসা সাগর দাশ ২১ নভেম্বর বাড়ি থেকে বের হয়ে নিখোঁজ হন। পরদিন ২২ নভেম্বর সকালে একটি গাছে তার ঝুলন্ত লাশ পাওয়া যায়। এব্যাপারে বড়লেখা থানায় অপমৃত্যু মামলা রেকর্ড করা হয়েছে।
মৌলভীবাজার সদরের মাতারকাপনের বদরুল মিয়ার ছেলে মোঃ মাহিন মিয়া ১৭ নভেম্বর মাদ্রাসায় যাওয়ার পথে নিখোঁজ হয়। ব্র্যাক কর্মী নাইমা আক্তার গত বছর ৩ নভেম্বর শ্রীমঙ্গল শিববাড়ি এলাকা থেকে নিখোঁজ হন। এখন পর্যন্ত তার খোঁজ পাওয়া যায়নি। এব্যপারে শ্রীমঙ্গল থানায় জিডি হয়েছিল।
এবিষয়ে মৌলভীবাজারের পুলিশ সুপার মোঃ মনজুর রহমান বলেন, ‘নিখোঁজের বিষয়গুলো নিয়ে আমাদের কাছে যে অভিযোগ আসে আমরা সেগুলো তদন্ত করে দেখি। অনেক ক্ষেত্রেই অভিযোগ আসে। আবার অনেক ক্ষেত্রেই শুধু স্যোশাল মিডিয়ায় থেকে যায়। এটা অভিযোগ আকারে আসে না।
পরবর্তীতে দেখা যায় তারা নিকট আত্মীয়ের বাসায় অথবা পরিবারের লোকজনরাই তাদের খুঁজে পায়। এই বিষয়গুলো রিপোর্টেড হয় না। যেগুলো থানায় মামলা বা জিডি হয়, সে বিষয়গুলো আমরা তদন্ত করে দেখেছি। দু’টি ক্ষেত্রেই উদ্ধার করেছি। এক্ষেত্রে আমরা দেখেছি যে, মেয়েরা সাধারণত রিলেশনের ভিত্তিতে চলে গিয়েছিল এবং পরবর্তীতে উদ্ধার করে নিয়ে আসা হয়েছে। তাদের পরিবারের কাছে আমরা হস্তান্তর করেছি।
পরিবারের দিক থেকে একটু সচেতনতামূলক কার্যক্রম গ্রহণ করা ও আমরা বলব যে, স্কুল, কলেজ অথবা অন্য কোনো বিষয়গুলো তাদের অভিভাবক যারা আছেন তারা যদি একটু সচেতন থাকেন তাহলে এই বিষয়গুলো হয়তো বা একটু আমরা বিরত রাখতে পারি। আমরা যদি মেয়েদেরকে ঠিকমতো কাউন্সিলিং করি তাহলে এই বিষয়গুলো এভয়েড করতে পারি।’