ক্রীড়া বাংলা ডেস্ক :
২০২৬ বিশ্বকাপ বাছাইপর্বের ম্যাচ খেলতে মরক্কোয় যাওয়ার কথা ছিল ইরিত্রিয়ার জাতীয় ফুটবল দলের। কিন্তু এর আগে অদ্ভুত কারণে পুরো বিশ্বকাপ বাছাইপর্ব থেকেই নাম প্রত্যাহার করে নেওয়া হলো আফ্রিকান দলটির। এক যৌথ বিবৃতিতে বাছাইপর্বে ইরিত্রিয়ার সব ম্যাচ বাতিলের সিদ্ধান্ত জানিয়েছে ফিফা ও দ্য কনফেডারেশন অব আফ্রিকান ফুটবল (সিএএফ)। কারণ হিসেবে যা জানা গেছে তা রীতিমতো অবিশ্বাস্য। বলা হচ্ছে, বিদেশ সফরে গেলে দলটির খেলোয়াড়রা রাজনৈতিক আশ্রয় চেয়ে বসতে পারেন!
তবে বিষয়টি নিয়ে এখনও আনুষ্ঠানিক কোনো বক্তব্য দেয়নি ইরিত্রিয়ার ফুটবল ফেডারেশন (ইএনএফএফ)। তবে ধারণা করা হচ্ছে, দেশটির রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে খেলোয়াড়রা বিদেশ সফরকে কাজে লাগিয়ে ‘ভেগে’ যেতে পারেন। বিশ্বকাপ বাছাইয়ে খেলার জন্য গত তিন মাস ধরে ব্যাপক প্রস্তুতি নিচ্ছিল ইরিত্রিয়া ফুটবল দল। কিন্তু গত অক্টোবরের শেষদিকে তাদের জানিয়ে দেওয়া হয়, খেলা হচ্ছে না। তবে আনুষ্ঠানিকভাবে বিষয়টি প্রকাশ্যে এলো সম্প্রতি। ইরিত্রিয়া নাম প্রত্যাহার করায় আফ্রিকান অঞ্চলের বাছাইয়ে গ্রুপ ‘ই’ থেকে খেলবে বাকি ৫ দল- মরক্কো, জাম্বিয়া, কঙ্গো, তানজানিয়া এবং নাইজার।
বিভিন্ন প্রতিবেদন অনুযায়ী, ইরিত্রিয়ার তথাকথিত ‘স্বৈরতান্ত্রিক’ সরকারের হাত থেকে বাঁচতে দেশত্যাগ করতে চান অনেক তরুণ। দেশটির সরকারের নির্দেশ অনুযায়ী, অনেক নাগরিককে আজীবনের জন্য বাধ্যতামূলক সামরিক সেবায় নিযুক্ত করা হয়। এই ‘চাপ’ থেকে বাঁচতেই অনেকে পালিয়ে যেতে উন্মুখ। জানা গেছে, ২০০৯ সাল থেকে ইরিত্রিয়ার প্রায় ৬০ জন খেলোয়াড় আন্তর্জাতিক ফুটবলার পরিচয় ব্যবহার করে বিদেশে আশ্রয় নিয়েছেন। এর মধ্যে ২০১৯ সালে উগান্ডায় ২০২২ কাতার বিশ্বকাপ বাছাইয়ের ম্যাচ খেলতে গিয়ে পালিয়ে যান ৭ জন ফুটবলার। একই বছর অনূর্ধ্ব-২০ দলের ৪ জন খেলোয়াড়ও বিদেশে খেলতে গিয়ে আর ফিরে আসেননি।
এবার জাতীয় দলকে বাছাইয়ে খেলতে পাঠানোর জন্য ক্রীড়া ও সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের কাছে অনুমতি চেয়েছিল ইরিত্রিয়ার ফুটবল ফেডারেশন। কিন্তু ক্রীড়া ও সংস্কৃতি বিষয়ক কমিশনার জেমেডে টেকলে আবেদনটি বাতিল করে দেন। এই সিদ্ধান্তের খবর ছড়িয়ে পড়তেই হতাশা ছড়িয়ে পড়ে খেলোয়াড়দের মাঝে। তবে শাস্তির ভয়ে কেউ প্রকাশ্যে কথা বলছেন না। বিশ্বকাপ বাছাইয়ের এবারের পর্বে জাম্বিয়া, তানজানিয়া এবং সুদানের বিপক্ষে খেলার কথা ইরিত্রিয়ার। কিন্তু ২০২০ সাল থেকে খেলার মধ্যেই ছিল না তারা এবং নিষ্ক্রিয়তার কারণে ফিফা র্যাংকিংয়ে থেকেই বাইরে বেরিয়ে গেছে। অবাক করা ব্যাপার হচ্ছে, ইরিত্রিয়াতে সিএএফ-এ কর্তৃক অনুমোদিত কোনো স্টেডিয়ামও নেই। যে কারণে তাদের সব ম্যাচ বাইরে খেলতে যেতে হতো।
বাছাইয়ের দশটি ম্যাচই বাইরে খেলার ব্যবস্থা করা ইরিত্রিয়ান সরকারের জন্য কঠিন চ্যালেঞ্জ ছিল। তবে এবারের সিদ্ধান্তে দেশটির ফুটবলের অনেক বড় ক্ষতি হয়ে গেল। কারণ দেশটিতে ফুটবল প্রতিভার অভাব নেই। কিন্তু বিদেশে খেলতে যেতে না পারায় তাদের প্রতিভার পূর্ণ বিকাশ ঘটছে না। গত বছর দেশটি ২০২৩ আফ্রিকা কাপ অব ন্যাশন্সের বাছাই থেকেও নাম প্রত্যাহার করে নিয়েছিল। এই সুযোগে সরাসরি গ্রুপ পর্ব পেরিয়ে যায় বোতসোয়ানা।