ই-পেপার | রবিবার , ২৪শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

জামিনের ৩ ঘণ্টার মধ্যে আসামির কারামুক্তি, তদন্তের নির্দেশ

নিজস্ব প্রতিবেদক:

হাইকোর্ট থেকে জামিন পাওয়ার তিন ঘণ্টার মধ্যে হত্যা মামলার আসামির কারামুক্তির ঘটনা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন চেম্বার বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম।

আদালত বলেন, উচ্চ আদালত থেকে এত দ্রুত জামিন আদেশ কীভাবে ম্যাজিস্ট্রেট আদালত থেকে কারাগারে পৌঁছাল? এ বিষয় জানতে আদালত তাৎক্ষণিকভাবে ফৌজদারি শাখার তত্ত্বাবধায়ককে তলব করেন।

এ সময় ফৌজদারি শাখার কর্মকর্তারা বলেন, হাইকোর্টের জামিন আদেশ ডেসপাস শাখা থেকে যাবে ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে। সেই আদেশের কপি ওয়েবসাইটে যাচাইকরণ শেষে জামিননামা মঞ্জুর করবেন ম্যাজিস্ট্রেট। এরপর জামিননামা কারাগারে গেলে মুক্তি পায় আসামি।

তাদের বক্তব্যের পরই চেম্বার আদালত হত্যা মামলার ওই আসামির জামিন স্থগিতের পাশাপাশি তাকে ২১ সেপ্টেম্বরের মধ্যে কুমিল্লার ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দেন। এছাড়া কুমিল্লার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটকে এ ঘটনার ব্যাখ্যা দিতে বলেন। একই সঙ্গে হাইকোর্টের মূল আদেশ প্রাপ্তির পূর্বেই কোন প্রক্রিয়ায় জামিননামা মঞ্জুর করা হয়েছে তার ব্যাখ্যা দিতে বলেন আদালত। পাশাপাশি এ ঘটনা তদন্তের জন্য সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেলকে কমিটি গঠন করতে বলা হয়।

 

বুধবার আপিল বিভাগের চেম্বার বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম এ আদেশ দেন।

আদালত বলেছেন, মামলার আসামি কোন প্রক্রিয়ায় এত দ্রুত জামিন আদেশ স্বাক্ষরের পর কারাগার থেকে মুক্তি পেয়েছে তা তদন্ত করে ৬ নভেম্বর প্রতিবেদন দাখিল করতে হবে।

 

গত ৩ সেপ্টেম্বর হাইকোর্টের অবকাশকালীন বেঞ্চ থেকে জামিন পান কুমিল্লার যুবলীগ নেতা জামাল হত্যা মামলার আসামি সোহেল সিকদার। জামিনের তিন ঘণ্টার মধ্যেই তিনি কারাগার থেকে মুক্ত হন। এই জামিন আদেশ স্থগিত ও আসামিকে আত্মসমর্পণের নির্দেশনা চেয়ে আপিল বিভাগে আবেদন করে রাষ্ট্রপক্ষ।

আবেদনের শুনানিতে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সারওয়ার হোসেন বাপ্পী বলেন, জামিনের পর অস্বাভাবিক দ্রুততায় মুক্তি পেয়েছে আসামি। এই মুক্তির প্রক্রিয়া নিয়েই প্রশ্ন আমাদের।

জবাবে আসামির আইনজীবী সুপ্রিম কোর্ট বার সভাপতি মোমতাজউদ্দিন ফকির বলেন, আসামিকে গ্রেপ্তারের দুই দিন পর আদালতে হাজির করে পুলিশ। এই দুই দিন তাকে কোথায় রাখা হয়েছিল? আর তার বিরুদ্ধে যেসব মামলা রয়েছে তার সবগুলোই উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। সেগুলো থেকে খালাস পেয়েছেন তিনি।

 

জবাবে অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল শেখ মো. মোরসেদ বলেন, আসামি সোহেলকে গ্রেপ্তারের ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই আদালতে হাজির করা হয়েছে। এক্ষেত্রে আইনের কোনো ব্যত্যয় হয়নি।

আরেক আইনজীবী মুরাদ রেজা বলেন, অস্বাভাবিক দ্রুততার কারণে আসামির জামিন বাতিল হওয়ার সুযোগ নেই। জামিনের পর এক সেকেন্ডও আটকে রাখার সুযোগ নেই।

 

এ পর্যায়ে আসামির আইনজীবীদের উদ্দেশে বিচারপতি ইনায়েতুর রহিম বলেন, জামিনের তিন ঘণ্টার মধ্যে আদেশের কপি পৌঁছে যাওয়ার কোনো নজির কি আছে? শত শত জামিন হয় হাইকোর্ট থেকে সেখানে কটা জামিন আদেশ এভাবে অস্বাভাবিক দ্রুততার সঙ্গে পৌঁছে?

 

জবাবে আইনজীবীরা বলেন, কোনো প্রতারণা করে জামিন নেওয়া হয়নি।

এ পর্যায়ে বিচারপতি ইনায়েতুর রহিম বলেন, আমরা জামিন নিয়ে কথা বলছি না। জামিন আদেশ পৌঁছানো ও জামিননামা মঞ্জুরের ক্ষেত্রে অনিয়ম দেখতে পাচ্ছি। এই বিষয়ে সঠিক ব্যাখ্যা দিন। যিনি পয়সা খরচ করবেন, ঘাটে ঘাটে তদবির করবেন তার জামিন আদেশ আগে পৌঁছাবে, ব্যাপারটা কি সেই রকম?

 

অ্যাটর্নি জেনারেল আমিন উদ্দিন বলেন, ৩ সেপ্টেম্বর হাইকোর্টের ওই বেঞ্চ থেকে ১৮টি মামলায় জামিন হয়েছে। এর মধ্যে দুটি আদেশ অস্বাভাবিক দ্রুত পৌঁছেছে।

শুনানি শেষে চেম্বার আদালতের বিচারপতি হাইকোর্টের জামিন আদেশ স্থগিতের পাশাপাশি আসামিকে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দেন।

 

এইচ এম কাদের,সিএনএন বাংলা২৪