ই-পেপার | শনিবার , ২৯শে জুন, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

চিংড়ি রপ্তানি খাত থেকে আয় কমেছে ২০ শতাংশ

খুলনা অফিস

চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে হিমায়িত চিংড়ি রপ্তানি খাতের আয় কমেছে ২০.৩৭ শতাংশ। প্রথম ছয় মাসে হিমায়িত চিংড়ি রপ্তানি করে আয় হয়েছে ১৪ কোটি ৫৯ লাখ ডলার। এর আগের অর্থবছরের একই সময়ে রপ্তানি করে আয় হয়েছিল ১৮ কোটি ৩২ লাখ ডলার; অর্থাত্ এক বছরের ব্যবধানে আয় কমেছে ২০ ভাগের বেশি।

 

খুলনা মত্স্য পরিদর্শন ও মান নিয়ন্ত্রণ কার্যালয়ের কোয়ালিটি কন্ট্রোল অফিসার লিপটন সরদার জানান, চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে হিমায়িত চিংড়ি রপ্তানি হয়েছে প্রায় ৯ হাজার ৭১ মেট্রিক টন। যেটা গত ২০২২-২৩ অর্থবছরে ছিল ১৩ হাজার ২৭১ মেট্রিক টন; অর্থাত্ পরিমাণের দিকে থেকে প্রায় ৩ হাজার মেট্রিক টন রপ্তানি কম হয়েছে। টাকার অঙ্কে প্রথম ছয় মাসে রপ্তানির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ২১ কোটি টাকা। চিংড়ি খাতে এই মন্দা দশা চলছে গত কয়েক বছর ধরে।

 

রপ্তানিকারকরা বলছেন, হিমায়িত চিংড়ি রপ্তানির অন্যতম বড় বাজার ইউরোপে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দার কারণে চিংড়ি রপ্তানি কমেছে। তবে, এমন পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে চিংড়ির মূল্য সংযোজিত পণ্য তৈরির পরামর্শ দিয়েছে মত্স্য বিভাগ। তারা বলছেন, হিমায়িত চিংড়ি থেকে বহুমুখী পণ্য উত্পাদন করা গেলে বৈদেশিক মুদ্রা আয় বাড়বে। এগিয়ে থাকা যাবে প্রতিযোগিতাতেও।

 

সি ফুড বায়িং এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব সুজন আহমেদ বলেন, ‘বড় দিন অথবা নতুন ইংরেজি বছরে আমরা ইউরোপের বাজারে ২০০ থেকে ২৫০ কনটেইনার হিমায়িত চিংড়ি রপ্তানি করি। কিন্তু এবার ১০০ কনটেইনারের মতো চিংড়ি রপ্তানি হয়েছে। যে কারণে রপ্তানিতে আমরা আরো পিছিয়ে গেছি। আবার আমরা অন্য দেশের উত্পাদিত ভেনামি চিংড়ির সঙ্গেও পেরে উঠছি না। এর কারণ হচ্ছে আমাদের উত্পাদিত বাগদা ও গলদা চিংড়ির দাম অনেক বেশি। সেখানে অন্য দেশ থেকে অর্ধেক দামে আমদানিকারকরা ভেনামি চিংড়ি কিনছে। ফলে আমরা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি।’

 

বাংলাদেশ ফ্রোজেন ফুডস এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএফএফইএ) ভাইস প্রেসিডেন্ট এস হুমায়ুন কবির বলেন, ‘বাংলাদেশের চিংড়ি রপ্তানি আয় কমে যাওয়ার প্রধান কারণ হচ্ছে, গত কয়েক বছর ধরে বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দার কারণে বাংলাদেশ থেকে যে চিংড়ি রপ্তানি হয়, তার যে মূল্য পাওয়া উচিত ছিল—সেটা আমরা পাচ্ছি না। ফলে আমাদের দেশের চিংড়ি চাষিরা তাদের উত্পাদন খরচ ওঠাতে পারছে না। এ কারণে বহু চাষি তাদের চিংড়ি উত্পাদন বন্ধ করে ব্যবসা সংকুচিত করেছে। এছাড়া, বাংলাদেশ থেকে মূলত দুই ধরনের চিংড়ি বিদেশে রপ্তানি হয়। যার একটি হচ্ছে বাগদা; অন্যটি গলদা। বাগদা ও গলদা চিংড়ির উত্পাদন খরচ অনেক বেশি। অন্যদিকে ভেনামি চিংড়ির উত্পাদন খরচ অনেক কম। ফলে যে সমস্ত দেশ ভেনামি চিংড়ি উত্পাদন করে তারা অল্পমূল্যে বিদেশের বাজারে সেই চিংড়ি রপ্তানি করতে পারে। বিশ্ব অর্থনীতির মন্দার কারণে ভেনামি চিংড়ির চাহিদা ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। আমাদের সে সুযোগ নেই।’ এস হুমায়ুন কবির জানান, একটি জরিপে দেখা গেছে, বিশ্ববাজারে ভেনামি চিংড়ির চাহিদা রয়েছে ৭৮ শতাংশ। সেখানে বাগদা চিংড়ির বাজার ১১ শতাংশে নেমে এসেছে। আর গলদা চিংড়ির বাজার মাত্র ছয় শতাংশ। ফলে বিশ্ব বাজার ধরতে গেলে ভেনামি চিংড়ি চাষের বিকল্প নেই। তিনি আরো বলেন, সরকার গত বছর ভেনামি চিংড়ি চাষের অনুমতি দিয়েছে। কিন্তু এখনো ভেনামির পোনা উত্পাদন বাংলাদেশে শুরু হয়নি। চাষিরাও নতুন প্রজাতির চিংড়ি উত্পাদনে ভীতির মধ্যে রয়েছে।

 

এ ব্যাপারে খুলনা মত্স্য পরিদর্শন ও মান নিয়ন্ত্রণ কার্যালয়ের কোয়ালিটি কন্ট্রোল অফিসার লিপটন সরদার বলেন, ‘চিংড়ির ক্রেডিট শ্রিম্প, ট্রাম্প শ্রিম্প, শ্রিম্প পপকর্ন, শ্রিম্প নাগেট, শ্রিম্প সামুসা, শ্রিম্প সিঙ্গাড়া—এরকম নানান ধরনের প্রোডাক্ট রপ্তানিকারকরা তৈরি করেছেন। ইতিমধ্যে এসব পণ্য যুক্তরাজ্যের (ইউকে) মার্কেটে কিছু রপ্তানি হয়েছে। আশা করা হচ্ছে, ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের বাজারও আমরা ধরতে পারব। এতে করে আমাদের রপ্তানি আয় বাড়বে।