নিজস্ব প্রতিবেদক:
ঢাকা: নতুন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব নিয়ে ১০০ কর্মদিবসের অগ্রাধিকারমূলক কর্মপরিকল্পনা ঘোষণা করেছেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু বিষয়ক মন্ত্রী সাবের হোসেন চৌধুরী।
বৃহস্পতিবার (২৫ জানুয়ারি) সচিবালয়ে মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে সরকারের নির্বাচনী ইশতেহারে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা ও পরিবেশ সুরক্ষাকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে তিনি এসব পরিকল্পনা ঘোষণা করেন।
তিনি বলেন, নির্বাচনী ইশতেহার বাস্তবায়ন এবং এ মন্ত্রণালয়ের বর্ণিত চ্যালেঞ্জ ও সমস্যা সমাধানে অগ্রাধিকার নির্ধারণ ও যথাযথ উদ্যোগ গ্রহণকল্পে ১০০ কর্মদিবসের কর্মপরিকল্পনা স্থির করা হয়েছে। বায়ুদূষণ, প্লাস্টিক দূষণ, পাহাড় কর্তন ও জলাধার ভরাট রোধসহ পরিবেশ সুশাসনের জন্য অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টির লক্ষ্যে বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে। এ কর্মপরিকল্পনা জনগণের আকাঙ্ক্ষার প্রতি দ্রুত সাড়া দিয়ে মন্ত্রণালয়ের সক্ষমতা, স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা, সদিচ্ছা এবং অঙ্গীকারের প্রতিফলন হবে। এ মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট বর্ণিত কাজগুলো বর্তমান সরকারের পাঁচ বছরের কর্মকাণ্ডের একটি শক্তিশালী সূচনাসহ পুরো মেয়াদে কাজ করার একটি কাঠামো তৈরি করবে।
প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বাড়ানো
১. মন্ত্রণালয় ও আওতাধীন দপ্তর/সংস্থার অর্গানোগ্রাম (জনবল কাঠামো) হালনাগাদের উদ্যোগ গ্রহণ।
২. পরিবেশ ও জলবায়ু বিষয়ে সংশ্লিষ্ট উন্নয়ন সহযোগী, এনজিও এবং সিএসওদের নিয়ে একটি পার্টনারশিপ ফ্রেমওয়ার্ক এর উদ্যোগ গ্রহণ ও আন্তঃমন্ত্রণালয় সমন্বয় বাড়ানোর মাধ্যমে তা বাস্তবায়ন।
৩. আসন্ন বাজেটে ‘ক্লিন অ্যান্ড গ্রিন’ থিম অন্তর্ভুক্তির লক্ষ্যে অর্থ বিভাগ ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে প্রস্তাব পাঠানো।
৪. কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও স্মার্ট প্রযুক্তির মাধ্যমে কার্যকর পরিবীক্ষণের উদ্যোগ।
দূষণ নিয়ন্ত্রণ
১. বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণ ও কৃষিজমি রক্ষার্থে সরকারি নির্মাণে শতভাগ ব্লক ব্যবহারে সংশোধিত রোডম্যাপ অনুমোদন।
২. বায়ুদূষণের প্রতিটি উৎস থেকে সৃষ্ট দূষণ মোকাবিলায় ন্যূনতম একটি করে কার্যক্রম গ্রহণ।
৩. বায়ুদূষণ রোধে দেশব্যাপী ন্যূনতম ৫০০ অবৈধ ইটভাটার বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা।
৪. শব্দদূষণ (নিয়ন্ত্রণ) বিধিমালা, ২০০৬ হালনাগাদকরণের উদ্যোগ গ্রহণ।
বর্জ্য ব্যবস্থাপনা
১. জাতীয় বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ফ্রেমওয়ার্ক প্রণয়নের উদ্যোগ গ্রহণ।
২. প্লাস্টিক দূষণ হতে পরিবেশ, প্রতিবেশ ও জীববৈচিত্র্য রক্ষার লক্ষ্যে একবার ব্যবহার প্লাস্টিকের তালিকা প্রণয়ন এবং প্রাথমিক তথ্য সংগ্রহের কার্যক্রম শুরু করা; একবার ব্যবহার প্লাস্টিকের উৎপাদন ও ব্যবহার কমাতে কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন।
৩. পণ্য প্রস্তুতকারক ও আমদানিকারকদের পণ্য হতে সৃষ্ট বর্জ্য সুষ্ঠুভাবে ব্যবস্থাপনার লক্ষ্যে এক্সটেন্ডেড প্রডিউসার রেসপন্সিবালিটির খসড়া চূড়ান্তকরণ।
৪. শিল্প কারখানার ইটিপি কার্যকরভাবে চালু রাখতে স্মার্ট প্রযুক্তির মাধ্যমে অনলাইন মনিটরিং চালুর উদ্যোগ গ্রহণ।
৫. সচিবালয়ে একবার ব্যবহার প্লাস্টিক ফ্রি ঘোষণার উদ্যোগ গ্রহণ। অন্যান্য সরকারি অফিসগুলো একই ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশনা জারিকরণ।
৬. পাইলটিং আকারে পরিবেশদূষণ রোধে প্রতি বিভাগে দুটি করে একবার ব্যবহার প্লাস্টিকের ফ্রি স্কুল ক্যাম্পাস বাস্তবায়ন এবং উন্নত বর্জ্য ব্যবস্থাপনার লক্ষ্যে প্রতি বিভাগে দুটি করে জিরো ওয়েস্ট ভিলেজ চালুর উদ্যোগ গ্রহণ।
পরিবেশ, বন, প্রতিবেশ ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ
১. স্কুল-কলেজের সিলেবাস/পাঠ্যবইকে সবুজায়নের কর্মপরিকল্পনা প্রণয়নের উদ্যোগ গ্রহণ।
২. দেশের বিভিন্ন স্থানে অবস্থিত পাহাড়, টিলা ও প্রাকৃতিক জলাধারের ম্যাপিং এর উদ্যোগ গ্রহণ।
৩. পরিবেশ ছাড়পত্র দেওয়ার প্রক্রিয়া সহজীকরণের উদ্যোগ গ্রহণ। সবুজ ক্যাটাগরিভুক্ত ছাড়পত্র ‘সেলফ অ্যাসেসমেন্ট’ এর আওতায় আনার কার্যক্রম গ্রহণ।
৪. শিল্প প্রতিষ্ঠান বা প্রকল্পের কার্যক্রমের ব্যাপ্তি ও সৃষ্ট সম্ভাব্য দূষণের পরিধি, মাত্রা এবং পরিবেশ ও মানবস্বাস্থ্যের ওপর সম্ভাব্য ক্ষতিকর প্রভাব বিবেচনা করে শিল্প প্রতিষ্ঠান ও প্রকল্পের ক্যাটাগরি হালনাগাদকরণের উদ্যোগ গ্রহণ।
৫. জবরদখল করা ৫০ হাজার একর বনভূমির উচ্ছেদ প্রস্তাব প্রস্তুতকরণ এবং জেলা প্রশাসনের কাছে প্রেরণ; ইতঃপূর্বে পাঠানো এক লাখ ৮৭ হাজার একর জবরদখলকৃত বনভূমি উদ্ধারের প্রস্তাব বাস্তবায়নে উদ্যোগ গ্রহণ।
৬. পরিবেশ দূষণকারী ব্যক্তি/প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ক্ষতিপূরণের পুনর্নির্ধারিত হার/পরিমাণ বাস্তবায়ন।
৭. পরিবেশ, বন, প্রতিবেশ ও জীববৈচিত্র্য রক্ষায় উচ্চ আদালতের রায় যথাযথ বাস্তবায়নে পরিবীক্ষণ সুসংহত করা।
জলবায়ু পরিবর্তন
১. অর্থবহ ও কার্যকর সহযোগিতার মাধ্যমে পরিবেশ ও জলবায়ুর অভিঘাত মোকাবিলার লক্ষ্যে বাংলাদেশ ক্লাইমেট ডেভেলপমেন্ট পার্টনারশিপ চূড়ান্তকরণের কার্যক্রম গ্রহণ।
২. ইউনিসেফের উদ্যোগে এবং পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় কর্তৃক আগামী এপ্রিলে ঢাকায় অনুষ্ঠেয় ন্যাশনাল অ্যাডাপটেশন প্ল্যান (ন্যাপ) এক্সপো আয়োজনের লক্ষ্যে যাবতীয় প্রস্তুতি গ্রহণ।
৩. মুজিব ক্লাইমেট প্রসপার্টি প্ল্যান বাস্তবায়নের উদ্দেশে কর্মকৌশল প্রণয়ন।
৪. জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট ফান্ডের আওতায় প্রস্তাবিত প্রস্তাবগুলো যাচাই-বাছাইয়ের নিমিত্ত গাইডলাইন প্রণয়ন।
৫. আন্তর্জাতিক লস অ্যান্ড ড্যামেজ ফার্ড থেকে অর্থায়ন প্রাপ্তির লক্ষ্যে উদ্যোগ গ্রহণ।