ই-পেপার | বৃহস্পতিবার , ২১শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

চট্টগ্রামে সিইসিকে যত নালিশ দিলেন প্রার্থীরা

চট্টগ্রাম ব্যুরো :

জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে চট্টগ্রাম জেলার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীগণের সাথে মতবিনিময় সভায় বক্তব্য রাখছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল।দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে চট্টগ্রামের ১৬টি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বী সব প্রার্থীর সঙ্গে মতবিনিময় করেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল। মঙ্গলবার (২৬ ডিসেম্বর) সকালে চট্টগ্রাম মহানগরীর এলজিইডি ভবনে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়।

সভায় সিইসিকে পেয়ে তফসিল ঘোষণার পর থেকে চট্টগ্রামের যে আসনগুলোতে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও মারামারি হয়েছে-সেসব ঘটনার বিস্তারিত অবহিত করেন প্রার্থী ও সমর্থকরা।

সভায় কোনো সংবাদকর্মীকে প্রবেশ করতে দেওয়া না হলেও সেখানে উপস্থিত একাধিক প্রার্থীর সঙ্গে এ প্রতিবেদকের কথা হয়। তারা জানান, চট্টগ্রামের ১৬টি আসনের মধ্যে বিশেষ করে চট্টগ্রাম-১ (মিরসরাই), চট্টগ্রাম-৩ (সন্দ্বীপ), চট্টগ্রাম-৮ (বোয়ালখালী), চট্টগ্রাম-১১ (বন্দর-পতেঙ্গা), চট্টগ্রাম-১২ (পটিয়া),চট্টগ্রাম-১৫ (সাতকানিয়া-লোহাগাড়া) এবং চট্টগ্রাম-১৬ (বাঁশখালী) আসনের প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী এবং প্রার্থীর সমর্থকেরা পাল্টাপাল্টি অভিযোগ করেন সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়ালকে। সিইসি স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনকে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশনা দেন।

সভা শেষে চট্টগ্রামের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে মতবিনিময় করতে এলজিইডি ভবন থেকে পিটিআইর উদ্দেশে রওয়ানা হন সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল। এ সময় গণমাধ্যমকর্মীরা সিইসির বক্তব্য নিতে চাইলে তিনি পরবর্তী সভা শেষে দিবেন বলে জানান।

তবে সভাশেষে ফেরার পথে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন চট্টগ্রাম-১ (মিরসরাই) আসনের ঈগল প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. গিয়াস উদ্দিন। সভায় কী আলোচনা হয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, নৌকা প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকেরা প্রতিনিয়ত আমার নেতাকর্মীকে হুমকি দিচ্ছে। বিষয়টি সিইসি মহোদয়কে আমি জানিয়েছি। সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য আমি প্রশাসনের সহযোগিতা চাই।

পরে কথা হয় চট্টগ্রাম-৪ (সীতাকুণ্ড) আসনের নৌকার প্রার্থী এস এম আল মামুনের সঙ্গে। তিনি বলেন ‘আমার আসনে একটি উৎসবমুখর পরিবেশে নির্বাচন হবে। ভোটাররা ভোট দেওয়ার জন্য উদগ্রীব হয়ে আছেন। আমাদের কোন প্রার্থী পরস্পরের বিরুদ্ধে এখনও কোন অভিযোগ দেননি।’

চট্টগ্রাম-৮ (বোয়ালখালী) আসনের লাঙ্গল প্রতীকে জাতীয় পার্টির প্রার্থী সোলায়মান আলম শেঠ বলেন, ‘বিভিন্ন এলাকায় আমার কিছু পোস্টার ও ব্যানার ছিড়ে ফেলা হয়েছে।’

চট্টগ্রাম-১১ (বন্দর-পতেঙ্গা) আসনে নৌকার প্রার্থী ও বর্তমান এমপি এম এ লতিফ এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, আওয়ামী লীগের একটি পক্ষ নৌকার বিরুদ্ধে গিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষ নিয়েছেন। তা নিয়ে আমি শঙ্কিত নই। তবে কেটলি প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকেরা বিভিন্ন স্থানে আমার পোস্টার ছিড়ে ফেলছে। বিষয়টি আমি প্রশাসনকে জানিয়েছি।’

তবে আসনটির কেটলি প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী চসিক কাউন্সিলর জিয়াউল হক সুমন বলেন, ‘নৌকার প্রার্থী বিভিন্ন এলাকায় প্রচারে গিয়ে আমাদের আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের গালাগাল করছে। আমার কর্মী-সমর্থকদের নানাভাবে হুমকি দিচ্ছে। বিষয়টি আমি লিখিতভাবে রিটার্নিং কর্মকর্তাকে জানিয়েছি।’

চট্টগ্রাম-১২ (পটিয়া) আসনের নৌকার প্রার্থী চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, হুইপ সামশুল হক চৌধুরী কালো আয়নার একাধিক গাড়ি নিয়ে নির্বাচনী প্রচারে যান। গাড়িবহরে অস্ত্র-শস্ত্র নিয়ে সন্ত্রাসীরা থাকেন। নৌকার কর্মী-সমর্থকদের নানাভাবে হুমকি-ধমকি দিচ্ছে স্বতন্ত্র প্রার্থী সামশুল হক। বিষয়টি আমি সিইসিকে বলেছি।

তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন চট্টগ্রাম-১২ আসনের ঈগল প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী ও বর্তমান এমপি সামশুল হক চৌধুরী। সিইসির সঙ্গে মতবিনিময় শেষে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে তিনি বলেন, ‘নৌকার প্রার্থী এবং কর্মী-সমর্থকেরা আমার নেতাকর্মীর ওপর হামলা করছে। বিভিন্ন এলাকায় আমাদের কর্মী-সমর্থককে হুমকি দিচ্ছে।’

সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়ালের সঙ্গে চট্টগ্রামের প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের মতবিনিময় সভাটি চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার মো. তোফায়েল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত হয়। এতে বিশেষ অতিথি ছিলেন সচিব মো. জাহাংগীর আলম, চট্টগ্রাম মেট্টোপলিটন পুলিশ কমিশনার কৃষ্ণ পদ রায়, চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি নুরে আলম মিনা, চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান ও চট্টগ্রাম জেলার পুলিশ সুপার এস এম শফিউল্লাহ।