ই-পেপার | শুক্রবার , ২২শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

আসামে বিশ্ব কবিমঞ্চের ভারত-বাঙলা মৈত্রী উৎসব

সালেহ আহমদ স’লিপক :

‘কবিই তো ঈশ্বর, ঈশ্বর কবি/ আঁধারিতে ইন্দু, দিবসে রবি’ এই স্লোগান নিয়ে ভারতের আসামে বিশ্ব কবিমঞ্চের ভারত-বাঙলা মৈত্রী উৎসব ও বহুভাষিক কবি সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। শনিবার (২৫ নভেম্বর) ভাষার গণ্ডি ভেঙে, মৈত্রীর বন্ধনে একঝাঁক নবীন ও প্রবীণ কবির উপস্থিতিতে কবিতার ফল্গুধারায় কল্লোলিত হয়ে উঠেছিলো ভরতের আসাম রাজ্যের ঐতিহ্যমণ্ডিত গুয়াহাটি প্রেসক্লাব।

ভারত ও বাংলাদেশের একঝাঁক বিশিষ্ট কবি, সাহিত্যিক ও গুণীজনবৃন্দের উপস্থিতিতে অনুষ্ঠানের প্রথম পর্বে ছিল বিশিষ্ট ব্যক্তিদের সংবর্ধনা ও আলোচনা পর্ব। আয়োজক সমিতির সভাপতি কবি দিলস লক্ষীন্দ্র সিংহের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানের সূচনালগ্নে প্রদীপ প্রজ্বলন করেন লোক সেবা আয়োগের প্ৰাক্তন সদস্য, বৰ্তমান শঙ্করদেব বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনস্ত শঙ্করদেব অধ্যয়নক্ষেত্রের বিভাগীয় প্রধান ড. নিরঞ্জন কলিতা।

মঞ্চে উপবিষ্ট ছিলেন গুয়াহাটিস্থ বাংলাদেশ হাইকমিশনের সহকারী উচ্চায়ুক্ত রুহুল আমিন, পদ্মশ্রী রোমান শর্মা, লেখক ও জনপ্রিয় নাট্য এবং চলচ্চিত্র ব্যক্তিত্ব সম্প্রীতি বাংলাদেশপর আহ্বায়ক পীযূষ বন্দ্যোপাধ্যায়, সম্মানিত অতিথি ছিলেন সম্প্রীতি বাংলাদেশের সদস্য সচিব ও খ্যাতনামা চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. মামুন আল মাহতাব স্বপ্নীল।

স্বাগত ভাষণ প্রদান করেন অনুষ্ঠান সঞ্চালক বিশ্ব কবিমঞ্চ অসম চ্যাপ্টারের সম্পাদক কলারত্ন কবি মিনতি বরুয়া। আয়োজক সমিতির তরফে সম্মানিত অতিথিদের পরম্পরাগত অসমিয়া ফুলাম গামছা ও রাজ্যের প্রতীক একশৃঙ্গ গণ্ডারের রেপ্লিকা স্মারক দিয়ে সম্মানিত করেন তিনি। উন্মোচিত করা হয় কবি দিলস লক্ষীন্দ্র সিংহের বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরি ভাষায় লিখা কাব্যগ্রন্থ ‘পুল্লাপ কবিতা’।

উপস্থিত অতিথিবৃন্দ মৈত্রী উৎসবের তাৎপর্য উল্লেখ করে এই অনুষ্ঠানের উদযাপন কার্যক্রমের ভূয়সী প্রশংসা করেন। দেশের সীমা নিতান্তই এক ভৌগোলিক বিষয়। মূলকথা হচ্ছে মানুষ। দুই দেশের মানুষ একদিন এক দেশেরই ছিলেন। তাই পারস্পরিক সৌহার্দ ও আন্তরিকতায় এখনও সবাই একই আছেন। প্রয়োজন এই ভাবধারাকে সঙ্গে নিয়ে আগামীর পথ চলা। এমন বক্তব্যই মূলত উঠে আসে আলোচনা ও ভাষণে।

অনুষ্ঠানের ২য় পর্বে ভিন্ন ভাষাভাষী কবিরা বিভিন্ন ভাষায় তাঁদের লিখা কবিতা পাঠ করেন। বলতে গেলে এদিনের কাব্যানুষ্ঠান সব ভাষার মেলবন্ধনে যেন এক মহামিলনে পর্যবসিত হয়ে উঠেছিল। বাংলা, অসমিয়া, নেপালি, হিন্দি, মিসিং, দেউরি আদি ভাষাভাষী কবিরা নিজের এবং অন্য ভাষায় রচিত ও অনূদিত তাঁদের কবিতা পাঠ করে স্ব স্ব ক্ষেত্রে উৎকর্ষের প্রমাণ রাখেন।

উপস্থিত কবিদের মধ্যে ছিলেন রত্নেশ্বর বসুমাতারী, শচীন দাস, মাধুরী কলিতা চৌধুরী, পরাগ দেব চৌধুরী, তুষারকান্তি সাহা, কাব্যমণি বরা, বিমলেন্দু চক্রবর্তী, সুবন্তী দেউরি, ঊষামণি শইকিয়া, জ্যোতি কাকতি মালাকার, মানসী সিংহ, মীনাক্ষি চক্রবর্তী, মৌচুম বুঢ়াগোঁহাই, ড. গোমা অধিকারী, নিশুতি মজুমদার, মুন চক্রবর্তী, আয়োজক সমিতির উপ-সভাপতি কবি বিদ্যুৎ চক্রবর্তী এবং কবিতা পাঠ অনুষ্ঠানের সঞ্চালক আয়োজক সমিতির অন্যতম উপ-সভাপতি অধিবক্তা ও কবি জিতেন পায়েঙ প্রমুখ।

আয়োজক সমিতির পক্ষ থেকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন সভাপতি কবি দিলস লক্ষীন্দ্র সিংহ অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘোষণা করেন।

শেষ পর্বে অনুষ্ঠানস্থলে এসে উপস্থিত হন বিশ্ব কবিমঞ্চের কেন্দ্রীয় কমিটির আহ্বায়ক বাংলাদেশের জনপ্রিয় আয়োজক ও কবি পুলক কান্তি ধর। যান্ত্রিক ত্রুটির জন্য তাঁর গাড়িটি বিকল হয়ে পড়ায় সময় মতো অনুষ্ঠানে উপস্থিত হতে না পারায় দুঃখ প্রকাশ করে তিনি আয়োজক সমিতির অকুণ্ঠ প্রশংসা করে ধন্যবাদসূচক বক্তব্য রাখেন। এদিকে, আসামের শিলচরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্টারভেনশনাল হেপাটোলজি ডিভিশনের প্রধান অধ্যাপক ডা. মামুন আল মাহতাব স্বপ্নীলকে সম্বর্ধনা প্রদান করা হয়।

সোমবার (২৭ নভেম্বর) সন্ধ্যায় আসামের শিলচরের ইলোরা হোটেলে শিলচরের সুধীসমাজের পক্ষ থেকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্টারভেনশনাল হেপাটোলজি ডিভিশনের প্রধান অধ্যাপক ডা. মামুন আল মাহতাব স্বপ্নীলকে সম্বর্ধনা প্রদান করা হয়।

এই উপলক্ষে শিলচরের আমন্ত্রিত সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে এক আলোচনা অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন ভারতীয় শ্রীহট্ট সম্মিলনী ফেডারেশনের উপদেষ্টা সাধন পুরকায়স্থ, ডা. বিজয় লক্ষী চৌধুরী, ডা. রাজীব দে, ডা. শান্তি কুমার, ডা. কল্যাণ চক্রবর্তী, ডা. সুব্রত কান্তি, ডা. অমিত তালওয়ার, অসম সাহিত্য সভা শিলচর শাখা সভাপতি জ্যোতিষ বর্মন, সমাজকর্মী নিখিল পাল প্রমুখ। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সমাজকর্মী স্বর্নলতা চৌধুরী। বক্তারা, অধ্যাপক ডা. স্বপ্নীলের কর্মময় জীবনের নানা দিক নিয়ে আলোকপাত করেন। তারা একাধারে একজন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক, মেডিকেল গবেষক, প্রাবন্ধিক, পেশাজীবী রাজনীতিক, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি ও অসাম্প্রদায়িক চেতনার মানুষ হিসেবে ডা. স্বপ্নীলের সবক্ষেত্রে সমান বিচরনের উচ্ছসিত প্রশংসা করেন এবং প্রত্যাশা প্রকাশ করেন যে তিনি দীর্ঘদিন, সুস্থতার সাথে দেশ ও সমাজের জন্য কাজ করে যাবেন।

উল্লেখ্য, অধ্যাপক ডা. স্বপ্নীল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনার পাশাপাশি সম্প্রীতি বাংলাদেশ এর কেন্দ্রীয় সদস্য সচিবের দায়িত্ব পালন করছেন। পাশাপাশি তিনি ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগ ও কেন্দ্রীয় স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের কার্যকরি সদস্য এবং একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মুল কমিটির কেন্দ্রীয় কোষাধ্যক্ষ। তিনি লিভার বিশেষজ্ঞদের একাধীক জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সংগঠনকেও নেতৃত্ব দিচ্ছেন। তিনি সাউথ এশিয়ান এসোসিয়েশন ফর দ্যা স্টাডি অব দ্যা লিভারের সাধারন সম্পাদক ও এশিয়ান প্যাসিফিক এসোসিয়েশন ফর দ্যা স্টাডি অব দ্যা লিভারের কার্যকরি সদস্য।

দেশে ডা. স্বপ্নীল ফোরাম ফর দ্যা স্টাডি অব দ্যা লিভার ও জালালাবাদ লিভার ট্রাস্ট-এর চেয়ারম্যান, বিএসএমএমইউ হেপাটোলজি এল্যুমনাই এসোসিয়েশন এর সভাপতি এবং এসোসিয়েশন ফর দ্যা স্টাডি অব লিভার ডিজিজেজ বাংলাদেশ এর সাধারন সম্পাদক। তিনি বাংলাদেশ স্টেম সেল এন্ড রিজেনারেটিভ মেডিসিন এসোসিয়েশন এরও সাধারন সম্পাদক।

অধ্যাপক ডা. স্বপ্নীল একজন উদ্যোমি মেডিকেল গবেষক। তিনি ন্যাসভ্যাক নামক হেপাটাইটিস বি’র একটি নতুন ওসুধের সহ-উদ্ভাবক। একাধীক শীর্ষস্থানীয় লিভার বিষয়ক মেডিকেল জার্নালের এডিটেরিয়াল বোর্ডের তিনি সদস্য। পিয়ার রিভিউড বৈজ্ঞানিক জার্নালে তার প্রকাশনার সংখ্যা তিনশ পঞ্চাশেরও বেশি। তিনি লিভার বিষয়ক ৬টি টেক্সট ও রেফারেন্স বইয়ের সম্পাদক। বইগুলো এলসেভিয়ের, ম্যকমিলান ও জেপি-এর মত আন্তর্জাতিক প্রকাশনা সংস্থা থেকে প্রকাশিত হয়েছে।

অধ্যাপক ডা. স্বপ্নীল বিভিন্ন জাতীয় দৈনিক ও অনলাইন নিউজ পোর্টালে লিভার ও সমসাময়িক বিষয় নিয়ে নিয়মিত লেখালেখি করেন। তার এ পর্যন্ত প্রকাশিত প্রবন্ধ সংকলন ও অনুবাদ গ্রন্থের সংখ্যা ১০টি। এই বইগুলোর প্রকাশক মাওলা ব্রাদার্স, অন্যপ্রকাশ ও মুক্তধারা। সম্বর্ধনার জবাবে অধ্যাপক ডা. স্বপ্নীল অনুষ্ঠানের আয়োজকদের প্রতি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন, সামনের দিনগুলোতে তিনি বৃহত্তর সিলেট ও বরাক ভ্যালির মানুষের কল্যানে এবং তাদের মধ্যে পারস্পরিক যোগাযোগ ও সহযোগিতা বৃদ্ধিতে কাজ করে যাবেন।