ই-পেপার | শনিবার , ২৩শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

সংসদ নির্বাচন: ভোটের আগে-পরে ছয়দিন মাঠে থাকতে পারে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী

নিজস্ব প্রতিবেদক ,ঢাকা:

আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ নিশ্চিতে ছয়দিনের জন্য আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মোতায়েন করতে পারে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। তবে সশস্ত্র বাহিনী মোতায়েন করা হলে মোট দিনের সংখ্যার আরো বাড়তে পারে।

 

ইসি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী বলতে- পুলিশ, আর্মড পুলিশ ব্যাটেলিয়ন, র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটেলিয়ন (র‌্যাব), আনসার বাহিনী, ব্যাটেলিয়ন আনসার, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ ও কোস্ট গার্ডকে বোঝায়। আর সশস্ত্র বাহিনী বলতে নৌ-বাহিনী, বিমান বাহিনী ও সেনা বাহিনীকে বোঝায়। গতবারের মতো এবারও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পাশপাশি মোতায়েন করা হতে পারে সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদেরও। ইতিমধ্যে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলো তাদের লোকবল ও চাহিদার কথা জানিয়েছে ইসিকে। আর সশস্ত্র বাহিনীর মোতায়েনের সিদ্ধান্ত হলে সে সময় তারা তাদের ছক ও চাহিদা জানাবে।

 

জানাগেছে, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলোর সঙ্গে ইসির সোমবারের (২০ নভেম্বর) বৈঠকে কোন বাহিনীর কত সংখ্যক সদস্য কতদিনের জন্য মোতায়েন করা হবে সে সিদ্ধান্ত হয়েছে। এক্ষেত্রে আনসার মোতায়েন থাকবে ভোটের আগের পরে মোট ছয়দিন। আর পুলিশ মোতায়েন থাকবে পাঁচদিন। অন্যান্য বাহিনীও একই সময়ের জন্য নিয়োজিত হতে পারে।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য এবার সাড়ে ৭ লাখ আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য নিয়োজিত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইসি। এক্ষেত্রে , আনসারের পাঁচ লাখ ১৬ হাজার সদস্য, কোস্টগার্ডের ২ হাজার ৩৫০ জন, বিজিবি’র ৪৬ হাজার ৮৭৬ সদস্য, পুলিশের (র‌্যাবসহ) থাকবে ১ লাখ ৮২ হাজার ৯১ জন। অর্থাৎ সাত লাখ ৪৭ হাজার ৩২২ জন সদস্য ভোটের নিরাপত্তায় নিয়োজিত থাকবেন।

 

আনসারের জন্য জনপ্রতি ৬৩৭ টাকা থেকে এক হাজার টাকা, কোস্টগার্ড ৬৩৭ টাকা থেকে এক হাজার ৮২০ টাকা, বিজিবি ৪শ টাকা থেকে এক হাজার ২২৫ টাকা এবং পুলিশ ৪০০ টাকা থেকে এক হাজার ৬০৬ টাকা জনপ্রতি পাবেন। এর সঙ্গে যোগ হবে খাবার ও ফুয়েলের মতো খরচ। ইতিমধ্যে বাহিনীগুলো মোট এক হাজার ৭১ কোটি টাকা বরাদ্দ চেয়েছে। সবচেয়ে বেশি টাকা চেয়েছে পুলিশ। এই বাহিনী চাহিদা দিয়েছে ৪৩০ কোটি ২৫ লাখ টাকা। আনসার বাহিনী চেয়েছে ৩৬৬ কোটি ১২ লাখ টাকা। এছাড়া বিজিবি ১৪৫ কোটি ৮৭ লাখ, র‌্যাব চেয়েছে ৫০ কোটি ৬৩ লাখ, কোষ্টগার্ড ৭৮ কোটি ৬২ লাখ টাকা চেয়েছে। সংসদ নির্বাচনে এবার বরাদ্দ রাখা হয়েছে ১ হাজার ৪৪৫ কোটি টাকা।

 

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় সশস্ত্র বাহিনীর এক লাখ ২০ হাজারের সদস্যদের ১০ দিনের জন্য এবং অন্যান্য বাহিনীর সাত লাখের মতো সদস্যদের ছয় থেকে ১১ দিনের জন্য মোতায়েন করা হয়েছিল। সে সময় ব্যয় হয়েছিল প্রায় ৫৬৫ কোটি টাকা। দ্রব্যমূল্য বাড়ায় এবার সেই ব্যয় বাড়তে পারে।

 

এ বিষয়ে ইসির অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ জানিয়েছেন, এবার আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সাত লাখ ৪৭ হাজার ৩২২ জন সদস্য ভোটের নিরাপত্তায় নিয়োজিত থাকবেন। সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের নিয়োজিত করা নিয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। বৈঠকে সম্ভাব্য বাজেট নিয়ে আলোচনা হয়েছে। তারা একটি বরাদ্দ এডভান্স চেয়েছে। সবকিছু পর্যলোচনা করে পরবর্তীতে সিদ্ধান্ত জানাবে কমিশন।

 

ইসি সূত্রগুলো জানিয়েছে, এবারের সংসদ নির্বাচনেও তিন হাজারের মতো নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ করা হতে পারে। এক্ষেত্রে প্রতি তিন ইউপির জন্য একজন করে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ করা হবে। এর বাইরে সশস্ত্র বাহিনী মোতায়েন করা হলে তাদের প্রতি টিমের সঙ্গে একজন করে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট থাকতে পারে। এছাড়া নিয়োজিত করা হতে পারে এক হাজারের মতো বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেটও।

 

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের তফসিল অনুযায়ী, মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ সময় ৩০ নভেম্বর, মনোনয়নপত্র বাছাই ১ থেকে ৪ ডিসেম্বর, রিটার্নিং কর্মকর্তার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে কমিশনে আপিল দায়ের ও নিষ্পত্তি ৬ থেকে ১৫ ডিসেম্বর, প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ সময় ১৭ ডিসেম্বর। রিটার্নিং কর্মকর্তারা প্রতীক বরাদ্দ করবেন ১৮ ডিসেম্বর। নির্বাচনি প্রচার চলবে ৫ জানুয়ারি সকাল ৮টা পর্যন্ত। আর ভোটগ্রহণ হবে ৭ জানুয়ারি (রোববার)।

 

এবার নির্বাচনের ভোটার সংখ্যা ১১ কোটি ৯৬ লাখ ৯১ হাজার ৬৩৩ জন। আর ভোটকেন্দ্র হচ্ছে ৪২ হাজার ১০৩টি। এক্ষেত্রে প্রায় ১০ লাখ ভোটগ্রহণ কর্মকর্তার প্রয়োজন হবে, যাদের নিয়োগ দেবেন রিটার্নিং কর্মকর্তারা।