নিজস্ব প্রতিবেদক,ঢাকা :
বিএনপি ২০১৫ সালে যেভাবে জ্বালাও-পোড়াও করেছিল, সেই ঘটনারই পুনরাবৃত্তি ঘটাচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল।রোববার (২৯ অক্টোবর) রাতে সংসদের অধিবেশনে তিনশ বিধিতে দাঁড়িয়ে বিবৃতিতে তিনি এ কথা বলেন। এসময় ডেপুটি স্পিকার শামসুল হক টুকু সভাপতিত্ব করছিলেন।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বিএনপি বলেছিল সারাদেশের ১০ লাখ নেতাকর্মীকে নিয়ে একটি মহাসমাবেশ করবে। আমরা তাদের বলেছিলাম তোমরা একটি মাঠে যাও। কিন্তু তারা বললেন তাদের অফিসের সামনেই তাদের স্থান দিতে হবে। তারা পরিষ্কার করে আমাদের জানিয়েছিলেন, নাইটিঙ্গেল থেকে ফকিরাপুলের মধ্যেই তারা থাকবেন। পাশাপাশি আমাদের আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকও একটি শান্তি সমাবেশের অনুমতি চেয়েছিল। আমাদের পুলিশ কমিশনার তাদেরও পারমিশন দিয়েছিল। আমরা প্রথমেই দেখলাম তারা নাইটিঙ্গেল ছেড়ে ইচ্ছা করেই আইডিইবি ও জাজেস কমপ্লেক্সের সামনে অবস্থান নেয়। আমাদের যুবলীগ ও যুব মহিলা লীগের মেয়েরা যখন প্রধান বিচারপতির বাসভবনের সামনে দিয়ে আসছিল তখনই আক্রমণ। তারা সেসময় সেখানে গাড়ি ভেঙেছে, গাড়িতে আগুন দিয়েছে। সে সময় পুলিশ সদস্যরা তাদের রক্ষা করে। এরপর এমন একটি ঘটনা ঘটালো যা কখনই আমরা দেখিনি। তারা প্রধান বিচারপতির বাসায় জোরপূর্বক ঢুকে পড়ে। তারা বলেছিল সমাবেশ করে চলে যাবে, সেটি না করে তারা ধ্বংসযজ্ঞ চালালো।
মন্ত্রী বলেন, আমরা দেখলাম তারা বৃষ্টির মতো ঢিল ছুড়ছিল। মনে হচ্ছিল তারা পকেটে করে বা ব্যাগে করে ঢিল নিয়ে এসেছিল। সেগুলো পুলিশের গায়ে মেরেছে। আমাদের দলীয় কর্মীরা কিন্তু সেখানে ছিল না। ঢিলের আঘাতে একজন পুলিশ সদস্য যখন পড়ে গিয়েছিল তখন দেখলাম ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা পুলিশের সদস্যকে পেটাচ্ছে। পুলিশ হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা দেওয়া হয়। সেখানে আহতদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছিল। এমনকি সংবাদকর্মীদের উপরও তারা চড়াও হয়। সেখানে তারাও সেবা নিতে গিয়েছিল। এমন সময় তারা সেখানে ঢুকে বড় দুটি হামলা করলো। পুলিশের যারা সেবাদান করছিল তাদের মারধর করেছে। এবং পুলিশের গাড়ি ভাঙচুর করেছে। সামনে যা পেয়েছে ভাঙচুর চালিয়েছে। এ ধরনের হামলা সভ্য জগতে দেখা যায় না।
তিনি বলেন, গাজার হাসপাতালে ইসরায়েল এ ধরনের সামরিক অভিযান চালাচ্ছে। সেটি সারাবিশ্ব নিন্দা জানাচ্ছে। কিন্তু সে দৃশ্য আমরা এখানে দেখলাম। তারা হাসপাতালে আক্রমণ করলো। আমার মনে হয় এটি সংঘবদ্ধভাবে পরিকল্পনামাফিক তারা একটা অরাজক পরিস্থিতির জন্য এ ঘটনাগুলো ঘটিয়েছে। এক মুক্তিযোদ্ধার সন্তান পুলিশ কনস্টেবল আমিনুল ইসলাম পারভেজকে নৃশংসভাবে পেটানো হয়েছে। ঢিলের আঘাতে তিনি পড়ে যাওয়ার পর তাকে পেটানো হলো। তার মৃত্যু নিশ্চিত করার জন্য তাকে চাপাতি দিয়ে কোপানো হয়েছে। এ ধরনের বর্বরতা কোনো মানুষ সহ্য করবে না। আমাদের আরেকজন পুলিশ সদস্য মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছে। আমাদের ১১৫ জন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছে।
তিনি বলেন, ঘটনা এখানেই শেষ নয়। তারাই পুলিশকে মারলো, সাংবাদিকদের মারলো, মহিলা লীগের নেত্রীদের গায়ে হাত তুললো। আবার তারাই হরতাল ডাকে। শুধু হরতাল ডেকেই খান্ত হননি, আজ সকালে ডেমরায় একটি বাসে আগুন দিয়ে ঘুমন্ত হেলপারকে পুড়িয়ে মেরেছে। এ ঘটনা মনে করিয়ে দেয় ২০১৫ সালে যেভাবে জ্বালাও-পোড়াও করেছিল। বাসে অগ্নিসংযোগ করেছিল, গাড়িতে অগ্নিসংযোগ করেছিল, মানুষের গায়ে পেট্রোল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দিয়েছিল। সে ঘটনারই পুনরাবৃত্তি ঘটাচ্ছে। নীলফামারিতে হরতালের বিরুদ্ধে মিছিল করা আমাদের একজন কর্মী তাদের হামলায় নিহত হয়েছে। নৈরাজ্য তারা সারাদেশে ছড়িয়েছে। এ পর্যন্ত ২৬টি গাড়ি পুরোপুরি পুড়িয়েছে, আরও কয়েকটি গাড়িতে ভাঙচুর চালিয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে পুলিশ চরম ধৈর্যের সঙ্গে পরিস্থিতি মোকাবিলা করছে।