এইচএম ফরিদুল আলম শাহীন :
কক্সবাজারের উখিয়ার পালংখালীর আনজুমনপাড়া, রহমতেরবিল, উলুবনিয়া সীমান্ত পয়েন্টের নাফনদী দিয়ে পার হয়ে মিয়ানমার থেকে আসছে ইয়াবা, সোনা, আইচ ও অস্ত্র। রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী নবি হোসেন মিয়ানমারে বসে চার-পাঁচটি শক্তিশালী সিন্ডিকেটের মাধ্যমে উল্লেখিত পয়েন্ট দিয়ে বাংলাদেশে পাঠাচ্ছে অস্ত্র, সোনা, ইয়াবা ও ভয়ংকর মাদক আইচ।
স্থানীয় একাধিক নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে, বাংলাদেশে নাফ নদীর এপাড়ে এসব মালামাল গ্রহণ করে নির্দিষ্ট গন্তব্যে পৌঁছে দিচ্ছেন উখিয়া উপজেলার পালংখালী ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডের মেম্বার জাফরুল ইসলাম বাবুল। গত বুধবার ও বৃহস্পতিবার সরেজমিনে গেলে এ প্রতিবেদককে সীমান্তে বসবাসকারী অসংখ্য লোকজন জানিয়েছেন, ক্যাম্প পলাতক তালিকাভূক্ত রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী নবি হোসেনের সাথে চুক্তি করে জাফর মেম্বার চালিয়ে যাচ্ছেন চিংড়ি ব্যবসা।
সে চিংড়ি ব্যবসার আড়ালে চলছে অস্ত্র, মাদক ও সোনা চোরাচালান। সন্ধ্যা থেকে ভোররাত পর্যন্ত নাফনদীর সীমান্ত পয়েন্টের নিয়ন্ত্রণ থাকে জাফর বাহিনীর হাতে।বিজিবির চোখ ফাঁকি দিয়ে প্রতিরাতে চলে চোরাচালান ও মাদক পাচার। মোস্ট ওয়ান্টেড নবি হোসেনকে ধরতে ইতোপূর্বে বিজিবি ১০ লক্ষ টাকার পুরস্কার ঘোষণা করেছিলো।
সেই থেকে ক্যাম্প ছেড়ে মিয়ানমারের ওপারে গিয়ে ঠিকই চালিয়ে যাচ্ছেন তার অপকর্ম। নবি হোসেন পালিয়ে ধরাছোঁয়ার বাইরে চলে গেলেও তার সিন্ডিকেটের শতশত সদস্য রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অবস্থান করছে। গত তিন মাসে তার বাহিনীর ১৩ সদস্যকে অস্ত্র, ইয়াবা, আইচসহ গ্রেফতার করেছে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা। নবি হোসেন প্রত্যাবাসনবিরোধী কর্মকাণ্ডের সাথেও জড়িত বলে জানিয়েছে পুলিশ ও র্যাব।
সূত্রে জানা গেছে, জাফরুল ইসলাম বাবুল মেম্বার হচ্ছেন নবি হোসেনের অপরাধ কর্মকান্ডের আশ্রয়-প্রশ্রয়দাতা। খুন, ধর্ষণ, লুটপাট, ইয়াবা পাচারসহ অস্ত্র আইনে তার বিরুদ্ধে ১৮টি মামলা রয়েছে। চোরাচালান ও ইয়াবা পাচারের টাকার ভাগাভাগি নিয়ে জাফরুল ইসলাম বাবুল ও স্থানীয় লুৎফর রহমানের সাথে কথোপকথনের অডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। তা নিয়ে এলাকায় তোলপাড় চলছে।
স্থানীয় আবুল খাইর, সিরাজুল ইসলাম, মোস্তফা কামাল, মীর কাশেম, ভাঙ্গুরা, ফয়েজ আহমেদ বলেন, জাফরুল ইসলাম বাবুলের চারটি সিন্ডিকেটের শতাধিক অস্ত্রধারী যুবক সীমান্ত এলাকা নিয়ন্ত্রণ করে চালিয়ে যাচ্ছে অবৈধ ব্যবসা। এলাকার নিরীহ লোকজন তার অনৈতিক কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করার সাহস নেই। তার অপকর্মের প্রতিবাদ করতে গিয়ে স্থানীয় সোলতান আহমদসহ ১২ জনের বিরুদ্ধে ২১-২২ টি মিথ্যা মামলায় আসামী করা হয়েছে।
সর্বশেষ গত ২৩ সেপ্টেম্বর পালংখালী ইউনিয়নের ভাদিতলা গ্রামের মৃত ছৈয়দ আহমদের ছেলে কাশেম আলী ( ৩২) নাফনদীতে জাল নিয়ে মাছ ধরতে গিয়ে দেখেন ওপারের নবি হোসেন গ্রুপের একদল লোক ২৫-২৬ কার্টুন ইয়াবা নিয়ে এপাড়ে বাবুলের লোকদের বুঝিয়ে দিয়ে তড়িঘড়ি করে চলে যায়।এ দৃশ্য দেখে ফেলায় জেলে কাশেমকে প্রথমে মারধর ও পরে জাল পেঁচিয়ে তাকে হাতপা বেঁধে নাফ নদীতে ফেলে দেয় দিনদুপুরে। দূর থেকে এ দৃশ্য দেখেন আবুল খাইর নামের আরেক জেলে। পরে বিষয়টি জানাজানি হয়ে গেলে স্থানীয় লোকজন ও উখিয়া ফায়ার সার্ভিস এণ্ড ডিফেন্সের লোকজন গিয়ে লাশ উদ্ধারের চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়। সন্ধ্যা ঘনিয়ে রাত চলে যায়। পরদিন উখিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ শেখ মোহাম্মদ আলীর নির্দেশে ২৪ ঘন্টা পর এসআই কাউছারের উপস্থিতিতে জেলে কাশেম আলির ক্ষতবিক্ষত জাল পেঁচানো লাশ উদ্ধার করে স্থানীয় লোকজন। পরে ময়নাতদন্তের পর পুলিশ লাশ হস্তান্তর করে স্বজনদের কাছে।
এব্যাপারে পুলিশ বাদী হয়ে একটি মামলা দায়ের করেছে। সন্ত্রাসীদের ভয়ে নিহত কাশেমের স্বজনরা থানায় গিয়ে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করার সাহস পর্যন্ত করতে পরেনি বলে জানান ৮ নং ওয়ার্ডের মেম্বার ফয়েজুল হক।
উখিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শেখ মোহাম্মদ আলী জানিয়েছেন, পোস্টমর্টেম রিপোর্ট আসার পর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তবে এ ঘটনার সাথে কে বা কারা জড়িত রয়েছে তা খতিয়ে দেখছে পুলিশ। এ বিষয়ে বিজিবির বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
এইচ এম কাদের,সিএনএন বাংলা২৪