সিএনএন বাংলা ডেস্ক:
ইউরোপিয় ইউনিয়ন (ইইউ) বাংলাদেশে গণতান্ত্রিকভাবে শান্তিপূর্ণ নির্বাচন দেখতে চায় বলে জানিয়ে সংস্থাটির বিশেষ প্রতিনিধি ইমন গিলমোর বলেছেন, আগামী জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) উদ্বেগ রয়েছে।
তিনি বলেন, আমরা জানি এখানে নির্বাচন আসছে। এই নির্বাচন সুষ্ঠু ও স্বাধীনভাবে হোক, আমরা তাই চাই। আমাদের পর্যবেক্ষক দল দেখে গেছে। তারা রিপোর্ট দেবে।
ইইউ’র এই বিশেষ প্রতিনিধি বলেন, আমরা যখন নির্বাচনের বিষয়ে দেখি তখন শুধু নির্বাচনের দিন কী হয়েছে তা দেখি না। নির্বাচনের আগে কীভাবে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড চলছে, বিভিন্ন দল রাজনীতি করতে পারছে কিনা, দলগুলোর কী অবস্থা, নির্বাচনের আয়োজন কীভাবে হচ্ছে তার সব কিছুই দেখি।
মঙ্গলবার (২৫জুলাই) দুপুরে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় তিনি পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলমের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে এসব কথা বলেন।
এর আগে তিনি প্রধানমন্ত্রীর মুখ্যসচিব, মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের পর সচিবালয়ে তিনি আইনমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেন। সন্ধ্যায় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানবাধিকার প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করার কথা।
গিলমোর বলেন, ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে অন্য দেশগুলোর সম্পর্কের ক্ষেত্রে মানবাধিকার খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এ সম্পর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে মানবাধিকার। আমরা মানবাধিকার শক্তিশালী করা ও ডিজিটাল সিকিউরিটি আইন নিয়ে কথা বলেছি।
এসময় পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেন, নির্বাচনের ব্যাপারে আলোচনা হয়েছে। তবে অন্য দলগুলো নির্বাচনে আসার ব্যাপারে আলোচনা হয়নি। ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট রিফর্ম নিয়ে কাজ করার কথা জানিয়েছি। একইসঙ্গে সুশীল সমাজের জন্য স্বাস্থকর পরিবেশ ও স্বাধীন গণমাধ্যম নিশ্চিতের ব্যাপারেও কথা বলেছি।
শাহরিয়ার আলম বলেন, জিএসপি পরের রিজমে কিভাবে কাজ করবে তা নিয়ে জাতীয় পর্যায়ের কমিটি হয়েছে। আমার ইইউ বিশেষ প্রতিনিধিকে জানিয়েছি, প্রধানমন্ত্রীর সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজনের ব্যাপারে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।
গিলমোর বলেন, বাংলাদেশের মানবাধিকারের বর্তমান অবস্থা নিয়ে (মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যানের সঙ্গে) কথা হয়েছে। আমার মনে হয়, বাংলাদেশের সঙ্গে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সম্পর্ক অনেক ভালো। অর্থনৈতিকভাবে আমাদের সম্পর্ক শক্তিশালী। বাংলাদেশের মানবাধিকার ইস্যুতে আমরা বেশ কিছু পরামর্শ দিয়েছি। তারা সরকারি পর্যায়ে কথা বলবে।
তিনি বলেন, নির্বাচনী পরিবেশ নিয়ে ইইউ’র একটি প্রতিনিধি দল এরই মধ্যে বাংলাদেশ ঘুরে গেছে। তারা শিগগির রিপোর্ট দেবে। তবে নির্বাচন সামনে রেখে মানবাধিকার পরিস্থিতি ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিয়ে উদ্বেগ রয়েছে ইইউ’র।
পরে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান ড. কামাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ও গুম নিয়ে কাজ করছে কমিশন। এসব ঘটনা আমাদের জন্য দুর্ভাগ্যজনক। বিদেশিদের কাছে ভাবমূর্তি নষ্ট করে।
তিনি বলেন, ভোটকেন্দ্রে কাউকে মারার অধিকার কারো নেই। নির্বাহী বিভাগসহ সবাইকে সচেতন হতে হবে। এগুলোর কারণে দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট হয়। ইইউ এর এই বিশেষ প্রতিনিধির সঙ্গে বিচার বহির্ভূত হত্যা, গুম, গ্রেপ্তার অবস্থায় মৃত্যু নিয়ে কথা হয়েছে। একইসঙ্গে আমরা মানবাধিকার শক্তিশালী করা নিয়ে কথা বলেছি।
চেয়ারম্যান জানান, এ নিয়ে তারাও কাজ করছেন। শ্রমিক নেতা শহীদুলসহ সাম্প্রতিক সব হত্যা নিয়েও কথা হয়েছে। তবে নির্বাচন নিয়ে খুব বেশি কথা না হলেও নির্বাচনের আলোচিত বিষয়গুলো নিয়ে কথা হয়েছে।
উল্লেখ্য, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলমের আমন্ত্রণে বাংলাদেশ সফরে এসেছেন ইমন গিলমোর। এ সফরে গিলমোর রোহিঙ্গা ও মানবাধিকার বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সরকারি কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করবেন। বাংলাদেশে ইমোন গিলমোরের এটি দ্বিতীয় সফর।
এর আগে ২০১৯ সালের জুনে তিনি প্রথম বাংলাদেশে আসেন। ওই সফর শেষে গিলমোর বাংলাদেশে শ্রম অধিকারসহ মানবাধিকারের বিভিন্ন ক্ষেত্রে উন্নয়নের কথা বলেছিলেন। এবার ছয় দিনের বিশেষ সফরে ঢাকায় এসেছেন ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) মানবাধিকার বিষয়ক এই বিশেষ প্রতিনিধি।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সূত্র জানিয়েছে, ঢাকায় থাকাকালে গিলমোর রোহিঙ্গা ইস্যুতে সংশ্লিষ্ট সরকারি কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক ও রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করবেন। এছাড়া অন্য অংশীজনদের সঙ্গে বৈঠক এবং মানবাধিকার ইস্যু নিয়ে আলোচনা করবেন।
নুর মোহাম্মদ, সিএনএন বাংলা২৪