@ অ্যাডভোকেট মোবারক সাঈদ @
সাইমুন ও নোহা কক্সবাজারের নবগঠিত ঈদগাঁও উপজেলার ইসলামপুর ইউনিয়নে পাশাপাশি গ্রামের বাসিন্দা। প্রেমের টানে দু’জন রাজধানী ঢাকায় আত্নগোপন করলেও ডিবি পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হয় নোহার পিতার দায়ের করা ধর্ষণ ও অপহরণ মামলায়। উক্ত মামলা দায়েরকালীন সময়ে নোহার বয়স ১৬ বছরের নিচে ছিল, বিধায় মামলার আকার-আকৃতি সাইমুন ও নোহার প্রতিকূলে ছিল।ধর্ষণের অপরাধ আইনানুগভাবে সংঘটিত হয়েছে কীনা? সেসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে ভিকটিমের বয়স অতীব গুরুত্বপূর্ণ একটি ফ্যাক্টর। নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০ (সংশোধিত ২০০৩) এর ২(ট) ধারা অনুসারে “শিশু” বলতে ১৬ বছরের নিচের বয়সের কোন ব্যক্তিকে বুঝায়। অধিকন্তু ২(ঙ) ধারায় বলা হয়েছে- ধর্ষণকে একই আইনের ৯ ধারার বিধান সাপেক্ষে দ্য পিনল কোড, ১৮৬০ এর ৩৭৫ ধারায় সংজ্ঞায়িত ধর্ষণকে। তা হলে ৯ ধারার ব্যাখ্যানুসারে ধর্ষণ বলতে “যদি কোন পুরুষ বিবাহবন্ধন ব্যতিত ষোল বছরের অধিক বয়সের কোন নারীর সহিত তাহার সম্মতি ব্যতিরেকে বা ভীতি প্রদর্শন বা প্রতারণামূলকভাবে তাহার সম্মতি আদায় করিয়া অথবা ষোল বছরের কম বয়সের কোন নারীর সহিত তাহার সম্মতিসহ বা সম্মতি ব্যতিরেকে যৌন সঙ্গম করেন, তাহা হইলে তিনি উক্ত নারীকে ধর্ষণ করিয়াছেন বলিয়া গন্য হইবেন।”
উক্ত ব্যাখ্যা থেকে স্পষ্ট যে, উল্লেখিত আইনের ৯ ধারায় বিবাহ ব্যতিত ১৬ বছরের বেশি বয়সের একজন নারী নিজ ইচ্ছায় কোন পুরুষের সাথে যদি যৌন সঙ্গম করে তাকে অপরাধ বলা হয়নি। তাই ১৬ বছরের অধিক বয়সের কোন নারী যদি যৌন সঙ্গমে সম্মতি দেয় তাহলে সেটি ধর্ষণ বলে গণ্য হবে না। কিন্তু নারীর বয়স যদি ১৬ বছরের নিচে হয় তাহলে সেক্ষেত্রে যৌন সঙ্গমে তার সম্মতি ছিল কিনা তা বিবেচনার বিষয় হবেনা। অর্থাৎ ধর্ষণ বলেই বিবেচিত হবে। অধিকন্তু ধর্ষণের অপরাধ আইনানুগভাবে সংঘটিত হওয়ার জন্য যোনিতে পুরুষাঙ্গের প্রবেশ ততই অল্প হোক হতে হবে, না হলে তা ধর্ষণের অপরাধ হবে না। হেতু ধর্ষণের অপরাধ হওয়ার ক্ষেত্রে প্রথম বিবেচ্য বিষয় হলো – ভিকটিমের বয়স কত? দ্বিতীয়টি হলো- যৌনকাজে ভিকটিমের সম্মতি ছিল কিনা? দু’টি বিবেচ্য বিষয়ের মাধ্যমে ইতিবাচক আসামি ও ভিকটিমের মধ্যকার যৌনকাজে ধর্ষণের সংজ্ঞায় পড়বে কিনা এবং মাননীয় আদালত আসামীকে শাস্তি বা খালাস দিবে কিনা, তা বয়সই বলে দিবে।
চলুন! সাইমুন-নোহার প্রেমপ্রীতি ধর্ষণে রুপান্তরের পরিণতি যাবজ্জীবনে। প্রকৃত বিশ্লেষণ হলো- নোহার পিতার দায়েরকৃত ধর্ষণ মামলার সময় নোহার বয়স যদি ১৬ বছরের অধিক হয় সেক্ষেত্রে প্রচারিত রায়ে আসামীর দন্ড প্রদান আইনানুগ; যদি ভিকটিম নোহার বয়স ১৬ বছরের কম হয়ে থাকে তাহলে ট্রাইবুনাল কর্তৃক প্রচারিত রায়ে আইনের চরম ব্যত্যয় ঘটেছে। তাহা সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি হিসেবে আসামি উচ্চ আদালতের শরণাপন্ন হলে ন্যায় বিচার পাওয়ার সমূহ সম্ভাবনা রহিয়াছে। বিশেষতঃ ফৌজধারী মামলার ক্ষেত্রে উল্লেখ্য যে, আইন ও বিচারকের চক্ষু অন্ধ। আইনের সংজ্ঞা ও সাক্ষ্য প্রমাণ যথাযথ সমর্থনযোগ্য হলেই আইনানুগভাবে শাস্তি প্রদান করতে হয়। বিকল্প রায় দেওয়ার সুযোগ এহেন ঘোরতর অপরাধের ক্ষেত্রে ক্ষীণ।
লেখক ও আইনি বিশ্লেষণ:
মোবারক হোসাইন সাঈদ
অ্যাডভোকেট,
জেলা ও দায়রা জজ আদালত, কক্সবাজার।