ই-পেপার | শুক্রবার , ২২শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

সরকার পতনের একদফা কর্মসূচি আসবে ১২ জুলাই: মির্জা ফখরুল

সিএনএনবাংলা২৪

আগামী ১২ জুলাই ঢাকায় সমাবেশ করবে বিএনপি। সমাবেশ থেকে সরকার পতনের এক দফা দাবিতে আন্দোলনের শুরু হবে। সিলেটে তারুণ্যের সমাবেশ থেকে এমনটাই জানিয়েছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। রবিবার বিকালে সিলেট নগরের আলীয়া মাদ্রাসা মাঠে এ সমাবেশ হয়।

 

 

সমাবেশকে কেন্দ্র করে দুপুর থেকেই খণ্ড খণ্ড মিছিলে মুখরিত হয়ে উঠে শহর। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বিএনপির নেতাকর্মী বাড়তে থাকে। তরুণ ভোটারদের অধিকার প্রতিষ্ঠা ও অন্যান্য দাবিতে বিএনপির যুবদল, ছাত্রদল এবং স্বেচ্ছাসেবক দলের আয়োজনে সিলেটে তারুণ্যের সমাবেশ হয়।

মির্জা ফখরুল বলেন, আগামী ১২ জুলাই ঢাকার সমাবেশে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার আন্দোলনের নতুন কর্মসূচি ঘোষণা আসবে। এর মধ্য দিয়ে দেশের সব মানুষকে জাগ্রত করে এই সরকারকে বিদায় দিয়ে জনগণের নতুন সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। আসুন আমরা সবাই উঠে দাঁড়াই।

ফখরুল বলেন, গত দুটি নির্বাচনে জনগণকে বোকা বানানো হয়েছে। এ সরকারের অধীনে কখনোই সুষ্ঠু নির্বাচন হতে পারে না। এরা জোর করে ক্ষমতায় থাকতে চায়। সেজন্যই আমরা আবারও নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি তুলে ধরেছি। তারুণ্যের সমাবেশের মাধ্যমে বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন মাত্রা যোগ হয়েছে। এর মাধ্যমে দেশের ভাগ্য পরিবর্তন করতে তরুণরা এগিয়ে আসছেন।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, ১৯৭১ সালে যুদ্ধ করেছিলাম একটি গণতান্ত্রিক সমাজ ও রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করার জন্য। নিজেদের স্বাধীন মত প্রকাশের জন্য। যেখানে কোনো বৈষম্য থাকবে না। কিন্তু আজকে ভিন্নভাবে শেখ হাসিনা বাকশাল কায়েম করেছে। বেআইনিভাবে ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য নির্বাচনকে ব্যবহার করে। আর তারাই বলে দেশে নাকি সুষ্ঠু নির্বাচন তারাই করে। প্রকৃতপক্ষে আওয়ামী লীগের অধীনে কোনো সুষ্ঠু নির্বাচন হয় না। তারা মনে করে দেশটা তাদের পৈত্রিক সম্পত্তি। তাদের তালুকদারী। দেশের নির্বাচন ব্যবস্থা আওয়ামী লীগ ইচ্ছাকৃতভাবে ধ্বংস করেছে।

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আওয়ামী লীগ বলছে তারা সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন করবে। কিন্তু কোন সংবিধান? যেটা তারা নিজেদের মতো কাটা ছেঁড়া করেছে সেই সংবিধান? আমরা বলেছি নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কথা। যেটা ১৯৯৬ সালে নির্ধারণ হয়েছিলো। আজকে কেউ ভোট দিতে পারেনি। তরুণরা ভোট দিতে পারেনি। এই কথা বলতে গিয়ে অনেককে মেরে পঙ্গু করা হয়েছে। আমাদের সিলেটের নেতা এম ইলিয়াস আলীকে গুম করা হয়েছে।

তিনি বলেন, আজকে এই সরকার বাংলাদেশ ও জনগণের অনেক কিছু ক্ষতি করেছে। এরা বিদ্যুৎ খাতকে লুটেরা মডেল বানিয়েছে। যা সম্প্রতি সরকারের রিপোর্টে বলা হয়েছে। অথচ সরকার বলে বাংলাদেশ নাকি উন্নয়নের রোল মডেল। দশ হাজার কোটি টাকার পদ্মা সেতুর ব্যয় এখন কতো? আর দেশের কৃষক তার ফসলের দাম পায় না। মানুষ বাজারে গিয়ে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য কিনতে পারেনা। এককথায় শিক্ষা, স্বাস্থ্য প্রায় সব খাতে দলীয়করণ করেছে।

যুবদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকু বলেন, বর্তমান সরকার অবৈধ এবং ক্ষমতায় থাকার তাদের কোনো অধিকার নেই। উপস্থিত নেতাকর্মীকে শপথবাক্য পাঠ করিয়ে টুকু বলেন, আমরা অধিকার আদায় না হওয়া পর্যন্ত ঘরে ফিরে যাবো না। এসময় বেগম খালেদা জিয়াসহ সকল কারাবন্দী নেতাকর্মীর মুক্তি দাবি করেন তিনি।

ছাত্রদলের সভাপতি কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণ বলেন, গত ১৫ বছর ফ্যাসিস্ট আওয়ামী সরকারের নিপীড়নে তরুণ প্রজন্ম সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত। তারা ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেনি। ইনশাআল্লাহ আমরা ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠা করেই রাজপথ ছেড়ে যাবো।

গুম হওয়া বিএনপি নেতা ইলিয়াস আলীর পত্নী তাহসিনা রুশদীর লুনা বলেন, যারা সাংগঠনিকভাবে দক্ষ- বেছে বেছে তাদেরকে গুম করা হয়েছে। বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মের জনপ্রিয় নেতাদেরকে গুম করা হয়েছে। যেন আওয়ামী লীগ সরকার ভোট ডাকাতি করতে পারে। গুম হওয়া যে কত কষ্টের ও বেদনাদায়ক সেটা তারাই বুঝে যাদের পরিবারে কেউ গুম হয়েছেন। তরুণদের বলবো তোমাদের হাত ধরেই ক্ষমতাসীন অবৈধ সরকারের পতন ঘটানো সম্ভব। তোমরা ঐক্যবদ্ধভাবে এগিয়ে আসবে।

সমাবেশের সভাপতিত্ব করেন জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এসএমএ জিলানীর। সঞ্চালনায় ছিলেন যুবদলের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম মিল্টন, স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক রাজীব আহসান ও ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক সাইফ মাহমুদ জুয়েল।

পূর্ব নির্ধারিত এই সমাবেশ উপলক্ষে সকাল থেকেই সিলেট শহরে জড়ো হন দলটির নেতাকর্মীরা। সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজার এবং সিলেট জেলার বিভিন্ন উপজেলা থেকে খন্ড খন্ড মিছিল নিয়ে আসা যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা সিলেট শহরের বিভিন্ন অলিগলিতে অবস্থান নিয়ে দুপুরের মধ্যেই আলিয়া মাদ্রাসার মাঠে জড়ো হন। তারা বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিসহ বিভিন্ন স্লোগান দেন। সমাবেশ স্থলের চারপাশে অসংখ্য ব্যানার পোস্টার ও ফেস্টুন টাঙানো হয়।

জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এসএমএ জিলানীর সভাপতিত্বে ও যুবদলের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম মিল্টন, স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক রাজীব আহসান ও ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক সাইফ মাহমুদ জুয়েলের পরিচালনায় সমাবেশে বক্তব্য রাখেন যুবদলের সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, সিলেট বিভাগীয় বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. সাখাওয়াত হোসেন জীবন, যুবদলের জাকির হোসেন সিদ্দিকী, স্বেচ্ছাসেবক দলের ফখরুল ইসলাম রবিন, ছাত্রদল সভাপতি কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণ, সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রাকিবুল ইসলাম রাকিব, সিলেট মহানগর বিএনপির সভাপতি নাসিম হোসেন, সিলেট জেলা বিএনপি সভাপতি মোহাম্মদ কাইয়ুম চৌধুরী, বিএনপির নিখোঁজ নেতা ও সিলেট বিভাগীয় সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক এম ইলিয়াস আলীর সহধর্মিণী তাহসিনা রুশদীর লুনা, নতুন ভোটার সাবিয়া জামান আরিফা, সাদিয়া কাওসার রুহি, বিগত আন্দোলনে পঙ্গুত্ববরণকারী খালেদুর রহমান খালেদ, গুম হওয়া ইফতেকার আহমেদ দিনার এর বোন তাহসিন শারমিন তামান্না, কবিতা আবৃত্তি করেন শিক্ষার্থী সায়েমা আহমেদ অসীম, মৌলভীবাজার জেলা ছাত্রদলের এম এ চৌধুরী শাহান, শিক্ষার্থী আরিফ উল্লাহসহ কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতাকর্মীরা।

সভাপতির বক্তব্যে স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় সভাপতি এসএম জিলানী বলেন, আমাদের তারুণ্যের সমাবেশ ঘিরে সারাদেশে তরুণ প্রজন্মের মাঝে নতুন উদ্দীপনা সৃষ্টি হয়েছে। কোনো বাধা বিপত্তি তরুণদেরকে দমাতে পারেনি। আমরা তাদেরকে ঐক্যবদ্ধ করছি। কারণ তারা ভোটাধিকার বঞ্চিত হয়েছে। শেখ হাসিনা কথা দিয়ে কথা রাখেনি। ইনশাআল্লাহ তরুণ প্রজন্মের হাত ধরেই বর্তমান অবৈধ সরকারের পতন ঘটাবে।

ছাত্রদলের সভাপতি কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণ বলেন, গত ১৫ বছর ফ্যাসিস্ট আওয়ামী সরকারের নিপীড়নে তরুণ প্রজন্ম সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত। তারা ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেনি। ইনশাআল্লাহ আমরা ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠা করেই রাজপথ ছেড়ে যাবো।

সিলেট জেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুল কাইয়ুম চৌধুরী বলেন, ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকারের পতন ঘটাতে হলে তরুণদেরকে এগিয়ে আসতে হবে। আমরা তরুণদেরকে যা সহযোগিতা দরকার তাই দিবো।

সিলেট মহানগর বিএনপির সভাপতি নাসিম হোসেন বলেন, তরুণ প্রজন্মকে এগিয়ে আসতে হবে। তবেই ফ্যাসিস্ট আওয়ামী সরকারের পতন ঘটবে। অতীতেও স্বৈরাচার এরশাদ সরকারের পতন তরুণেরা ঘটিয়েছে।

তাহসিনা রুশদীর লুনা বলেন, যারা সাংগঠনিকভাবে দক্ষ বেছে বেছে তাদেরকে গুম করা হয়েছে। বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মের জনপ্রিয় নেতাদেরকে গুম করা হয়েছে। যেন আওয়ামী লীগ সরকার ভোট ডাকাতি করতে পারে। গুম হওয়া যে কত কষ্টের ও বেদনাদায়ক সেটা তারাই বুঝে যাদের পরিবারে কেউ গুম হয়েছেন। তরুণদের বলবো তোমাদের হাত ধরেই ক্ষমতাসীন অবৈধ সরকারের পতন ঘটানো সম্ভব। তোমরা ঐক্যবদ্ধভাবে এগিয়ে আসবে।