নিজস্ব প্রতিবেদক:
কোরবানির পশুর চামড়ার দাম ঠিক করেছে দিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। এবার কোরবানির গরুর চামড়া প্রতি বর্গফুট ৫০ থেকে ৫৫ টাকা এবং খাসি ১৮ থেকে ২০ টাকা এবং বকরি ১২ থেকে ১৪ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। ঢাকায় লবণযুক্ত গরুর চামড়া এ দামে কিনবেন ট্যানারি মালিকরা। কিন্তু মৌসুমি ব্যবসায়ীরা কত টাকায় চামড়া কিনবেন এ নিয়ে প্রতিবারই বিভ্রান্তিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়।
কেমন দামে মাঠ পর্যায়ে অর্থাৎ লবণ ছাড়া চামড়া কিনবেন মৌসুমি ব্যবসায়ীরা তার একটা ধারণা দিয়েছেন পুরান ঢাকার পোস্তার কাঁচা চামড়ার আড়তদারদের সংগঠন বাংলাদেশ হাইড অ্যান্ড স্কিনস মার্চেন্টস অ্যাসোসিয়েশন (বিএইচএসএমএ) এর সাধারণ সম্পাদক হাজি মো. টিপু সুলতান।
তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, সরকার বেঁধে দিয়েছে লবণযুক্ত চামড়া দাম। মৌসুমি ব্যবসায়ীদের অবশ্যই এর চেয়ে কম রেটে কাঁচা চামড়া কিনতে হবে। করণ মাঝারি আকারের একটি গরুর চামড়া সংরক্ষণে ৮ থেকে ৯ কেজি লবণ লাগে। এর সঙ্গে লেবার কস্ট, গোডাউন ভাড়া আছে।
কোরবানির একটি গরুর চামড়া কত টাকা হওয়া উচিত জানতে চাইলে টিপু সুলতান বলেন, এটা সাইজের উপর নির্ভয় করে। যেমন, বর্তমান বাজারে এক লাখ বা তার নিচে দামের গরু ছোট সাইজ বলা যায়। অর্থাৎ এসব গরুর চামড়া ২০ থেকে ২২ বর্গফুট হবে। এই আকারের লবণ ছাড়া কাঁচা চামড়া ৫০০ টাকায় কিনতে হবে। এক লাখের উপরে দেড় লাখ পর্যন্ত মাঝারি সাইজের গরু। এই আকারের গরুর চামড়ার দাম হবে ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা। আর দুই লাখ বা তার উপরের গরু বড় আকারের চামড়ার দাম ৮০০ থেকে ১০০০ টাকা। এখন মৌসুমি ব্যবসায়ীদের বাজার বুঝে কিনতে হবে।
পুরান ঢাকার পোস্তার আড়তদারদের এ নেতা বলেন, আড়তে দ্রুত চামড়া আনার বিষয়টিকে মৌসুমি ব্যবসায়ীদের সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে। কারণ গরু কোরবানির পর যত দ্রুত চামড়া আড়তে আনবেন তত বেশি দাম ভালো থাকবে, দামও বেশি পাবে।
ট্যানারি মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশন সাধারণ সম্পাদক সাখাওয়াত উল্লাহ সিএনএন বাংলা২৪কে বলেন, আমাদের লক্ষ্য এবার গরু, মহিষ, ছাগল ভেড়া সব মিলিয়ে এক কোটি পিস চামড়া সংগ্রহ করব। ট্যানারি লবণযুক্ত চামড়া বেশি কিনে থাকে। তবে চামড়ার বড় অংশ কোরবানির ঈদে জোগান হওয়ায় এ সময় লাবণ ছাড়া কাঁচা চামড়াও সংগ্রহ করি। কালকেও চামড়া কিনব। আকার ও মান বেধে প্রতি পিস কাঁচা চামড়া ৬০০ থেকে এক হাজার টাকায় কেনা হবে। আর মৌসুমি ব্যবসায়ীরা এটাকে সমন্বয় করেই কিনবে।
এর আগে গত ২৫ জুন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে ট্যানারি মালিক, ট্যারিফ কমিশনসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে বৈঠক করে ঢাকায় ৩ টাকা, বাইরে ৫ টাকা বাড়িয়ে গরুর কাঁচা চামড়ার দাম নির্ধারণ করে দেয় সরকার।
বৈঠক শেষে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেছিলেন, লবণযুক্ত গরুর চামড়ার দাম ঢাকায় গত বছরের চেয়ে ৩ টাকা, ঢাকার বাইরে ৫ টাকা বাড়ানো হয়েছে। আর খাসি ও বকরির চামড়ার দাম গতবারের মতো রাখা হয়েছে।
এর আগের বছর ঢাকায় প্রতি বর্গফুট গরুর লবণযুক্ত কাঁচা চামড়ার দাম ছিল ৪০ থেকে ৪৫ টাকা এবং ঢাকার বাইরে ছিল ৩৩ থেকে ৩৭ টাকা। খাসির লবণযুক্ত চামড়ার দাম ছিল প্রতি বর্গফুট ১৫ থেকে ১৭ টাকা এবং বকরির চামড়া ছিল ১২ থেকে ১৪ টাকা বর্গফুট।
পশুর চামড়া সঠিকভাবে ছাড়ানোর পদ্ধতি
চামড়া ছাড়ানোর সময় প্রথমেই পশুর সামনের এক পা থেকে বুকের উপর দিয়ে অন্য পা পর্যন্ত লম্বালম্বিভাবে এবং পেছনের এক পা থেকে অন্য পা পর্যন্ত লেজের গোঁড়া থেকে প্রায় ৪-৬ ইঞ্চি উপর দিয়ে লম্বালম্বিভাবে কাটতে হবে। একইসঙ্গে চামড়ার জবাই স্থান থেকে পেটের উপর নিয়ে লেজের গোড়া পর্যন্ত লম্বালম্বিভাবে কাটতে হবে।
পশু জবাইয়ের পর চামড়া আড়াআড়িভাবে কাটার জন্য চালের মধ্যে ছুরি এবং চামড়া ছাড়ানোর জন্য অবশ্যই বানানো মাথার ছুরি ব্যবহার করতে হবে।
কোরবানির পশু জবাইয়ের পর রক্তমাখা ছুরি কোনোভাবেই পশুর চামড়ায় মোছা যাবে না, এতে চামড়ার ক্ষতি হতে পারে।
কাঁচা চামড়ায় বড় ধরনের ত্রুটি (লেস-কাট); যা অসতর্কতা, অজ্ঞতা ও ভুল ছুরি ব্যবহারের মাধ্যমে হয়ে থাকে। উপযুক্ত প্রশিক্ষণ, সতর্কতা ও বাঁকানো মাথার ধারালো ছুরি ব্যবহার করে লেস-কাট হ্রাস করা সম্ভব।
কাঁচা চামড়া সংরক্ষণ পদ্ধতি
চামড়া ছাড়ানোর পর লবণ দিয়ে সংরক্ষণের পূর্বে অবশ্যই চামড়ায় লেগে থাকা চর্বি, মাংস, মাটি এবং গোবর ভালোভাবে পানি দিয়ে ধুয়ে চামড়ায় লবণ প্রয়োগ করতে হবে।
কাঁচা চামড়া ছাড়ানোর পর সংরক্ষণের জন্য (গরুর চামড়ার ক্ষেত্রে ৭-৮ কেজি এবং ছাগল/ভেড়ার চামড়ার ক্ষেত্রে ৩-৪ কেজি) লবণ প্রয়োগ করতে হবে। লবণ এমনভাবে প্রয়োগ করতে হবে যেন চামড়ার ফ্লেশ সাইডের কোনো অংশ ফাঁকা না থাকে, লবণ সমভাবে ছড়িয়ে দিতে হবে।
চামড়া ছাড়ানোর ৪-৫ ঘণ্টার মধ্যে অবশ্যই লবণ লাগাতে হবে এবং সংরক্ষণের জায়গা একটু ঢালু হতে হবে যেন চামড়া থেকে পানি ও রক্ত সহজেই গড়িয়ে যেতে পারে।
লবণ দেওয়া চামড়া এমন জায়গায় রাখতে হবে, যেন রোদ বা বৃষ্টির পানি না লাগে এবং বাতাস চলাচল স্বাভাবিক থাকে।
৭ দিন স্থানীয়ভাবেই চামড়া সংরক্ষণ করতে হবে
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, কাঁচা চামড়া যাতে নষ্ট না হয়, তার জন্য কোরবানির পর সাত দিন স্থানীয়ভাবেই সংরক্ষণ করতে হবে। এই সাত দিন বাইরে থেকে ঢাকায় এবং ঢাকা থেকে বাইরে কোনো চামড়া পরিবহন করতে দেওয়া হবে না। এজন্য সরকারের জননিরাপত্তা বিভাগ, বিজিবি এবং পুলিশের সর্বোচ্চ নজরদারি থাকবে। চামড়ার চোরাচালান ঠেকাতে সীমান্তসহ গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় তদারকি বাড়ানো হবে। এছাড়া সচেতনতামূলক পোস্টার ব্যবহারসহ সরকারি-বেসরকারি টেলিভিশনে প্রচার বাড়ানো হবে।
এইচ এম কাদের,সিএনএন বাংলা২৪: