ই-পেপার | সোমবার , ২৫শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

শেষ সময়ে কোরবানির বাজেট আর মুনাফার কষাকষি

নিজস্ব প্রতিবেদক:

জমে ওঠা কোরবানির পশুর হাটে বাগড়া দিয়েছে বৃষ্টি। তাতে হাটে ক্রেতার উপস্থিতি কম। এরপরও শেষ সময়ে কোরবানির পশু কিনতে হা‌টে যেকজন ক্রেতা আসছেন, বাজেটের মধ্যে পছন্দের পশু কিনতে তাদের এখন বিক্রেতার সঙ্গে দর কষাকষি করতে হচ্ছে। এর মাধ্যমে কোরবানির পশু কিনে বাড়ি ফিরছেন লোকজন।

বুধবার (২৮ জুন) রাজধানীর বিভিন্ন হাট ঘুরে দেখা যায় এমন চিত্র।

দুপুর ১টায় রাজধানীর কমলাপুর পশুর হাটে গিয়ে দেখা যায়, বৃষ্টির কারণে হাটে কোথাও কোথাও পানি জমে আছে। এর সঙ্গে পশুর বর্জ্য ছড়িয়ে গেছে। মাঠের ভেতর জমেছে কাদাপানি। এসব মাড়িয়েই চলছে দর-কষাকষি আর বেচাকেনা।

হাটে কুষ্টিয়ার কুমারখালি থেকে গরু নিয়ে এসেছেন ইকবাল হোসেন। তার সঙ্গে দর-কষাকষি চলছে ক্রেতা আল-আমিনের। গরুর দাম হাঁকা হয়েছিল ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা। পরে তা নামিয়ে ২ লাখ ১০ হাজারে এসেছেন বিক্রেতা। ক্রেতা এক লাখ ৮০ থেকে বাড়িয়ে ২ লাখে উঠেছেন। এখন ১০ হাজার টাকা নিয়ে চলছে দর-কষাকষি। ক্রেতা বলছেন বাজেট ২ লাখ ছিল বলে দিয়েছি। এখন কেনার হাসিল ও অন্যান্য খরচ জোগাতে বাজেট বাড়াতে হবে। তাই আর দাম বাড়াতে পারব না। বিক্রেতা বলছেন, কুষ্টিয়া থেকে গরু এনেছি। তিনদিন ধরে হাটে ঘুম নেই নাওয়া-খাওয়া নেই। এখন যদি কিছু লাভ না হয় কষ্ট বিফল হয়ে যাবে। শেষ পর্যন্ত ক্রেতার বড় ভাই ও বিক্রেতার মামার সমঝোতায় গরু বিক্রি হলো দুই লাখ ৫ হাজার টাকায়।

একই হাটের আরেক ক্রেতা জুয়েল। কোরবানির পশুর জন্য বাজেট ৯৫ হাজার টাকা। কিন্তু এক লাখের নিচে গরু পছন্দ হচ্ছে না তার। পরে বাজেট বাড়িয়ে এক লাখ ৮ হাজার টাকা দিয়ে গরু কিনলেন। জুয়েল জানান, কোরবানির গরু সুন্দর না হলে মনে তৃপ্তি পাওয়া যায় না। এখন পছন্দ হয়েছে তাই ৮ হাজার টাকা বেশি দিয়ে গরু কিনলাম।

দাম প্রসঙ্গে জানতে চাইলে এই ক্রেতা বলেন, দাম বেশি। গতকালও হাটে এসেছিলাম গরু কিনতে, কিন্তু পারিনি। আগামীকাল ঈদ, তাই আজকে বাজেট বাড়িয়ে কিনেছি। এক লাখ ৮ হাজার দিয়ে গরু কিনেছি। অন্যান্য খরচসহ এক লাখ ১৫ খরচ পড়বে। হিসাব করলে তো কেজি হাজার টাকা হয়ে যাচ্ছে। কোরবানির গরু তাই মানুষ হিসাব কম করে। সুন্দর হলে একটু বেশি দাম দিয়েই গরু কিনি।

হাটে গরুর সঙ্গে শেষ সময় ছাগলের বেচাবিক্রিও বেড়েছে। তবে বৃষ্টির কারণে ভোগান্তিতে বেশি পড়েছেন ছাগল বিক্রেতারা। কারণ ছাগল বৃষ্টিতে ভিজলে ঠান্ডা লেগে অসুস্থ হয়ে যাবে। তবে প্রত্যাশা অনুযায়ী দাম পাচ্ছেন না বলে দাবি করছেন বিক্রেতারা। আর উল্টো দাবি ক্রেতাদের। ক্রেতারা বলছেন, গতবারের চেয়ে অনেক বেশি দাম হাঁকাচ্ছেন বিক্রেতারা।

কথা হয় মানিকগঞ্জ থেকে ছাগল নিয়ে আসা হাবিবের সঙ্গে। তিনি জানান, ২৮টা ছাগল নিয়ে এসেছি। ১৭টা বিক্রি করেছি। কেমন বাজার জানতে চাইলে তিনি বলেন, বাজার ভালো না। যেগুলো বিক্রি করেছি তেমন লাভ করতে পারিনি। তারপরও বিক্রি করে দিচ্ছি। কারণ এগুলো তো গাড়ি ভাড়া করে ফেরত নেওয়া যাবে না। কিছু লাভের আশায় তো ব্যবসা করি। মানিকগঞ্জ থেকে ছাগল এনে ঢাকায় বিক্রি করছি চারজন লোক। আমাদের দৈনিক মজুরি ধরলে লাভ হয়নি, উল্টো লস।

তবে উল্টো কথা বলছেন ক্রেতারা। রফিকুল ইসলাম নামে এক ক্রেতা বলেন, গতবারের চেয়ে এবার দাম অনেক বেশি। গত বছর যে সাইজের খাসি ১৪ হাজার টাকা দিয়ে নিয়েছি, এবার কেনা পড়ল ১৭ হাজার টাকা। তাহলে কম কই। বাজারে খাসির মাংস এক হাজার টাকা। কিন্তু এখানে যে দাম তা হিসাব করলে ১২শ টাকা কেজি দাম হয়ে যাচ্ছে।

 

এইচ এম কাদের,সিএনএন বাংলা২৪