ই-পেপার | বৃহস্পতিবার , ২১শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

পেকুয়ায় গভীর রাতে ইউএনও’র অভিযানে পাহাড়ের মাটি ভর্তি ৪টি ডেম্পার জব্দ আটক ৪

দেলওয়ার হোসাইন,পেকুয়া প্রতিনিধি ;

গভীর রাতে পাহাড় কেটে মাটি লুট করার খবর পেয়ে তাৎক্ষণিক এক দু:সাহসিক অভিযান চালিয়ে ৪ টি পাহাড়ি মাটিভর্তি ডেম্পার সহ ৪ লুটেরাকে আটক করেছেন পেকুয়ার ইউএনও মো: সাইফুল ইসলাম।আজ শুক্রবার দিবাগত রাত আড়াইটার দিকে ঘটনাটি ঘটে টইটং ইউনিয়নের হাজী বাজার এলাকায়।

 

প্রত্যক্ষদর্শী সূত্র জানায়, রাত আড়াইটার দিকে পেকুয়ার ইউএনও তার নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত আনসার সদস্যদের নিয়ে একটি সিএনজি যোগে হাজি বাজার এলাকায় এ অভিযান চালান।

 

আনসার সদস্য ফোরকান জানান,গভীর রাতে স্যারের কাছে খবর আসে পাহাড়ের মাটি লুট করা হচ্ছে। কিন্তু দুর্গম পাহাড়ি এলাকা ও লুটেরাদের স্থানে স্থানে ইনফর্মার থাকায় অনেকটা ছদ্মবেশে এ অভিযান চালায়। তাদের চোখ ফাঁকি দিয়ে কিছুদূর সিএনজি ও কিছুদূর পায়ে হেঁটে ঘটনাস্থলে যান। সামনে ভয়ানক এক পরিস্থিতি জেনেও অভিযান চালান তিনি । দেখতে পাই অন্ধকারে মিটমিট আলোতে পাহাড় থেকে মাটি ভর্তি ডেম্পার নেমে আসছে তীব্র গতিতে। সামনে কেউ দাঁড়ালেই ঘটতে পারে উখিয়া বন কর্মকর্তা আসাদুজ্জামান সজলের ভাগ্য। তবুও বুকে সাহস নিয়ে এগিয়ে যান তিনি। যেকোনমূল্যে পাহাড় খেকোদের রুখতে হবে, রক্ষা করতে হবে প্রাকৃতিক সম্পদ।

 

এসময় নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত আনসার সদস্যদের সহযোগিতায় স্যারের সাহসিকতায় ৪টি মাটিভর্তি ডেম্পার সহ ৪ জনকে আটক করতে সক্ষম হয়।”পেকুয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো: সাইফুল ইসলাম এ প্রতিবেদককে দু:সাহসিক এ অভিযানের বর্ণনা দেন।

 

আটককৃতরা হলেন, টইটং সোনাইছড়ি মাঝের পাড়া এলাকার জামাল হোসেনের পুত্র আরশাদুল ইসলাম, টুনু মিয়ার পুত্র আলী হোসেন, বটতলি এলাকার সেনায়েত আলির পুত্র আহমদ হোছেন ও হিরাবনিয়া এলাকার নুরুল আলমের পুত্র আবুল বাশার।

 

আটককৃতরা জানিয়েছেন, টইটং এলাকার এক সাংবাদিক পরিচয়দানকারী পাহাড়খেকো ও প্রভাবশালী আবু ছালেক সহ আরো কয়েকজনের একটি সিন্ডিকেট দীর্ঘদিন ধরে বারবাকিয়া রেঞ্জ কর্মকর্তা হাবিবুল হককে ম্যানেজ করে টইটং হাজি বাজার এলাকায় পাহাড় কেটে উপজেলার বিভিন্ন জায়গায় মাটি বিক্রি করে আসছিল।

 

স্থানীয় সমিরুল ইসলাম, জয়নাল, রশিদ সহ আরো অনেকে জানান, “প্রথমদিকে পাহাড় থেকে মাটি কাটার কাজে স্থানীয়রা বাঁধা দিত। পরে বারবাকিয়া রেন্জ কর্মকর্তার হুমকির মুখে স্থানীয়রা বনমামলার ভয়ে নিশ্চুপ হয়ে যায়।

 

পেকুয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ সাইফুল ইসলাম আজাদীকে বলেন, আমি পেকুয়া যোগদানের পর থেকে মানুষের অসংখ্য অভিযোগ ছিল পাহাড় খেকোরা পাহাড় কেটে মাটি নিয়ে যাচ্ছে, একই সাথে সংরক্ষিত বনাঞ্চলের গাছ কেটে নিয়ে যাচ্ছে তারা । তারই কারনে আমরা গত ১৫ দিন ধরে বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে আসছি, এখানে যেসব অবৈধ করাতকল রয়েছে ইতোমধ্যে ১৮টি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে, আরো কয়েটা আছে সেগুলো বন্ধ করা হবে।

 

পাহাড়ে মাটি কাটা বন্ধ করার জন্য আমরা বিভিন্ন ইনফর্মার লাগিয়েছি, এখন থেকে পেকুয়ার কোথাও পাহাড় কাটার খবর আসলেই রাত হউক দিন হউক খবর পেলেই আমরা অভিযানে যাচ্ছি।

 

তিনি বলেন, বর্তমানে আমার প্লান আমি যতদিন দায়িত্বে আছি ততদিন কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। অপরাধীদের জন্য জিরো টলারেন্স ঘোষণা করেছি আমরা। বন খেকোরা যারাই হোক, যে পেশায় নিয়োজিত থাকুক কাউকে ছাড় দিব না।

 

তিনি বলেন,স্পটে আমার গেলে শুধুমাত্র পাহাড় কাটার শ্রমিক, ট্রাক ড্রাইভার ও হেল্পারদের পাওয়া যায়, মূলহোতা যারা তারা কিন্তু বাসা বা অফিসে বসেই সব নিয়ন্ত্রণ করছে। আটকৃতরা যাদের কথা বলছে তাদের সবার বিরুদ্ধেই পরিবেশ আইনে মামলা দায়ের করা হবে।