নিজস্ব প্রতিবেদক:
ঢাকা: রাজধানীর বেইলি রোডের গ্রিন কোজি কটেজ ভবনে অগ্নিকাণ্ডের পর সারা দেশে রেস্তোরাঁয় অভিযানের নামে চাঁদাবাজি চলছে বলে অভিযোগ করেছে বাংলাদেশ রেস্তোরাঁ মালিক সমিতি। এ সমস্যা সমাধানে একটি উচ্চপর্যায়ের টাস্কফোর্স গঠনের আহ্বান জানিয়েছে রেস্তোরাঁ মালিকদের এ সংগঠন।
পাশাপাশি দেশের রেস্টুরেন্ট খাতে বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান রক্ষায় সরকারি সংস্থাগুলোর সমন্বয় ও সহযোগিতা কামনা করে পবিত্র রমজান মাসে রেস্টুরেন্ট সিলগালা করা বন্ধের আহ্বান জানিয়েছেন সংগঠনটির নেতারা। তা না হলে আগামী বুধবার (২০ মার্চ) জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন ও প্রধানমন্ত্রীর কাছে স্মারকলিপি পেশ কর্মসূচি পালন করা হবে বলে জানিয়েছেন সংগঠনের মহাসচিব ইমরান হাসান।
তারপরও সমস্যার সমাধান না হলে একদিনের জন্য সারা দেশে রেস্তোরাঁ বন্ধের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তিনি। তাতেও সমস্যার সমাধান না হলে পরে পর্যায়ক্রমে অনির্দিষ্টকালের জন্য সব রেস্তোরাঁ বন্ধ করে দেওয়ার কথাও জানান তিনি।
সোমবার (১৮ মার্চ) সাম্প্রতিক সময়ে বেইলি রোডের অগ্নিকাণ্ডের দুর্ঘটনায় যে সংকট সৃষ্টি হয়েছে তার পরিপ্রেক্ষিতে সরকারি বিভিন্ন সংস্থা কর্তৃক অভিযানের নামে রেস্তোরাঁ সেক্টরে নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি সৃষ্টির প্রতিবাদে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ইমরান হাসান এ হুঁশিয়ারি দেন।
ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) নসরুল হামিদ মিলনায়তনে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে বাংলাদেশ রেস্তোরাঁ মালিক সমিতি।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে ইমরান হাসান বলেন, গত ২৯ ফেব্রুয়ারি বেইলি রোডে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাটি এখনও তদন্তাধীন। তাই এখনও অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার সুনির্দিষ্ট কোনো কারণ জানা যায়নি। কিন্তু ঢালাওভাবে রেস্তোরাঁ সেক্টরটিকে প্রশ্নবিদ্ধ করা হচ্ছে। সিলিন্ডারের কারণে শ্রমিক-কর্মচারীদের গ্রেপ্তার কারা হয়েছে। ঢালাওভাবে রেস্তোরাঁ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। অনেক কাগজ-ডকুমেন্টস থাকা সত্ত্বেও রাজউক তার অনধিকার চর্চা করছে। স্বাধীন দেশে এটা কোনোভাবে কাম্য নয়। সরকারি বিধি অনুযায়ী কোনো বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানকে বন্ধ করতে হলে কমপক্ষে ছয় মাস আগে নোটিশ দিতে হয়। সময় বেঁধে দিতে হয়। কিন্তু বিনা নোটিশে ভাঙচুর করে রেস্তোরাঁ বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে। ফলে রেস্তোরাঁ সেক্টরটি বর্তমানে ভয়াবহ হুমকির সম্মুখীন।
তিনি আরও বলেন, এখন সময় এসেছে রেস্তোরাঁসমূহে হয়রানি বন্ধ করে বন্ধকৃত রেস্তোরাঁ খুলে দেওয়ার। কেননা রেস্তোরাঁ শিল্পসমূহে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আসন্ন পবিত্র ঈদুল ফিতরের আগে চলমান মাসের বেতন-ভাতাদি ও বোনাস দিতে হবে। রেস্তোরাঁ যদি বন্ধ থাকে তাহলে রেস্তোরাঁর মালিক কীভাবে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতাদি ও বোনাস দেবে। আইনি নোটিশ, গ্রেপ্তার ও প্রতিষ্ঠান বন্ধের মাধ্যমে রেস্তোরাঁ সেক্টরে যে অবিচার/জুলুম চলছে তা অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে। উদ্বুদ্ধ পরিস্থিতিতে সংকট উত্তরণের কোনো নির্দেশনা না দিয়ে গ্রেপ্তার ও রেস্তোরাঁ বন্ধের মাধ্যমে কোনো সুফল বয়ে আসবে না। ফায়ার সেফটি ও নিরাপদ খাদ্যের বিষয়ে এসওপি দেওয়া যেতে পারে।
অগ্নিকাণ্ডের জন্য যে সংকট সৃষ্টি হয়েছে সেটি উত্তরণে রাস্তা বের করা যেতে পারে জানিয়ে ইমরান হাসান বলেন, মাথা ব্যথা হয়েছে বলে মাথা কাটা যাবে না। ঝুঁকিপূর্ণ ও অতি ঝুঁকিপূর্ণ ভবনগুলো চিহ্নিত করা যেতে পারে। বিশেষজ্ঞদের নিয়ে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন টাস্কফোর্স গঠন করা যেতে পারে। টাস্কফোর্সের মাধ্যমে অগ্নিকাণ্ডের কারণগুলো চিহ্নিত করতে হবে। সে অনুযায়ী টাস্কফোর্স নির্দিষ্ট একটি এসওপি তৈরি করবে। দেশের সব রেস্টুরেন্ট সেবাকে একটি সংস্থার অধীনে এনে লাইসেন্স দেওয়া যেতে পারে।
তিনি বলেন, আমরা একই ব্যবসার জন্য একাধিক সংস্থার কাছে যেতে চাই না, এতে আমাদের খরচ ও হয়রানি দুটিই বাড়ে। সরকারি সংস্থাগুলো ও বাংলাদেশ রেস্তোরাঁ মালিক সমিতি এসওপি বাস্তবায়নে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে পারে। পবিত্রতা ও সংযমের এ মাসে সবাইকে সংযমের পথে চলতে হবে। একটি দুর্ঘটনা ঘটেছে, সেই ধরনের ঘটনা যেন অন্য কোথাও না ঘটে তার জন্য সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। সরকারি সব সংস্থার নিজ নিজ দায়িত্ব পালনে অবহেলার জন্য ব্যবসায়ীরা দায়ী নয়।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন- বাংলাদেশ রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির সভাপতি ওসমান গণি, সহ-সভাপতি শাহ সুলতান খোকন, যুগ্ম মহাসচিব মো. ফিরোজ আলম সুমন, কোষাধ্যক্ষ মিজানুর রহমান, সাংগঠনিক সম্পাদক তৌফিকুল ইসলাম প্রমুখ।