নিজস্ব প্রতিবেদক:
নারায়ণগঞ্জ: নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামী লীগ সভাপতি আনোয়ার হোসেনকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেছেন নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের মেয়র ও জেলা আওয়ামী লীগ নেত্রী ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী।
শুক্রবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায় নারায়ণগঞ্জের দেওভোগে ১৬ নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে পদবঞ্চিত নেতাকর্মীদের এক বৈঠকে এ ঘোষণা দেন আইভী।
এসময় নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী বলেছেন, আপনারা মনের দুঃখ মনের মধ্যে রেখেছেন কেন এত? আপনাদের তো আমাকে আগে ডাকা উচিত ছিল। আমি রাজনীতি করি আমাকে অনেক কাজ করতে হয়। এই ওয়ার্ডের নতুন কমিটির এপন ও চঞ্চলের বিরুদ্ধে কিছু বলবো না, ওরা ছোট ভাই অবশ্যই ওরা নেতা হওয়ার যোগ্যতা রাখে। কিন্তু এই আওয়ামী লীগের এটা কী লজ্জাজনক ঘটনা! এই আনোয়ার কাকা (মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি) তার প্রতিহিংসাপরায়ণ মনোভাব নিয়ে মনোয়ার সজলকে ঘায়েল করার জন্য, দেওভোগ আওয়ামী লীগকে বোঝানোর জন্য যে আমি যাকে চাই সেই হতে পারে। এই কারণে তিনি এই দুটি নাম ঘোষণা করে আমাদের সবাইকে অসম্মানিত করেছেন। যারা এই দেওভোগকে এইভাবে নেতৃত্ব দিয়ে আসছেন আমাদের সেই পূর্বপুরুষকে অসম্মানিত করেছেন তিনি। উনাকে (আনোয়ার) আমি আজকে এখানে দাঁড়িয়ে দেওভোগের মানুষ হিসেবে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করলাম।
তিনি বলেন, এই কমিটি মানব না, যদি আনোয়ার মিয়া আর খোকন সাহার কমিটি ২০০৩ থেকে আজকে পর্যন্ত চলতে পারে তাহলে এখানেও বর্তমান যে কমিটি আছে সেটাই চলবে। যে কয়জন মারা গেছেন আপনারা বৈঠক করে ঠিক করে নেবেন, দায় দায়িত্ব আমি বুঝব। যারা হয়েছেন, ওই দুজনের প্রতি সম্মান রেখে বলতে চাই এই আওয়ামী লীগ অফিসে এসে কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা করলে……। অফিসে আসবে বসবে কিন্তু কোনো ধরনের বেয়াদবি চলবে না। যদি কমিটি নিয়ে কোনো বিশৃঙ্খলার চেষ্টা করা হয় সেটাও হতে দেব না।
মেয়র বলেন, যদি আমাদের রফিক ভাই কোনো কারণে দায়িত্ব পালনে অপারগতা প্রকাশ করেন তাহলে বর্তমান যে যুগ্ম সম্পাদক উনি দায়িত্ব পালন করবেন। আমি অবশ্যই আমাদের কেন্দ্রের সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম ভাইয়ের সঙ্গে কথা বলব। আপনারা যেভাবে বললাম সেভাবে করবেন। এটা পাল্টা কমিটি ঘোষণা করা হলো। মানে যা ছিল তাই থাকবে।
তিনি বলেন, ২৭ টা ওয়ার্ডের মধ্যে ১৭ টা ওয়ার্ড ঘোষণা করা হয়েছে। অনেক স্থানেই অসন্তোষ আছে। সিদ্ধিরগঞ্জের ৯ টা ওয়ার্ড কেন করে নাই? আমার আনোয়ার কাকা আর শ্রদ্ধেয় খোকন সাহার কাছে প্রশ্ন ২৭টা ওয়ার্ডই আমার নির্বাচনী এলাকা। কোন সাহসে কোন অধিকারে আমাকে না জিজ্ঞেস করে আপনারা এই ১৭টা ওয়ার্ডের কমিটি দিলেন। আমি এই ১৭টা ওয়ার্ডের পাল্টা কমিটি দেব। যদি ওই ১৭টা ওয়ার্ডের লোকজন যোগাযোগ করে আমি অবশ্যই তাদের পাশে দাঁড়াব।
আইভী অভিযোগ করেন, নারায়ণগঞ্জে আওয়ামী লীগের দাফন রচনা করার চেষ্টা করা হচ্ছে। সুপরিকল্পিতভাবে আনোয়ার সাহেব ও খোকন সাহা তাদের নিজেদের পকেটের লোক দিয়ে আওয়ামী লীগকে সুপরিকল্পিতভাবে ধ্বংস করছেন। উনি (আনোয়ার) কারো সঙ্গে মেশেন না, কারো সঙ্গে কথা বলেন না। দল কীভাবে গোছাতে হয় উনি জানেন না। না গুছিয়ে উনিও যাকে যাকে দিয়েছেন এরাও পকেট লোক।
তিনি আরও বলেন, এটা কি ছেলে খেলা! দল কি আনোয়ার সাহেব আর খোকন সাহার বাবার সম্পত্তি? আওয়ামী লীগ বঙ্গবন্ধুর দল, শেখ হাসিনার দল। আমাদের কর্মীবান্ধব দলের আমি শেখ হাসিনার একজন ক্ষুদ্র কর্মী। আমি বাংলাদেশে আসছি ২০০৩ সালে। ২০০৩ থেকে ২০২৪ পর্যন্ত দলের কোনো বিষয় নিয়ে কথা বলিনি, আজ বাধ্য হয়েছি। এখন থেকে শুরু করলাম, দলের ভেতর কোনো অনিয়ম চলবে না। ২৭টা ওয়ার্ডই আমার নির্বাচনী এলাকা, আমার মতামত নিয়ে যদি না করে তাহলে আমি পাল্টা কমিটি দেব।
এদিকে বৈঠকের পরেই ১৬ নম্বর ওয়ার্ডের সাধারণ সম্পাদক পদপ্রার্থী সাব্বির আহমেদ সাগরের নেতৃত্বে পদবঞ্চিত নেতাকর্মীরা সন্ধ্যা ৭টার দিকে মহানগর আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে এসে তালা লাগিয়ে দেন।
এ সময় তারা ঘোষিত ওয়ার্ড কমিটি ভুয়া ও সেখানে যোগ্যদের বঞ্চিত করা হয়েছে বলে দাবি করেন। পরে নেতাকর্মীরা মহানগর আওয়ামী লীগ সভাপতি আনোয়ার হোসেনের বিরুদ্ধে স্লোগান দেন এবং তাকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেন।
গত ১২ ফেব্রুয়ারি রাতে মহানগর আওয়ামী লীগের ১৭টি ওয়ার্ডের কমিটি ঘোষণা করা হয়। মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক খোকন সাহা মহানগর আওয়ামী লীগের ১১ থেকে ২৭ নম্বর ওয়ার্ডের কমিটি ঘোষণা করেন।