বিশেষ প্রতিবেদক :
জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবেলায় দ্রুত পর্যাপ্ত জলবায়ু অর্থায়ন নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছেন কক্সবাজারের পরিবেশ আন্দোলনের নেতা, শিক্ষাবিদ ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা।
তাঁরা বলেছেন, জলবায়ু ও জ্বালানি সংকট মোকাবেলায় গ্যাস ও এলএনজি ব্যবহার বাড়ানো কোনো সমাধান নয়, বরং সবুজায়ন-নবায়নযোগ্য জ্বালানিই ভবিষ্যৎ। তাই গ্যাস ও এলএনজিতে অর্থায়ন বন্ধ করতে হবে। কয়লাসহ জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহার বন্ধের পাশাপাশি নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহার বাড়াতে হবে।
শনিবার (১০ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে চীনের জাতীয় দিবস উপলক্ষে কক্সবাজার শহরতলির খুরুশকুলে বায়ু বিদ্যুৎ প্রকল্প এলাকায় এক সমাবেশে এ আহ্বান জানানো হয়।
পরিবেশ ও জলবায়ু বিষয়ক সংগঠন ধরিত্রী রক্ষায় আমরা-ধরা, ওয়াটারকিপার্স বাংলাদেশ ও ব্লু প্লানেট ইনিশিয়েটিভ কক্সবাজার জেলা শাখা আয়োজিত কর্মসূচির উদ্বোধন করেন- সংগঠনটির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও কক্সবাজার জেলা আহবায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা ফজলুল কাদের চৌধুরী। শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন- চীনের উইলিং পাওয়ার কর্পোরেশন লিমিটেডের বাংলাদেশ শাখার ভাইস জেনারেল ম্যানেজার মি. ঝু ইয়ংহং।
সমাবেশে বক্তব্য দেন- কক্সবাজার জেলা প্রেসক্লাবের সাংগঠনিক সম্পাদক ও সিএনএন বাংলা২৪ সম্পাদক তৌহিদ বেলাল, পরিবেশকর্মী কবি এম জসিমউদ্দিন, বাংলাদেশ নদী পরিব্রাজক দলের কক্সবাজার জেলা শাখার সেক্রেটারি মুহাম্মদ ইলিয়াস মিয়া, উন্নয়ন সংস্থা কোস্ট ফাউন্ডেশনের মো: আরিফ উল্লাহ, জুলফিকার হোসেন ও আহমেদ উল্লাহ, কক্সবাজার সদর উপজেলা প্রেসক্লাবের সভাপতি আরিফুল্লাহ নূরী, কক্সবাজার জেলা প্রেসক্লাবের যুগ্ম সম্পাদক আমিনউল্লাহ আমিন, ধরা’র কক্সবাজার সদর উপজেলার আহবায়ক মুহাম্মদ হাসান, গ্রিন কক্সবাজারের সচিব ফয়সাল সাকিব, নারী সাংবাদিক ও উদ্যোক্তা ইয়াছমিন মুন্নী, ধরা-র রামু উপজেলা শাখার নুর মোহাম্মদ, কক্সবাজার পৌর শাখার মুহাম্মদ আবদুল্লাহ, সদর উপজেলা শাখার নজরুল ইসলাম, একেএম রিদুয়ানুল করিম, কামরুল ইসলাম সোহেল, শাহ আলম, মুহাম্মদ আকবর প্রমুখ। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন- বাংলাদেশ নদী পরিব্রাজক দলের কক্সবাজার জেলা সভাপতি শামসুল আলম শ্রাবণ।
সমাবেশে বক্তারা বলেন, আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থা ও জলবায়ু পরিবর্তনে ক্ষতিগ্রস্থদের দাবির প্রেক্ষিতে ২০২৩ সালের কপ-২৭ সম্মেলনে ৮০টিরও বেশি দেশের প্রতিনিধিরা পর্যায়ক্রমে কয়লানির্ভর জ্বালানি ব্যবস্থা হতে বেরিয়ে আসবে, এই সিদ্ধান্ত হয়। এর আগে জাতিসংঘসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা জলবায়ু পরিবর্তন রোধে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিতে চাইলেও অর্থনৈতিক ও ব্যবসায়িক স্বার্থরক্ষায় বহু দেশের বিরোধীতায় সেসকল উদ্যোগ বাস্তবায়ন হয়নি। বিশেষ করে ধনী দেশগুলোর বিরোধীতার ফলে ওই সকল পরিকল্পনা ব্যর্থ হয়েছে। বরং বিভিন্ন বৈশ্বিক ফোরাম ও সম্মেলনে জলবায়ু কূটনীতিতেও নিজেদের আধিপত্য বিস্তার করাই বিশ্বের অর্থনৈতিক ও সামরিক শক্তিসম্পন্ন দেশগুলো প্রধান লক্ষ্যে পরিণত হয়েছে। এর বিরুদ্ধে সারাবিশ্বের বিবেকমান মানুষকে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে।
ফজলুল কাদের চৌধুরী বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ভয়াবহ দুর্যোগের ঝুঁকিতে রয়েছে কক্সবাজারসহ সমগ্র উপকূলীয় উপকূলীয় অঞ্চল। এই অঞ্চলের জীবন-জীবিকা, সম্পদ, খাদ্য, পানি, বাসস্থানসহ অন্যান্য ক্ষেত্রে নানামূখি সংকট দেখা দিচ্ছে। অথচ সংকট মোকাবেলায় কার্যকর উদ্যোগ নেই। বরং জাতীয় বাজেটে বরাদ্দের ক্ষেত্রে উপকূলের জনগণ সবসময় বৈষম্যের শিকার। বরাদ্দের অভাবে সেখানে টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণ ও সুপেয় পানি সরবরাহে সরকারের নেওয়া প্রকল্পগুলো আটকে আছে। এই অবস্থায় এই অঞ্চলের প্রাণ-প্রকৃতি রক্ষা ও দুর্যোগের ঝুঁকি মোকাবেলায় জাতীয় বাজেটে বিশেষ বরাদ্দ দিতে হবে।
কর্মসূচিতে কক্সবাজারের বিভিন্ন পরিবেশকর্মী, সাংবাদিক, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি, শিক্ষক ও এনজিওকর্মীরা অংশ নেন।